E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

টাঙ্গাইলে সোনালি আঁশ আর রুপালি কাঠিতে কৃষকের মুখে হাসি 

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১০ ১৯:০৬:২৭
টাঙ্গাইলে সোনালি আঁশ আর রুপালি কাঠিতে কৃষকের মুখে হাসি 

মোহাম্মদ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় টাঙ্গাইলে চলতি বছর পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৯০ বেল পাট উৎপাদন হবে। চলতি বছরের পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। ভালো দামে সোনালি আঁশ আর রুপালি কাঠি বিক্রি হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

অন্যদিকে পাটের ভালো দাম পেতে শতভাগ পলিথিনের বস্তা পরিহারের পাশাপাশি দেশের সব পাটকল চালু ও বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পাট চাষিরা। এবার পাট ও পাটকাঠির বাজারদরও ভালো। মণপ্রতি পাট সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাটের আঁশ বিক্রি করে যেমন টাকা পাচ্ছেন; তেমনই পাটকাঠি জ্বালানি আর ঘরের বেড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে।

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, দাম ভালো পাওয়ায় জেলায় প্রতি বছরই বাড়ছে সোনালি আঁশ পাটের চাষ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫২ হাজার ৫৫৮ বেল উৎপাদন হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৯০ বেল পাট উৎপাদন হবে। চলতি বছরের পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। চলতি বছর জেলায় ৬ হাজার ২০০ জনকে ১ কেজি করে পাটের বীজ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলায়ই পাটের আবাদ হয়েছে। জাগ দেওয়া পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত চাষিরা। বেশিরভাগ জমির পাটই কাটা শেষ হয়েছে। অধিকাংশই জাগ দেওয়া হয়ে গেছে। অনেকে পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। কেউ বা পাটকাঠির আঁটি বেঁধে রোদে শুকাচ্ছেন। কেউ আবার পাট ভাঁজ করে রোদে মেলে দিচ্ছেন।

পাট চাষিরা জানান, জেলায় দেশি, তোষা, কেনাফ, রবি-১ ও ভারতীয় বঙ্গবীর জাতের পাট সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়। কৃষি অফিস থেকে প্রায় প্রতি বছর পাটের বীজ ও সার বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। তবে ওই বীজগুলো সময়মতো আমাদের কাছে পৌঁছায় না। যার কারণে পাটের আবাদ ব্যাহত হয়। সময়মতো পাট বীজ হাতে পেলে আবাদ অনেক অংশে বৃদ্ধি পাবে।

প্রথমদিকে বৃষ্টিপাতের অভাবে পাট আবাদ করতে সমস্যা হলেও মৌসুমের শেষদিকে এসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় পাটের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া নিবিড় পরিচর্যা আর পাট ও কৃষি অফিসের পরামর্শের কারণে পাট আবাদে তেমন কোনো রোগবালাই দেখা দেয়নি। বাজারে এবার পাটের বাজারদর ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পয়লা গ্রামের পাট চাষি জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এবার ২৫ শতাংশ জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এতে প্রায় ৬ মণ পাট পাবো। পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। মণপ্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দরে। এ ছাড়া একশ আটির বোঝা পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা। ২৫ শতাংশ জমিতে ১৫ জন শ্রমিক লেগেছে। যার প্রতি শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা।’

দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের আগ দেউলী গ্রামের কৃষক সামচুল হক বলেন, ‘এ বছর আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। প্রতি বিঘায় ৭ মণ ফলন হয়েছে। ৪ বিঘা জমির পাট ৩ হাজার ৪০০ টাকা মণ হারে বিক্রি করে ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছি। ৪ বিঘা জমির পাট আবাদ করতে আমার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এতে আমার প্রায় ৫৫ হাজার টাকার ওপরে লাভ হয়েছে।’
একই গ্রামের অপর

কৃষক ওহাব মিয়া বলেন, ‘আমি ১০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে পাট চাষ করেছিলাম। এতে ৩ মণ পাট পেয়েছিলাম। প্রথমে যে বাছনা পাট পেয়েছিলাম; সেগুলো ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। পরের পাট ৩ হাজার ৮০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি।’

আগ দেউলী গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়া বলেন, ‘পাট আবাদের প্রথমদিকে বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে পাট বপণ করি। যে পাটগুলোর বীজ বপন করেছিলাম; সেগুলো ৪ হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছি। পরে কিছু পাট ৩,৪০০-৩,৫০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। আরও কিছু পাট কাটা বাকি আছে। পাটের ফলন আর দামে আমরা অনেক খুশি।’

দেলদুয়ার উপজেলার ছিলিমপুর হাটের পাট ব্যবসায়ী ময়নাল হক বলেন, ‘আমরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে বিক্রি করি। এ ছাড়া প্রতি শুক্রবার ছিলিমপুর হাটে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনা হয়। হাটের দিনে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মণ পাট কেনাবেচা হয়। এ বছর ৩,৫০০-৩,৮০০ টাকা মণ দরে পাট কিনছি। মণে ৮০-১০০ টাকা দরে লাভ করে বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে বিক্রি করে থাকি।’

পাট অধিদপ্তর থেকে চলতি বছর জেলার ১২টি উপজেলার ৩৬ হাজার কৃষককে ১ কেজি পাট বীজ ও ১২ কেজি করে সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত ৯০০ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান খান।

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন জানান, পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাট চাষে ঝুঁকেছেন কৃষক। পাট চাষ করে কৃষক এখন লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। পাট চাষিদের সুদিন ফিরেছে বলে দাবি করেন তিনি।

(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৭ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test