E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

‘দুর্নীতি দমনে বড় দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে নজির দেখাতে হবে’

২০২৪ জুলাই ০২ ১৮:০৫:১৯
‘দুর্নীতি দমনে বড় দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে নজির দেখাতে হবে’

স্টাফ রিপোর্টার : দেশে আইনের শাসনের ঘাটতি আছেই বলে দুর্নীতিবাজদের কিছু হয় না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেছেন, দেশে দুর্নীতি দমন করতে চাইলে বড় দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত দেখাতে হবে।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন: চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা’ বিষয়ক একটি সেমিনারে মূল বক্তার বক্তব্যে খলীকুজ্জমান আহমদ এ কথা বলেন।

সেমিনারটির আয়োজন করে ইমপাওয়ারমেন্ট থ্রো ল অব দি কমন পিপল (ইলকপ)।

তিনি বলেন, আমাদের নীতির কোনো সমস্যা নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইন করা হয় যে এদের কিছু বলা যাবে না। যদি কিছু বলা হয় তাহলে দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। আমি এখানে বলতে চাই, কোনো ব্যক্তি কি রাষ্ট্রের চেয়ে বড় কিছু? বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমত কাজ করে না বলেই দুর্নীতি কমানো সম্ভব হয় না। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুষ্টচক্রই কাজ করতে দেয় না।

এখনই না না ঠেকালে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা অনেক কষ্টকর হয়ে উঠবে মন্তব্য করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নৈতিকতা-বহির্ভূত সব কাজই দুর্নীতি। ক্ষমতার অপব্যবহার করলে সেটাকে দুর্নীতি বলা যায়। কাজেই দুর্নীতি রাজনীতিতে থাকতে পারে, প্রশাসনে থাকতে পারে, প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারে। অর্থাৎ সর্বত্রই থাকতে পারে দুর্নীতি।

খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয় আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে—ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বাজেটের ক্ষেত্রে কাজের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি পূরণ না হলেও বাজেটের টাকা সবটুকুই খরচ হয়ে যায়। এর ফলে বাজেট বাস্তবায়নেও অনেক দুর্নীতি করা হয়। আরেক ধরনের দুর্নীতি হয় আত্মীয়তার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ কোনো কর্মকর্তার আত্মীয়কে কাজ পাইয়ে দেওয়া বা তার লাভের দিকে খেয়াল রাখাও দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে।

তিনি বলেন, দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করার কাজ যারা করবে তাদের অবশ্যই নৈতিকতা ঠিক থাকতে হবে। আর এই নৈতিকতা ঠিক না থাকাও এক ধরনের দুর্নীতি। বাংলাদেশে এই নৈতিকতাপূর্ণ লোক পাওয়া খুবই কষ্টকর। পাশাপাশি বাংলাদেশে দুষ্টচক্র বা সিন্ডিকেট বাজার থেকে শুরু করে ব্যাংকসহ সব প্রতিষ্ঠানে আছে। এই দুষ্টচক্র কিন্তু একা কাজ করে না, তারা যোগসাজশে কাজ করে। বাংলাদেশকে যদি দুর্নীতি মুক্ত করতে হয় তাহলে এই দুষ্টচক্রকে বিতাড়িত করতে হবে।

এই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ বলেন, দেশ থেকে দুর্নীতি কমাতে হলে তিনটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, বড় বড় দুর্নীতিবাজদের শাস্তির বিধান করে উদাহরণ তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত দুষ্টচক্র বা সিন্ডিকেটকে দূর করতে হবে। তৃতীয়ত, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালো করে কাজ করতে হবে।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান আইনি উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাসুদ আখতার অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিষয় তুলে ধরে বলেন, আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের ভালো গল্পগুলো সবাই জানি। কিন্তু এর পেছনের দুঃখের বা কষ্টের গল্পগুলো অনেকেই জানি না। গ্রামীণ ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি এখন সামনে এগোতে পারছে না। ড. ইউনূস যদি গ্রামীণ ব্যাংককে নিজের স্বার্থে ব্যবহার না করে, তার মেধা দিয়ে এই ব্যাংককে দেশের মানুষের জন্য ব্যবহার করতেন, তাহলে এদেশের দারিদ্র্য অনেকটাই বিমোচন করা যেতো।

সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ মেগা দুর্নীতির একটি দেশ। দুর্নীতি কোনো প্রতিষ্ঠান করে না, করা হয় ব্যাক্তি পর্যায় থেকে। যারা আমাদের সমাজে দুর্নীতি করে তাদের আমাদের বয়কট করা উচিত। এসব দুর্নীতিবাজদের কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা যাবে না।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test