E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন 

শীঘ্রই রাজধানী ঢাকার সাথে যুক্ত হচ্ছে উত্তরবঙ্গের ২২ জেলা

২০২৪ জুন ২৭ ১৮:৩৯:৫০
শীঘ্রই রাজধানী ঢাকার সাথে যুক্ত হচ্ছে উত্তরবঙ্গের ২২ জেলা

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : প্রমত্তা যমুনার উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর মূল স্ট্রাকচারের কাজ শেষ। এ সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে (TAR) নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে আর তেমন বড় কোন বাঁধা রইল না।

ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে (TAR) নেটওয়ার্ক হচ্ছে- ইউরোপ এবং এশিয়া জুড়ে একটি সমন্বিত মালবাহী রেলওয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করার একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (UNESCAP) এর।

ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে। বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

এই নেটওয়ার্ক চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ভারত হয়ে তুরস্ক পর্যন্ত বিস্তৃত। পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলো- ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, কোরিয়াও এ নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। যথাসময়ে উদ্বোধনের আশা রেল কর্তৃপক্ষের।

এদিকে উদ্বোধনের প্রহর গুনছে রেলসেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা। এ নিয়ে যমুনা নদীর উভয় পাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বইছে উচ্ছ্বাস-আনন্দ। এতে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে বলে মনে করছেন রেল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা যায়, দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে যমুনা নদীর উপর দেশের অন্যতম বৃহৎ মেগা প্রকল্প ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’। দেশি-বিদেশি সহস্রাধিক প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর দিন-রাত পরিশ্রমে এগিয়ে চলেছে এই বৃহৎ নির্মাণ যজ্ঞ। সবমিলিয়ে প্রকল্প কাজের প্রায় ৮৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এই রেলসেতু চালু হলে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের ২২টি জেলার সঙ্গে ট্রেন চলাচল সহজ করবে। একই সঙ্গে আন্ত এশিয়া রেল যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ করিডর হিসেবে কাজ করবে।

রেলসেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলসেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। এ মেগা প্রকল্পের মোট বরাদ্দ প্রায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুর কাজ শেষ হলে এর ওপর দিয়ে ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে। ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলবে।

রেলসেতুর পূর্ব পাশের স্থানীয় বাসিন্দা আঃ বারেক, জয়নাল ও সবুজ তালুকদার বলেন, রেলসেতুর মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান বাড়বে পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যও দ্রুত প্রসার ঘটবে। এক সময় এই যমুনা পাড়ের মানুষ কষ্টে দিন যাপন করছে। আজ বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ায় এই এলাকার মানুষের সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। দ্রুতগতিতে রেলসেতুর কাজটি হয়ে গেলে এই এলাকার মানুষের সচ্ছলতার আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এদিকে আমাদের এলাকার জমির দামও বেড়ে যাবে। তাই শুনতে পারছি, প্রধানমন্ত্রী চলতি বছরে অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বরে না কি উদ্বোধন করবেন। যথাসময়ে উদ্বোধন হলে আমরা গর্বিত এবং আনন্দিত।

রেলসেতুতে কাজের শ্রমিক আরিফ ও রাশেদুলসহ বেশ কয়েকজন বলেন, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে কাজ করে তারা আনন্দ পাচ্ছেন। এত বড় কাজের শ্রমিক হয়ে তারা কাজ করছেন-এটা আল্লাহর অপার রহমত। রেলসেতুতে তাদের মতো আরও বহু শ্রমিক কাজ করছেন। তারা আনন্দ পান- কারণ দেশের এত বড় একটা রেলসেতুর অংশীদার। তাদের পরিবারও গর্ব করে বলতে পারছেন- বৃহত্তর রেলসেতু নির্মাণে তারা কাজ করছেন। দেশের জন্য কাজ করছেন- এজন্য অনেক ভালো লাগে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রধান প্রকৌশলী মো. তানভীরুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর উপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। আগামী ডিসেম্বরে নির্ধারিত সময়ে বৃহৎ এ সেতু উদ্বোধনের আশা করছেন।

এ ছাড়া দু’পাশের রেললাইনের কাজও শেষের দিকে। সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম স্টেশনের কাজও শেষের পথে। এখন আধুনিকায়নের কাজ শেষ করতে দিনরাত পরিশ্রম করছে। ফলে আ লিক ও উপ-আ লিক রেলওয়ে রুট এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথ নেটওয়ার্ক এখন আর স্বপ্ন নয়-হাতের মুঠোয় চলে আসছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। ইতিমধ্যে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আনা মরিচারোধী স্টিলের স্প্যান সেতুর ওপর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এতে সেতুর ওপর রেললাইনের স্থায়িত্ব বাড়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম।

তিনি আরও জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার এই রেলসেতুর দুইপাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেণ্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে।

(এসএম/এসপি/জুন ২৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test