E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

ছাগলকাণ্ড

মতিউর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জমি-ফ্ল্যাট জব্দের নির্দেশ

২০২৪ জুলাই ০৪ ১৭:৫৩:২৮
মতিউর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের জমি-ফ্ল্যাট জব্দের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার : ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ৮৬৬ শতক জমি ও ৪টি ফ্ল্যাট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।

দুদকের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের প্রধান মো. আনোয়ার হোসেন আবেদনে উল্লেখ করেন, নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মো. মতিউর রহমান দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি হুন্ডি এবং আন্ডারইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার করেছেন। তার বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে।

আবেদনে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যাচ্ছে যে মো. মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের মালিকানাধীন স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন, যাতে তারা সফল হলে এই অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মামলা রুজু, আদালতে চার্জশিট দাখিল, আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় হতে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ সব উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। তাই এই অনুসন্ধান শেষে মামলা রুজু ও মামলা তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে চার্জশিট দাখিলের পর আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সরকারের অনুকূলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের সুবিধার্থে সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা একান্ত প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের বিরুদ্ধে এর আগে চারবার দুর্নীতির অভিযোগ পায় দুদক। কিন্তু প্রতিবারই বিভিন্ন কৌশল আর প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির দায় এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন তিনি।

মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম দুদকে অভিযোগ আসে ২০০৪ সালে। সে সময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের। অভিযোগ আছে, হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা টাকা মতিউর তার প্রবাসী কোনো এক আত্মীয়র মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে তা রেমিট্যান্স বাবদ দেখিয়ে দিয়েছিলেন ট্যাক্স ফাইলে।

এরপর ২০০৮ সালে আবারও দুদকে অভিযোগ জমা পড়ে তার বিরুদ্ধে। এবার অভিযোগ বিলাসবহুল পণ্যের শুল্ক মাফ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন। কিন্তু তদন্ত শুরু হতে না হতেই প্রভাবশালীদের চাপে তা ধামাচাপা পড়ে যায়, আবারও বেঁচে যান মতিউর। ২০১৩ ও ২০২১ সালে আরও দুবার দুদকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু সেবারও কৌশলী মতিউর অবৈধ সম্পদকে পারিবারিক ব্যবসা ও ঋণ দেখিয়ে প্রস্তুত করেন ট্যাক্স ফাইল।

সবশেষ এবারের কোরবানি ঈদ উপলক্ষে সাদিক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকার এক ছাগল কিনে আলোচনায় চলে আসে তার ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। সঙ্গে আবারও সামনে এসে পড়ে মতিউরের নাম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মূল ধারার মিডিয়ার কল্যাণে এবার বেশ ভালোভাবে ফেঁসে যান এনবিআরের আলোচিত এ কর্মকর্তা। চাকরি হারানোর পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে পঞ্চমবারের মতো তদন্তে নেমে আগের চারবারের প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে পর্যালোচনার আশ্বাস দিয়েছে দুদকও। শুধু তাই নয়, যে বা যাদের মাধ্যমে বারবার দায়মুক্তি পেয়েছে মতিউর, তা-ও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

গত ৩০ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ক্রয়কৃত কোনো জমি আছে কিনা, সেটি জানতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি দেয় দুদক। ২ জুলাই মতিউর রহমান, তার দুই স্ত্রী এবং সন্তানদের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের হিসাব বিবরণীর জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। ২১ কর্মদিবসের মধ্যে এ হিসাব তাদের দিতে বলা হয়েছে।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০৪, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test