E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

হাজারো মানুষের তারুণ্যের জাগরণ ‘অনন্যা’ 

২০২৫ এপ্রিল ০৬ ১৮:৫০:০৬
হাজারো মানুষের তারুণ্যের জাগরণ ‘অনন্যা’ 

শোভন সাহা


স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের নিঃশেষ হতে যাওয়া সেই তরুণীটি এখন হাজারো মানুষের আশার আলো জ্বালাচ্ছে গোটা বিশ্বে। ‘অনন্যা’ই এখন অনন্য করে তুলছে গোটা বাংলাদেশের তরুণ তরুণীকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে। পাশাপাশি নিজের ফ্রিল্যান্সিং ফার্ম হাউস আছে। 

শুরুটা এত সহজেতর ছিল না, ছোটবেলা থেকে মেডিকেল পড়া যার স্বপ্ন ছিলো সেই এখন হাজারো মানুষের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মেডিকেল পড়ার স্বপ্ন এক নিমিষেই ভেঙে যায় রেজাল্ট পাওয়ার পর। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং পরিবার তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে লাগলো। এত ভালো স্টুডেন্ট তাও কোথাও চান্স পায়নি, হাসাহাসি শুরু করে। খারাপ সময়টাতে ভালোবাসার মানুষগুলো এক নিমিষেই পাল্টে গেল। অতঃপর করোনার ভয়াবহতা শুরু হলো- এদিকে প্রতিটা রাত একা নিঃসঙ্গ ভয়াবহ কাটতে লাগলো।

অনন্যা জানায়, একদিন রাত ১২টা বাজে, তখন ছোট বোন বলে উঠলো দিদি ফ্রিল্যান্সিং করে মানুষ অনেক ভালো করছে, তুমি তো শুরু করতে পারো। সত্যি বলতে, ফ্রিল্যান্সিং কি তাও জানতাম না। তার প্রথম ধারণা পাই আমার ছোট বোনের মাধ্যমে। মা- বাবার অনন্য অবদান ছিলো এবং সেই সাথে ল্যাপটপ কেনার মতো সামর্থ্য পর্যন্ত ছিলো না, তার দিদা তখন এগিয়ে আসে এবং তার স্বপ্নের সারথি হয়ে উঠেছেন। এভাবেই শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গিয়ে কোর্স করা শুরু করে এবং কিছুদিনের মধ্যেই লোকালি ও গ্লোবালি প্রোজেক্ট সম্পন্ন করে তখন আত্মবিশ্বাস দুর্বার গতিতে বেড়ে গেল।

বাংলাদেশে ২০১৪ সালে মাত্র ৯ শতাংশ নারী এ কাজ করতেন। বর্তমানে সক্রিয় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করেন। এসব নারী কোনোদিন আমেরিকায় যাননি, ইংল্যান্ডে যাননি কিন্তু প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ওইসব দেশের কোম্পানিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও আউটসোর্সিং করে কয়েক শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছেন। সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে ১১ শতাংশই নারী (অর্থাৎ ৭১ হাজার ৫০০ জন)। বিশ্বব্যাংক, অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট (ওআইআই) এবং ই-প্ল্যাটফর্মের সমীক্ষামতে, অনলাইন শ্রমশক্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে দ্বিতীয় (বিশ্বের মোট বাজারের ১৬ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে রয়েছে)। প্রথম অবস্থানে আছে ভারত (২৪ শতাংশ)। বাংলাদেশের পরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স ও যুক্তরাজ্য। এসব কাজে পুরুষদের আয় যেখানে ঘণ্টায় ২১.৫৭ পাউন্ড, সেখানে নারীদের আয় ২২.৪৩ পাউন্ড।

অনন্যা আরও জানান, আত্মীয়-স্বজন পরিবার যে মেয়েটিকে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতো সে মেয়েটির শেখানোর উদ্ভাবনী শক্তি দেখে তারা অবাক। দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে। এ পর্যন্ত ৫০০+ প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এর মধ্যে অনেকেই গ্লোবাল ও লোকাল মার্কেটপ্লেসে কাজ করছে। তেমনি অনেক লার্নার এর সফলতা অর্জন করিয়েছে। অনেকেই আছে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কিছুই জানতো না, তবে অনন্যা দিদি মনমুগ্ধকর ভাবে শিখিয়েছে, এখন তিনি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের আপওয়ার্ক এ কাজ করছে। এরকম সার্পোট এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

দেশে কর্মক্ষম মানুষের তুলনায় সরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম ২৬ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বেকার। অন্য এক জরিপে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ৬৬ লাখ মানুষকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কর্মক্ষম প্রতিটি মানুষ দেশের জন্য মূল্যবান মানবসম্পদ। বর্তমানে যে জাতি প্রযুক্তির দিক দিয়ে যত বেশি দক্ষ, সে জাতি তত বেশি উন্নতি করছে। তাই আমাদের দেশের বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীকে কম্পিউটারে দক্ষতা বৃদ্ধি করে কাজে লাগানো যেতে পারে। বর্তমানে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ফ্রিল্যান্সিংয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করছে।

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সালের তথ্যানুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ১৭ লাখ ৬৯ হাজার ২৬৬ আর নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৮১ হাজার ২২৬ জন। অর্থাৎ দেশে পুরুষের চেয়ে নারী ১৬ লাখ ১১ হাজার ৯৬০ জন বেশি।
এভাবেই দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করছে অনন্যা, যারা নিজেরা হয়ে উঠছেন দক্ষ এবং স্বাবলম্বী। প্রতিটি পরিবারের মেয়েই হয়ে উঠুক অনন্যার মত আত্মবিশ্বাসী নারী।

পরিবার সামলিয়ে এবং সন্তান লালনপালন করেও নারীরা আজ তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং কাজে দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়াচ্ছেন, আয় করছেন বৈদেশিক মুদ্রা। ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারীদের সম্ভাবনা কেমন এ বিষয় নিয়ে এবারের আয়োজন।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারীদের সম্ভাবনা কেমন এ বিষয়ে জানতে চাইলে অনন্যা বলেন, ‘সব পেশাতেই এখন নারীদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু যারা বাইরে গিয়ে কাজ করতে অনিচ্ছুক তাদের জন্যে ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে উপার্জনের হাতিয়ার। আমি নারী উন্নয়নে বিশ্বাসী। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই নারীদের আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে। এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিংটা নারীদের জন্য বিশাল সুযোগ। সর্বোপরি আমরা চাই নারীরা এগিয়ে যাক। দেশ ও জাতির জন্য ভূমিকা রাখুক।’

‘আমি মনে করি, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারীদের যদি আমরা আউটসোর্সিং পেশায় নিয়োজিত করি তাহলে এই সেক্টরে নারীদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। এ কাজ করার জন্য অবশ্যই আমাদের সরকারি সহায়তা প্রয়োজন আছে। সরকারি পর্যায়ে এখন হার পাওয়ার প্রজেক্ট চালু আছে কিন্তু তা সব জেলার অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। তাই অনেক নারী এ প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইসিটি, সমাজসেবা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ঋণের ব্যবস্থা করলে পিছিয়ে পড়া গ্রামের নারীরা এ কাজে সম্পৃক্ত হতে অনুপ্রাণিত হবেন।’

(এসএস/এসপি/এপ্রিল ০৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৭ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test