E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নদী বেষ্টিত টাঙ্গাইলে পানের সফল ফলন

২০২৪ অক্টোবর ৩১ ১৮:২০:৩০
নদী বেষ্টিত টাঙ্গাইলে পানের সফল ফলন

#জহিরুলের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সে কোন প্রকার পরামর্শ বা সহযোগিতা পায়নি। পান চাষের জন্য তিনি রাজশাহীর পানচাষীদের সহযোগিতায় সফল হয়েছেন।

#নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসাইন শাকিল বলেন, পান চাষে জহিরুল ইসলামকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সকল ধরনের কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : পান চাষের জন্য সাধারণত উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলকে আদর্শ মনে করা হতো। পান চাষের জন্য উঁচু, বন্যামুক্ত, বেলে দোআঁশ বা এটেল দোআঁশযুক্ত জমি প্রয়োজন। আর ছায়াযুক্ত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পান চাষের জন্য ভাল।  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পানের চাষ হলেও নদী বেষ্টিত টাঙ্গাইল জেলায় মধুপুর পাহাড়ি অঞ্চলে পানের চাষ হতো। জেলার পাহাড়ি অঞ্চল মধুপুর ছাড়াও  সমতল ভূমিতে পানের চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন নাগরপুরের  কৃষক  মো.জহিরুল ইসলাম। টাঙ্গাইলের নাগরপুরে  পানের 'বরজ' করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি নাগরপুর উপজেলার মামুদনগর ইউনিয়নের ভাতশালা গ্রামে উঁচু বাড়ির উঠানে পরীক্ষামূলক পান চাষ করে সফল হয়েছেন। 

কিভাবে পান চাষে উদ্বুদ্ধ হলেন জহিরুল?

জানা যায়, প্রায় সাত বছর পূর্বে রাজশাহীতে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সেখানে পান চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। পরে আত্মীয়ের সহযোগিতায় রাজশাহী থেকে প্রায় ১০ হাজার টাকায় চার হাজার পানের চারা কিনে এনে ২৫ শতাংশ জমিতে পানের বরজ তৈরি করেন। পর পর দুবার বেশির ভাগ চারা নষ্ট হয়ে যায় এবং ফলন ভালো না হওয়ায় বেশ আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েন। যার কারণে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন। তবে হাল ছাড়েননি তিনি । রাজশাহীতে কয়েকবার গিয়ে নিজে মাঠে থেকে পান চাষ, যত্ন ও পানগাছ রক্ষার বিষয়ে পানের চাষ করেন এমন কৃষকদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেন। পরে বন্ধুদের সহযোগিতায় আবারো শুরু করেন পান চাষ। অবশেষে সফলতা পান তিনি। খরচ দ্বিগুণ হলেও বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় লাভের আশা করছেন তিনি। এরই মধ্যে তার বরজের পান পাতা বড় হয়েছে। বিক্রিও শুরু করেছেন।

কৃষক জহিরুল ইসলাম বলেন, ২৫ শতাংশ জমিতে পান চাষে তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা। প্রতিসপ্তাহে প্রায় ৩ হাজার টাকার পান বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৬৭ হাজার টাকার পান বিক্রি করেছেন। পান চাষের নিয়ম অনুযায়ী বর্তমানে পানগাছের লতা বাড়তি হলে আবার সে লতাগুলো মাটিতে ঢেকে দিতে হয় এখন সেই প্রস্ততি চলছে। সব ঠিকঠাক থাকলে এ বাগান থেকে প্রতিবছর দেড় লাখ টাকার পান বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

কৃষক জহিরুলের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সে কোন প্রকার পরামর্শ বা সহযোগিতা পায়নি। পান চাষের জন্য তিনি রাজশাহীর পানচাষীদের সহযোগিতায় সফল হয়েছেন। যদি সরকারের পক্ষ থেকে পান চাষের জন্য কৃষি উপকরণ, কৃষি সহায়তা ঔষধ, সার, কীটনাশক ও পরামর্শ পেত তবে তার দেখাদেখি অনেক কৃষক তাদের জমিতে পান চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারতো।

পানচাষ পদ্ধতি নিয়ে জহিরুল ইসলাম জানান, পান চাষের উপযুক্ত সময় বাংলা বৈশাখ মাস। তাই বৈশাখের শুরুতেই উঁচু জমিতে সারিবদ্ধ ভাবে পানের চারা রোপন করা হয়। জমি থেকে পানি সহজেই বের হওয়ার জন্য করা হয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা। প্রখর রোদের তাপ থেকে চারা বাঁচাতে বাঁশ ও খড়ের সাহায্যে মাচা দেওয়া হয়। ৬ থেকে ৭ ফুট ওপরে ছাউনি দেওয়া হয়। সপ্তাহে অন্তঃত দুবার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়। পান গাছের প্রধান খাবার খৈল। যা বর্ষাকালে প্রয়োগ করা হয়। ফাল্গুন চৈত্রে খৈল প্রয়োগ করতে হয় না।

নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসাইন শাকিল বলেন, নাগরপুর উপজেলায় পান চাষে জহিরুল ইসলাম একজন সফল উদ্যোক্তা। পান চাষে জহিরুল ইসলামকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সকল ধরনের কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। পান যেহেতু অর্থকরী ফসল তাই কৃষি অফিস থেকে জহিরুল ইসলামসহ যারা পান চাষে এগিয়ে আসবে তাদের সার্বিক সহযোগীতা প্রদানে সচেষ্ট থাকবো।

(এসএম/এসপি/অক্টোবর ৩১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test