E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

পাচার করা অর্থ ফেরত আনার নতুন উদ‍্যোগ: আপোসরফা

২০২৫ এপ্রিল ২৬ ১৭:২৯:২০
পাচার করা অর্থ ফেরত আনার নতুন উদ‍্যোগ: আপোসরফা

চৌধুরী আবদুল হান্নান


“এ যেন ডাকাতি করে নিয়ে যাওয়া মাল উদ্ধারে ডকাতের সাথে সন্ধি, খাঁচা থেকে বের হয়ে যাওয়া পাখি আবার খাঁচায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা।” স্বাভাবিক উপায়ে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে যত উদ‍্যোগ নেওয়া হয়েছে তা কোনো কাজে আসছে বলে কেউ মনে করছে না।

দেশ থেকে এযাবৎ কত টাকা পাচার হয়েছে তার সঠিক হিসাব কেউ দিতে পারবে না। ব‍্যাংকিং ও ফিন‍্যান্সিয়াল খাত সবচেয়ে লুন্ঠনের শিকার হয়েছে, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলছে গত সরকারের ১৫ বছরে মোট পাচার হয়েছে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার। এ বিষয়ে যত গভীরে যাওয়া যাবে, অর্থ পাচারের তত ভয়াবহ চিত্র উন্মোচিত হতে থাকবে।

মানুষ খুন করার চেয়ে অর্থ পাচার বড় অপরাধ, কারণ খুন করলে একটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর অর্থ পাচারে পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বর্তমান সরকার খুনিদের বিচার নিয়ে যতটা তৎপর অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা নিতে ততটা মনোযোগী নয়।

সম্প্রতি প্রকাশিত কয়েকটি পত্রিকার খবরে জানা যায়, সরকার পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে একটি ব‍্যতিক্রমী উদ‍্যোগ নিতে যাচ্ছে এবং তা হলো পাচারকারীদের সাথে আপোসরফা। এ যেন ডাকাতি করে নিয়ে যাওয়া মাল উদ্ধারে ডাকাতের সাথে সন্ধি, খাঁচা থেকে বের হয়ে যাওয়া পাখি আবার খাঁচায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা।

আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ‍্যমে তাদের ধরার চেষ্টা করা হলে তারা উড়াল দেবে বিদেশে, অন‍্য আবাসভূমিতে, যেখানে বানানো আছে অতিশয় মনোহর দৃষ্টিনন্দন ঘরবাড়ি।

আইন প্রয়োগ করে তো দেখাই গেছে, কোনো কাজ হয় না। কারণ যার টাকা আছে, অনেক ক্ষেত্রে, আইন তার কথা বলে। বলা হয় আইন অন্ধ, নিজস্ব গতিতে চলে কিন্ত এখন আর আইন অন্ধ নয়; সে চেয়ে চেয়ে দেখে আর ভাবে কোন দিকে যেতে হবে।

ব‍্যাংকের দরজা খোলা ছিল, নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিল তাদের ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল। তারপর যা হবার তাই হয়েছে। ব‍্যাংকে জনগণের জমানো টাকা ক্ষমতাবানরা সব নিয়ে গেছে, পাচার করেছে বিভিন্ন দেশে। তারা নানাভাবে প্রভাবশালী, সব সময় ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার কৌশল তাদের জানা।

ব‍্যাংক ব‍্যবস্থা এখন লাইফ-সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে, তাৎক্ষণিক কোনো গত‍্যন্তর না থাকায় টাকা ছাপিয়ে আমানতকারীদের চাহিদা মেটানো হয়েছে।

ব‍্যাংকিং খাতের বর্তমান দুরবস্থা বিবেচনায় পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন‍্য পাচারকারীদের সাথে আপসরফার উদ‍্যোগ একটি বুদ্ধিদীপ্ত কাজ বলা যায়।

পাচারকারীদের কাছে আত্মসমর্পণ ? বড় লজ্জা! জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় সব কিছু করা যায়। ওই যে কথা আছে না, সর্বনাশের মুখে অর্ধেক পরিত‍্যাগ বিচক্ষণতার পরিচায়ক। অর্ধেক অর্থ ফিরে আসুক ঘরে আগে, যা আসে তাই লাভ।

তবে পাচারকারীদের সাথে আপসরফা করতে গেলে বিদ‍্যমান আইনের পরিবর্তন আনতে হবে, আইন পরিবর্তন করতে যদি আবার বছর পার হয়ে যায়, তাহলে তো সেই একই অবস্থা।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অবস্হা ব‍্যতিক্রম হতেই পারে, তাছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদে আছেন আইনের শিক্ষক জনাব আসিফ নজরুল। তাঁর ব‍্যাপক পরিচিতি এবং সুনাম আছে, বিভিন্ন আলোচনায় তাঁকে আইনের দুর্বলতা, আইনের সঠিক প্রয়োগ নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে।

কয়েক বছর পূর্বে তিনি তাঁর কিছু ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছিলেন; ক্ষমতা থাকলে তিনি কিছু আইন করতেন। তার মধ‍্যে একটি আইন হচ্ছে, যারা লুটেরা, চোর আর সন্ত্রাসী তাদের জীবন নরক বানিয়ে দিতেন।

তিনি তো এখন ক্ষমতার চূড়ায়, বিলম্ব করছেন কেন ? ন‍্যায় ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে তো এমন কাজ শুরু করতেই হবে। বড় বড় কাজ করার আগে অন্তত একটি কাজ চাই এবং তা হলো — মহাশক্তিধর অর্থ পাচারকারীদের সাথে যাতে আপোসরফা করার উদ‍্যোগ নেওয়া যায়, সে লক্ষ‍্যে বিদ‍্যমান মানিলন্ডারিং আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার ব‍্যবস্থা করে দিন।

প্রস্তাবিত আপোসরফার মাধ‍্যমে বিদেশে পাচারকৃত অর্থের অন্তত পক্ষে আংশিক দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হরে, তা প্রত‍্যাশা করাই যায়।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test