হাড় ভাঙ্গা শ্রমের মূল্য পাচ্ছে না কৃষক
আহম্মদ ফিরোজ, ফরিদপুর : পানিতে নেমে পাট কাটতে যেয়ে দু’পায়েই পাটের গুজা (কাটা পাট গাছের গোড়া) ঢুকে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়ে মুন্সি মজিবুর রহমানের। শরীওে জ¦রও রয়েছে। এই অসুস্থ্য শরীর নিয়েই তাকে কাজে যেতে হবে। পানিতে ডুবে থাকা জমি থেকে পাট কেটে এনে তুলতে হবে সড়কে। দেশের প্রধান এই অর্থকরী ফসল উৎপাদনে মজিবুর রহমান মুন্সির মতো লাখ কৃষকের হাড় ভাঙ্গ শ্রম জড়িয়ে আছে। আছে শিশু থেকে বৃদ্ধদেও অবদান। এতো পরিশ্রমের পর নানা ঝক্কি মোকাবেলা করে সোনালী আশ বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে যেয়ে অবশ্য নিদারুণ হতাশ হতে হচ্ছে তাদের। কারণ পাট উৎপাদনের স্বর্গভূমি ফরিদপুরের বাজারে পাটের কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম আর উচ্চ মূল্যে শ্রমিক খাটিয়ে বাজারে যে মূল্য পাচ্ছেন তাতে অনেকের খরচের টাকাই উঠছে না। এতে পাটচাষীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পাট আবাদে তারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বেন বলে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তারা প্রতি মন পাটের দাম নিদেনপক্ষে ২ হাজার টাকা করার জোর দাবি জানান।
দেশের মধ্যে পাট চাষে ফরিদপুর জেলা বিখ্যাত। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি পাট চাষে উপযোগী হওয়ায় ফলনও ভাল হয়। এবছর পাট মৌসুমের শুরুর দিকে বৃষ্টিতে কিছু পাটের চারা রোপন করার পর সমস্যা হওয়ায় অনেকে পরের দফায় আবারো চাষ দিয়ে পাট রোপন করে। এরপর পাটের ফলন মোটামুটি হলেও শুরুর দিকে বৃষ্টি না হওয়ায় জাগ দিতে বেশ কষ্ট পোহাতে হয়। সর্বশেষ বৃষ্টিতে নিচু ভূমি তলিয়ে যাওয়ায় জাগ দেয়ার সমস্যা কমেছে। তবে এতে বেড়েছে পাট কাটার ঝুঁকি।
এনামুল শেখ নামে ২৮ বছরের এক তরুন পাট চাষী বলেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় এবার পাটের ফলন তেমন হয় নাই। এছাড়া উচ্চ মূল্যে বীজ কেনা থেকে শুরু করে পাট শুকিয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত ধাপে ধাপে যে খরচ হয় তাতে পাট বিক্রি করে পোষাচ্ছে না। লিটন জানায়, ৩ শতাংশের এক কানি জমিতে বীজ লাগে ২৫ গ্রাম। যার দাম ১শ’ টাকা। এরপর সার ৬০ টাকা ও জমি চাষ দিতে খরচ হয় ৮০ টাকা। চারা বড় হলে জমিতে টেঙ্গি (ছোট কোদাল) দিতে লাগে এক কৃষাণের ২শ’ টাকা খরচ। পাট গাছ বড় হলে ছোট পাট বাছার জন্য লাগে ৩শ’ টাকার কৃষাণ খরচ।
লিটন ও অন্যান্যদের দেয়া তথ্য মতে, ১ কানি জমিতে পাট হয় ৬৫ থেকে ৭০ মোঠা। তাতে পাট আসে ৩০ কেজির মতো। এই ৬৫ মোঠা অর্থাৎ ৩০ কেজি পাট কাটতে লাগে একজন কৃষক। যার মুজুরি বর্তমান বাজারে ৪৫০ টাকা। এই মজুর পাট কেটে রাস্তায় তুরে দেয়। সেখান থেকে জাগ দিতে ও পচাতে লাগে আরো এক শ্রমিক যার মুজুরি দিতে হয় ৩শ’ টাকা। এরপর পাট শুকিয়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে গেলে সর্বোচ্চ ভাল মানের সোনালী আশের পাট বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে ১ হাজার ৭২০ টাকা মন দরে। সেই হিসেবে এক কানি জমিতে ৩০ কেজি পাট চাষ করতে যেখানে মোট খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৪শ’ টাকা। সেখানে ৩০ কেজি পাটের মূল্য পাওয়া যাচ্ছে তারও কম। এতে কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে। অনেকে লোকসান ঠেকাতে নিজেই হাড় ভাঙা শ্রম দিয়ে জমিতে কাজ করছে।
মুন্সি মজিবুর রহমান নামে ৬৬ বছরের এক কৃষক জানান, পাট কাটতে যেয়ে তার দুই পায়ে পাটের গজা (কাটা পাটের গোড়া) ঢুকে গভীর ক্ষত হয়েছে। সেই ক্ষত নিয়েই তাকে প্রতিদিন পানির মধ্যে ডুবে থাকা পাটের ক্ষেতে নেমে পাট কাটতে হচ্ছে। তার নিজের কোন খেতখামারী নেই। পরের জমিতে কাজ করেন। বর্তমানে সকাল ৬ টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকা পরের ক্ষেতের পাট কাটছেন তিনি। প্রতি ঘন্টায় মুজুরি পাচ্ছেন ৬০ টাকা করে।
ফরিদপুরের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, লাভের পরিমাণ কম হলেও দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততায় এ অঞ্চলের মানুষ পাট আবাদ করেছেন। বিভিন্ন সড়কের দুই ধারে এখন বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পাট ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ততা দেখা যায়। আর বিভিন্ন পুকুর ও জলাশয়ে সেই পাট ধুতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক। হাড় ভাঙ্গা এই পরিশ্রমের পর তারা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য চায়। আলাপকালে এসব কৃষকেরা জানান, পাটের দাম মন প্রতি কমপক্ষে ২ হাজার টাকা হলে তাদের পোষায়। কিন্তু যেই দাম পাচ্ছে তাতে তাদের খরচের টাকাই উঠে না। ভাড়ায় দিন মুজুর কেনার পর পরিবারের নারী ও শিশু সবাই মিয়ে শ্রম দিয়ে এই লোকসান কমাতে হয় তাদের। তাদের উৎপাদিত ফসলের লাভের টাকা ফরিয়া মহাজনেরাই খেয়ে ফেলে বলেও তাদের আক্ষেপ।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জি এম আবদুর রউফ জানান পাট ফরিদপুরের প্রধান ফসল। এবার পাটের বাম্পার আবাদ হয়েছে। জেলায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২ হাজার ৫০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ৮২ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ২৬৫ হেক্টরে হয়েছে মেস্তা পাট। বাদবাকি সবই তোষা জাতের। পাটের আবাদ এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
(এফএ/এএস/আগস্ট ২৬, ২০১৭)
পাঠকের মতামত:
- 'শোষকের গুলিতে প্রাণ দিতে প্রস্তুত কিন্তু জনগণের অধিকারের প্রশ্নে আপোষ হবে না'
- যাত্রাভঙ্গ
- সবার আমি ছাত্র
- দাবানলের কারণে আবার পেছালো অস্কার মনোনয়ন
- পেট খালি রাখলেই বিপদ
- ‘বিএনপির সংস্কার কর্মসূচি জাতির মুক্তির সনদ’
- ঘোষণাপত্র জারি হবে ছাত্রদের নেতৃত্বে, উপস্থিত থাকবেন সবাই
- সিটি মিনিস্টার পদ থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ
- সাতক্ষীরায় প্রায় ২৭ লক্ষ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি
- শ্যামনগরে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াই
- কুশিয়ারা তীরে তিনদিনের মেলায় ২০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি
- কোটচাঁদপুরে কাঠ রিফাইন করা বয়লার বিস্ফোরণে নিহত ২
- সব বিনিয়োগ সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার আহ্বান
- জামালপুরে জাতীয় কবিতা পরিষদের কমিটি গঠন
- মাগুরায় ইসাডোর শীতবস্ত্র বিতরণ
- রক্ষাকবজ হিসেবে জামায়াত নেতাদের তদবির
- বাগেরহাটে বিশ্বমানের ক্যান্সার হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন ২৫ বিসিএস কর্মকর্তা
- নাটোরে আদিবাসী কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক আটক
- ভোটার হালনাগাদ নিয়ে ইসির বিশেষ ১৬ নির্দেশনা
- নাটোরের বড়াইগ্রামে ভুতুড়ে কৃষি মেলা, লক্ষ টাকা গচ্চা!
- ওয়ালটন প্লাজার ‘চ্যালেঞ্জার্স সামিট’ অনুষ্ঠিত
- ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপেয়ারেল ডিজাইনের ভবিষ্যৎ শীর্ষক সেমিনার
- মগড়ায় বিএনপি নেতা টুকুর পক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ
- মহম্মদপুরে ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদ্বোধন
- বোয়ালমারীতে তারুণ্যের মেলা অনুষ্ঠিত
- একমাস পর সর্বনিম্ন সংক্রমণ শনাক্ত ভারতে
- বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির বিষ
- বিজয় দিবসে শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের মিলন মেলা
- খাগড়াছড়িতে বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের সড়ক অবরোধ
- মাকে বাঁচাতে জবি শিক্ষার্থীর আকুতি
- পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা
- নিউ ইয়র্কে সাকিব আল হাসানের নয়া কৌশলে চাঁদাবাজি
- টিউলিপের বিকল্প খুঁজছে লেবার পার্টি
- পাঠ্যবইয়ে র্যাপার হান্নান ও সেজান
- তোমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম যে ব্যক্তিটি খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, যাকে তুমি পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে
- সড়কে মৃত্যু: প্রতিদিনের ট্র্যাজেডি এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব
- বাগেরহাটে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্য শিক্ষকদের মানববন্ধন
- ২১ ফেব্রুয়ারিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইজিপির নির্দেশনা
- ছয় লেন হচ্ছে ভাঙ্গা-বেনাপোল সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ৪২৩৬ কোটি
- আর বীর নিবাস নয়, ২৫ লক্ষ টাকার গৃহঋণ দিন : আবীর আহাদ
- 'আমি নিশ্চিত, পিতা মুজিব যদি রাষ্ট্রপতির প্রটোকল মেনে বঙ্গভবনে থাকতেন, তাহলে বাঙালির এতো বড় মহাসর্বনাশ কেউ করতে পারত না'
- সুবর্ণচরে চর জিয়া উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে আলোচনা সভা
- মঞ্চে গিটার বাজাতে বাজাতেই মারা গেলেন পিকলু
- বিয়ে করলেন শশী
- সাতক্ষীরায় স্কুল ছাত্রীকে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা, আটক ১