E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

রাজারহাটে লাম্পি স্কিন রোগে মারা গেছে শতাধিক গরু, আতঙ্কে খামারি-কৃষক

২০২৪ জুলাই ০১ ১৮:৪০:৩৬
রাজারহাটে লাম্পি স্কিন রোগে মারা গেছে শতাধিক গরু, আতঙ্কে খামারি-কৃষক

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট : কুড়িগ্রামের রাজারহাটে বেড়েছে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগ। গত এক সপ্তাহে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় শতাধিক মাঝারি ধরনের গরু মারা গেছে। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের খামারি ও প্রান্তিক কৃষক। পল্লী পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ভূল চিকিৎসা ও অর্থ অপচয়ের শিকার হলেও মিলছে না কোনো সমাধান। 

উপজেলার চাকিরপশার, নাজিমখাঁন, বিদ্যানন্দ, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, উমরমজিদ, ছিনাই ও রাজারহাট সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হঠাৎ করে গবাদি পশুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। তবে আক্রান্তের তুলনায় কম মারা যাচ্ছে গরু বলে দাবি করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। প্রান্তিক কৃষকের পাশাপাশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন খামারিরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ কৃষকের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। এ রোগের প্রতিষেধক না থাকায় অনেকেই কবিরাজ ও পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আক্রান্ত গরুর মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে চিকিৎসকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। নিম্নমানের ওষুধ দিয়ে খামারিদের সঙ্গে করছে প্রতারণা। অনেক ক্ষেত্রে ভূল চিকিৎসার শিকার হতে হচ্ছে খামারীদের। গত ২৭জুন বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের সুখদেব এলাকার কৃষক রবিউল ইসলামের ১মাঝারি গরু, জাহাঙ্গীর আলমের ১টি গরু, মাঈদুল ইসলামের ১টি মাঝারি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এছাড়া গত এক মাসে উপজেলার সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের খামার ও প্রান্তিক কৃষকদের প্রায় শতাধিক গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে পল্লী পশু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজারহাট উপজেলায় সরকারি ভাবে ৫’শ ৫৫টি ছোট-বড় খামার রয়েছে। এতে গরুর সংখ্যা ৪০হাজার ৪২২টি। এছাড়া বেসরকারি ভাবে এ উপজেলায় প্রায় ৪ থেকে ৫হাজার ছোট-বড় খামার রয়েছে। যেখানে প্রায় কয়েক লাখ গরু রয়েছে। বৃহত্তর রংপুর বিভাগের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় সর্ববৃহৎ গরুর খামারী রয়েছে। যেখান থেকে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ টন দুধ ও মাংস সরবরাহ কওে থাকে খামারীরা। অথচ এই উপজেলায় গরুর সঠিক চিকিৎসা ও রক্ষনা-বেক্ষনের জন্য একটি প্রাণি সম্পদ বিভাগ থাকলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাটেনারি সার্জন, কম্পাউন্ডার, ডেসার, অফিস সহকারি ও এমএলএসএস পদগুলো শুন্য রয়েছে। এর ফলে খামারগুলো সঠিক তত্বাবধনের অভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আগেই লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে খামার ও প্রান্তিক কৃষকের গরু। গত এক মাসে এ রোগে আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার গরুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

পল্লী পশু চিকিৎসকরা বলেন, লাম্পি স্কিন গবাদি পশুর নতুন একটি রোগ। যার প্রতিষেধক বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে পাওয়া গেলেও সরকারিভাবে এখনো আসেনি। আক্রান্ত পশুর প্রথমে সামনের পা ফুলে যায়। তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীরে বড় বড় গুটি দেখা দেয়। এক সপ্তাহ পরে গুটিগুলো গলে ঘা হয়। ঘা থেকে অনবরত তরল পদার্থ বের হয়। অল্প দিনে গরু শুকিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মারা যায়। তবে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম।

সোমবার (১ জুলাই) বিকালে রাজারহাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাহফুজার রহমান বলেন, ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ এখন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। যারা আক্রান্ত গরু আমাদের কাছে নিয়ে এসেছেন তাদের আমরা চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়েছি। এছাড়া এ রোগটি ডেঙ্গু রোগের মতো মশা মাছি এবং সুচ দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। সে কারণে আক্রান্ত গরু অবশ্যই আলাদা করে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। লাম্পি স্কিন রোগ সামাজিক আন্দোলন করে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আক্রান্ত গরুকে ব্যথার ওষুধ প্যারাসিটামল, নিমপাতার রস, খাবার সোডা, লেবুর রস, আদার রস, দানাগুড় ও লবন খাওয়ানো যেতে পারে। এবারে বড় গরুর চেয়ে বাছুরগুলো বেশী মারা যাচ্ছে। তবে আমাদের কাছে সব গুলোর তথ্য নেই। খামারিদের তুলনায় প্রান্তিক কৃষকদের গরু লাম্পি স্কিন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আক্রান্ত গরুর সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

(পিএস/এসপি/জুলাই ০১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ জুলাই ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test