E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

সারাদিন বাইসাইকেলে ঘুরে ‘ছিট কাপড়’ বিক্রি করে সংসার চালান রাবেয়া

২০২৫ মার্চ ২৯ ১৭:৪৫:৫৯
সারাদিন বাইসাইকেলে ঘুরে ‘ছিট কাপড়’ বিক্রি করে সংসার চালান রাবেয়া

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : সরু খালের পাশ ঘেঁষে গ্রামীণ মেঠো রাস্তা। রাস্তার পাশ দিয়ে পাঁকা ও আধাপাঁকা বাড়ি। গ্রামীণ এ রাস্তার একপাশ ঘেঁষে সাইকেলে ছিট কাপড়, মশারি, বাচ্চাদের জামা-প্যান্ট নিয়ে চলছেন ৪৫ বছর বয়সী এক নারী। সাইকেল চালাচ্ছেন আর মাঝে মধ্যে হাঁকডাক ছেড়ে বলছেন, ‘ছিট কাপড় লাগবে, ছিট কাপড় ?’ কারও ছিট কাপড় লাগলে কিনে নিচ্ছেন তার থেকে।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) বিকেলে উপজেলার আগদিয়া, মধুরগাতি এলাকার উত্তর পাড়ায় এমন চিত্র দেখা যায়। ছিট কাপড় বিক্রেতা ওই নারীর নাম রাবেয়া খাতুন। স্বামী ও ২ সন্তান নিয়ে ৪ সদস্যের পরিবার তার। পরিবারসহ সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের গোবরা এলাকায় মিলনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন তিনি।

দীর্ঘ দিন ধরে জেলার বিভিন্ন গ্রামে দুই চাকার বাইসাইকেল চালিয়ে ছিট কাপড়, মশারি বিক্রি করে আসছেন রাবেয়ো।

আলাপচারিতার এক পর্যায়ে রাবেয়া খাতুন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে তার সংগ্রামী জীবনের গল্প শোনান। তিনি জানান, গরীব ঘরে জন্মাইছি বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারিনি। বাবার অভাবের সংসারে ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়। শৌখিন চিত্রশিল্পী স্বামীর সংসারে এসেও অভাব পিছু ছাড়েনি। ছবি বিক্রি করে স্বামীর যা রোজগার হয়, তা দিয়ে টেনেটুনে চলছিল সংসার। এরই মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। স্বামী যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চালানো দায়। ছোট সন্তানদের নিয়ে এক অবর্ণনীয় কষ্টে চলতে হয় তাদের। এভাবে খেয়ে না-খেয়ে দিন চলতে থাকে। অন্যের বাড়িতে কাজ করে কিছু দিন পার করেছি। এরই মধ্যে তার মাথায় এল বাজার থেকে ছিট-কাপড় কিনে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করবেন। প্রায় ৮ বছর আগে শুরু করেন ফেরি করে ছিট কাপড় বিক্রি। তার স্বামী মনি শেখ একজন চিত্রশিল্পী। ছবি এঁকে তা বিক্রি করাই তার কাজ। তা থেকে সামান্য আয়। ১২ বছরের ছেলে সন্তান স্থানীয় মাদরাসায় পড়ে। আট বছরের মেয়ে গোবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী।

রাবেয়া খাতুন বলেন, প্রতিদিন ভোরে জেলা সদরের সিঙ্গাশোলপুর, গোবরা, মধুগাতি, বিছালী, আগদিয়া, কলোড়া এলাকায় ফেরি করে ছিট কাপড় বিক্রি করি। জেলা শহর থেকে পাইকারি দরে এ সব সামগ্রী কিনে আনি। পরে সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ছিট কাঁপড় বিক্রি করে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরি। এতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। এই আয়েই নিজের খরচের জোগান হয়।

স্বাভাবিকভাবে এই বয়সে হেঁটে চলাও কষ্টসাধ্য, তার ওপর বাইসাইকেল নিয়ে রাস্তাঘাটে কাপড়, মশারি, ছোটদের জামা-প্যান্ট বিক্রিতে বেশ ধকল যায় রাবেয়া খাতুনের ওপর। তবুও তিনি কারও কাছে বোঝা হতে চান না।

তিনি আরও বলেন, আমার একটা অসুখ হলে ট্যাহা লাগে। তা ছাড়া নিজের খরচ আছে। কাপড়, তেল, সাবান ও ওষুধ লাগে। নিজে রোজগার করে নিজের খরচ জোগাই।’ কথায় কথায় এরই মধ্যে সময় গড়িয়েছে বেশ। সাইকেল চালাতে চালাতে রাবেয়া খাতুন আবার শুরু করলেন হাঁকডাক, ‘ছিট কাপড় লাগবে ছিট কাপড়?’

গোবরা এলাকার পিষুস কান্তি বিশ্বাস বলেন, রাবেয়া দীর্ঘদিন ধরে ছিট কাপড় বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। অনেক কষ্টে তার সংসার চলে দেখে খুব খারাপ লাগে। কিন্তু করার কিছু নেই।

আগদিয়া গ্রামের মিরন শেখ বলেন, রাবেয়া অনেক ভালো মানুষ। অনেকদিন ধরে ছিট কাপড় বিক্রি করছে। বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা তার নিকট হতে স্বল্পমূল্যে ছিট কাপড় কিনে উপকৃত হন।

তিনি আরও বলেন, 'সরকারি উদ্যোগে পরিশ্রমী রাবেয়াকে সহযোগিতা করলে তার জীবনযাপনের গল্পটা আরও দশ জনের কাছে হয়ে উঠতে পারে অনুকরণীয়। রাবেয়ার স্বপ্ন পূরণে সংশ্লিষ্ট মহল এগিয়ে আসবে-এ প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

(আরএম/এসপি/মার্চ ২৯, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০১ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test