E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

রি-প্যাকিংয়ের নামে সার-কীটনাশকে ভেজাল

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১১ ১৮:৪২:৫৮
রি-প্যাকিংয়ের নামে সার-কীটনাশকে ভেজাল

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : গোপনে গড়ে তোলা হয়েছে সার ও কীটনাশকের রি-প্যাকিং কারখানা। সেখান থেকে মানহীন ও ভেজাল সার-কীটনাশক স্থানীয় সার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষককে গছিয়ে দেয়া হচ্ছে। পেঁয়াজ চাষিদের লক্ষ্য করেই এ জাল বিস্তার করা হয়েছে। এসব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে আর্থিকভাবে প্রতারিত হওয়ার সঙ্গে ফসলহানি ও জমির উর্বরতা বিনষ্টের ঝুঁকিতে পড়ছেন কৃষকরা। দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী প্রসিদ্ধ এলাকার মধ্যে অন্যতম ঝিনাইদহের শৈলকুপা ও মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কৃষকরা পড়েছেন এই জালে।

জানা গেছে, কয়েক মৌসুম ধরেই শৈলকুপা ও শ্রীপুরের পেঁয়াজ চাষিদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন এক শ্রেণীর সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা গড়ে তুলেছেন ফসলের বালাইনাশক, ভিটামিনসহ সার কীটনাশকের রি-প্যাকিং কারখানা। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে দুই জেলার সীমান্তবর্তী লাঙ্গলবাঁধ এলাকায় এসব রি-প্যাকিং কারখানা গড়ে তোলা হয়। বেশি লাভের আশায় এসব কারখানার মানহীন কীটনাশক চাষির হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী। ফলে সহজেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন দুই উপজেলার বিপুল সংখ্যক পেঁয়াজ চাষি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে শুধু শৈলকুপায় ১৩ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত মৌসুম থেকে ৫ হাজার হেক্টর বেশি।

শৈলকুপার আউশিয়া গ্রামের চাষী মিল্টন বিশ্বাস জানান, ‘পেঁয়াজের ফলন বাড়াতে চাষিরা বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। পেঁয়াজ মৌসুমে চাষিদের বাকিতে পণ্য দেওয়ার সুযোগে বিভিন্ন ধরনের নিম্নমানের সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়; যা মাঠে প্রয়োগ করে কোনো কাজ হয় না। তিনিও এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।’

একই গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মনিরুল ইসলাম জানান, ‘তিনি গত বছর পেঁয়াজ ক্ষেতে আগাছা দমনের জন্য কীটনাশক ছিটিয়ে ছিলেন। সেবার আগাছাসহ পেঁয়াজ ধ্বংস হয়। এবার সেই ক্ষেতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করলেও গত বছর প্রয়োগ করা কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় তা নষ্ট হয়। পরে ক্ষেতের উপরিভাগের মাটি কেটে তুলে তিনি নতুন করে আবাদ করেছেন।’

শৈলকুপার বিসিআইসি ডিলার আলম ট্রেডার্সের মালিক নোমান পারভেজ বলেন, ‘চাষিরা মাঝে মধ্যেই পেঁয়াজ ক্ষেতে প্রয়োগ করা বিভিন্ন সার ও কীটনাশক নিয়ে তাঁর কাছে অভিযোগ করেন। এক শ্রেণীর অসাধু সার-কীটনাশক ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে চাষীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন।’

শৈলকুপা ও শ্রীপুর সীমান্ত এলাকায় গড়ে ওঠা রি-প্যাকিং কীটনাশক জেপিআর এগ্রো কেয়ার ও মজিদ এগ্রো সায়েন্সের মালিক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দস্তা,ম্যাগনেসিয়াম সালফার, জিপসাম, বোরন সারসহ বিভিন্ন কীটনাশক তিনি রি-প্যাকিং করে বাজারে সরবরাহ করে থাকেন। এসব সার ও কীটনাশক উৎপাদনে তাঁর খামারবাড়ির লাইসেন্স রয়েছে। তবে কোনো কেমিস্ট ছাড়াই রি-প্যাকিং করা এবং সার ও কীটনাশক রি-প্যাকিং করার বৈধতা আছে কিনা জানতে চাইলে বিষয়গুলো এড়িয়ে যান তিনি।’

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, ‘তিনি রি-প্যাকিং করা মানহীন ও ভেজাল সার এবং কীটনাশক নিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। সার ও কীটনাশকের রি-প্যাকিংয়ের বৈধতা আছে কিনা খতিয়ে দেখে গোপনে গড়ে ওঠা এসব কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

(এসআই/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test