E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

বিরূপ আবহাওয়ায় ঈশ্বরদীতে লিচুগাছে মুকুলের পরিবর্তে কচিপাতা

২০২৫ মার্চ ০৮ ১৫:২০:২৮
বিরূপ আবহাওয়ায় ঈশ্বরদীতে লিচুগাছে মুকুলের পরিবর্তে কচিপাতা

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ফাল্গুন মাসে লিচুর মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ঈশ্বরদীর গ্রামে গ্রামে। থোকায় থোকায় হলুদ রঙের মুকুলে ছেয়ে যায় শত শত লিচু বাগান। কিন্তু এবার চিরাচরিত মুকুলের সেই মৌ মৌ গন্ধ নেই। গজিয়েছে কচিপাতা। মুকুল কম আসায় ফলন বিপর্যয়ের আশংকায় বাগানমালিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, লিচুর মুকুলের এমন করুণ দশা গত পাঁচ দশকে দেখা যায়নি। মুকুল কম আসার জন্য আবহাওয়াকে দায়ী করছেন কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, এখনো সময় আছে লিচুর মুকুল আসার। কৃষকরা বলছেন সময় পেরিয়ে গেছে।

লিচু ঈশ্বরদীর প্রধান অর্থকরী ফসল। প্রতিবছর ৫০০-৬০০ কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হয়। লিচু চাষের ওপর নির্ভর করে এ অঞ্চলের লাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা।

‘লিচু গ্রাম’ বলে পরিচিত মানিকনগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, কদিমপাড়া ও আওতাপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, শত শত লিচু বাগানে মুকুলের পরিবর্তে গজিয়েছে নতুন কচিপাতা। নতুন পাতা গজালে মুকুল আসে না। যেকারণে লিচুর উৎপাদন নিয়ে চাষিদের সংশয়। ফাল্গুন মাসের ২২ দিন অতিক্রান্ত হলেও চাষিরা বাগান পরিচর্যা করছেন না। ব্যবহার হচ্ছে না সার, কীটনাশক ও মুকুলের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ। বিগত বছরগুলোতে এসময় বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করেন চাষিরা। এবারে বাগানগুলোতে সুনসান নীরবতা।

লিচু চাষিরা জানান, বাগানে ১০০ লিচু গাছ থাকলেও মাত্র ১০-২০টি গাছে মুকুল এসেছে। মুকুলের পরিমাণও অনেক কম। অতীতে এতো কম মুকুল দেখা যায়নি। এ বছর কেন এমন হলো তারা বুঝতে পারছেন না। আবহাওয়ার কারণে এবছর মুকুলের বিপর্যয় হতে পারে বলে তাদের ধারণা।

মানিকনগর পূর্বপাড়া গ্রামের লিচুচাষি শাহমত মন্ডল বলেন, আমার বয়সে এত কম লিচুর ফলন দেখিনি। এখানকার মানুষ লিচুর ওপর নির্ভরশীল। এবারে বছর চালাতে খুবই কষ্ট হবে। ১০ থেকে ২০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। বাকি গাছে মুকুল নেই।

লিচুতে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব ওরফে লিচু কিতাব বলেন, ৪৫ বছর ধরে লিচুর আবাদ করছি। এমন বিপর্যয় কখনো হয়নি। পুরো এলাকাতেই এ অবস্থা। এজন্য পরিবর্তিত আবহাওয়াকে দায়ী করতে হবে। পরিবর্তিত আবহাওয়ার সাথে সমন্বয় করে আগামীতে লিচুর ভালো আবাদ আর হবে কি না সন্দেহ আছে। এবছর ১০ শতাংশ লিচুর ফলন পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

তিনি জানান, লিচু আবাদের সাথে লাখ লাখ মানুষ প্রত্য ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এরা এবারে সবচেয়ে বেশি বিপদের সম্মুখীন হবেন। আমার মনে হয় সরকারের এ বিষয়ে এখনই পদপে নেওয়া উচিত, যাতে পরিবর্তিত আবহাওয়ায় লিচুর ফলন ভালো করা যায়। তা নাহলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে লিচু আবাদ বিলুপ্তির দিকে চলে যাবে।

লিচু চাষি আমিরুল বলেন, বিগত ৫০ বছরে লিচুর এমন বেহাল দশা দেখিনি। এবারে আমাদের কী অবস্থা হবে তা বুঝে উঠতে পারছি না।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, লিচুগাছে সমানভাবে প্রতিবছর মুকুল আসে না। কোনোবার কম, কোনোবার বেশি আসে। তবে এবারে তুলনামূলকভাবে কম গাছে মুকুল এসেছে। জেনেটিক কারণে হতে পারে। আগামী বছর মুকুলের পরিমাণ সব গাছেই বেশি হবে এবং ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, দেশে লিচু চাষের জন্য ঈশ্বরদী বিখ্যাত। এবারে ৩,১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এবছরও গাছে মুকুল এসেছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় মুকুলের পরিমাণ কম। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে অনুমান করছি।

(এসকেকে/এএস/মার্চ ০৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৩ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test