ফিরে দেখা, ঘুরে দেখা

রহিম আব্দুর রহিম
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ৮টি বিভাগ নিয়ে বাংলাদেশ। সবুজ সমারোহে সাজানো গোছানো দেশের ৬৪টি জেলা। এর একটি জেলা জামালপুর। গারো পাহাড়ের পাদদেশ, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত নদী তীরবর্তী জেলাটিই দেশের ২০তম জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যার নামকরণের ইতিহাস খুবই মজার। জামালপুরের আদি নাম সিংহজানী।
জানা যায়, ১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে এই তল্লাটে রাজত্ব করেন দিল্লির সম্রাট আকবর, ওই সময় ইয়েমেন থেকে ২০০ শত অনুসারী নিয়ে এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে আসেন হজরত শাহ জামাল (রহ.) নামের এক ইসলাম প্রচারক। পরবর্তীতে তিনি অত্রাঞ্চলে ধর্মীয় নেতা হিসেবে প্রভাব বিস্তার করেন। ধারণা করা হয়, সাধক দরবেশ শাহ জামালের (রহ.) নামানুসারে এই শহরের নামকরণ হয় জামালপুর। ১৯৭৮ সালের ২৬ ডিসেম্বরে জামালপুর জেলার মর্যাদা পায়। বাংলাদেশের 'গর্বগাথা' জামালপুরের নকশিকাঁথার ঐতিহ্য পৃথিবী জোড়া। এটাই জেলার একমাত্র ব্যান্ডিং হস্তশিল্প। যে শিল্পজাত পণ্য এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে আসছে। জেলার অন্যতম ব্যান্ডিং কাঁসা, মৃৎ এবং তাঁতশিল্প। জেলার ঐতিহ্যবাহী বাহন ঘোড়া, গরু এবং মহিষের গাড়ির ইতিকথা ও জনশ্রুতি দেশের সর্বত্রই। কৃষ্টির মধ্যে পিঠালীভোজ শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে যমুনা সারকারখানা, জিল বাংলা চিনিকল, হজরত শাহ জামালের (রহ.) মাজার শরীফ, হজরত শাহ কামালের (রহ.) মাজার শরীফ, লাউচাপড়া পিকনিক স্পট, ৩০০ বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দয়াময়ী মন্দির, যে মন্দিরের গা ঘেঁষে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ। এই মসজিদে যখন নামাজ হয়, ঠিক ওই সময় মন্দির বেজে উঠে জয়ঢাক, তাল, খোলের মত বাদ্যযন্ত্র। কখনই দেখা যায় নি সাম্প্রদায়িকতা। সম্প্রীতির বাংলাদেশে মহাসম্প্রীতির জেলা জামালপুরই আমার মাতৃভূমি। কর্মস্থল থেকে যখনই বাড়ি যাই, তখনই জেলার প্রায় সবগুলো স্পষ্ট ঘুরে ফিরে দেখে আসি। এবারও ২৯ মার্চ বের হয়েছিলাম, আপন প্রকৃতি দর্শনে।
ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত জেলাটির প্রায় শেষ পশ্চিম-উত্তরে প্রশাসনিক অফিস-আদালত। তীরেই সবুজয়ান, যার ফাঁক- ফোঁকরে স্থাপিত বিশ্রামাগার। বর্ষাকালে টই-টুম্বুর পানির প্রবল স্রোত। যার শীতল হাওয়ায় স্বর্গীয় অনুভূতি! চৈত্রের বালুকাময় নদের তলদেশের কখন ভেপসা হাওয়া, আবার কখনও নির্মল বাতাস, আ-হা! মন-প্রাণ ভরে যায়। এই ভরা প্রকৃতির সীনা বরাবর প্রতিষ্ঠিত হজরত শাহ জামাল (রা) মাজার শরীফ। এবার ভ্রমণের প্রথমেই এই মাজার শরীফে পদার্পন। ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান আসাদ, কাছে ঢেকে নিলেন, বসতে দিলেন তাঁর পাশে। পরিচয় দেবার সাথে সাথে তিনি মাজারের ভৌত অবকাঠামোর দুর্দশার ফিরিস্তি তুলে ধরলেন, বললেন লেখতে। পাথালি নিবাসী আসাদুজ্জামান আসাদ আক্ষেপ করে বলেন, 'যার নামে জেলার নামকরণ, তাঁর মাজার এত অবহেলিত থাকতে পারে না। কোন সরকারই এই মাজারের উন্নয়নে এগিয়ে আসে নি। যা হয়েছে তা ভক্তদের দানের অর্থে।' এই বলে তিনি মাজারের বর্তমান অবস্থা দেখালেন। ছাদের উপরিভাগের আস্তর ফুলে ফেঁপে গেছে। বৈদ্যুতিক তার- বাল্প ঝুলে আছে, একেবারে জরাজীর্ণ অবস্থা।
আলাপচারিতার এক পর্যায় তিনি বলেন, প্রতিবছর ২৭ বৈশাখ ওরছ শুরু হয়, চল নয়দিন ব্যাপী। তিনি দৃঢ় চিত্তে জানান মাজারের ইতিহাসে হজরত শাহ জামাল (রা.) মাজার আঙ্গিনায় কোন কালেই কখনও নেশা, ভাঙ্গের আড্ডা হয় নি, জিকিরের নামে কোন ভন্ডামী চলে না। হ্যাঁ, জেলা শহর থেকে সোজা ২৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পুবেই আমার জন্মভূমি তারারভিটা গ্রাম, এই তারারভিটা গ্রামের জনশ্রুতির ইতিকথায় রয়েছে রসালু এক কাহিনী। অনেক বছর আগের কথা, নদীর তীরে জনবসতি, উত্তরে বিশাল কৃষিমাঠ, ঝোঁপ-ঝাড়ের এলাকা হওয়ায় আকাশের তারা দেখা তো দূরের কথা চাঁদ দেখাও কঠিন হতো। ঠিক ওইসময় জোছনাস্নাত রাতে আকাশের শত সহস্র তারার ঝলকানি ফুটে উঠতো। অর্থাৎ এই ভিটার যে কোন জায়গায় দাঁড়ালেই তারার দেখা মিলতো। 'ভিটা' মানে মাটি। অর্থাৎ এই ভিটায় দাঁড়িয়ে তারার দেখা মিলতো বলেই গ্রামের নাম তারারভিটা। পূর্ব-পশ্চিমমূখি গ্রামটি বংশাই নদীর তীরে অবস্থিত। নদীর ইতিকথাও মজার।
বংশাই এর উৎপত্তি পশ্চিমের যমুনা থেকে। আবার পূর্ব-দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় যমুনায় ঠেকেছে। এই নদীর বড় বৈশিষ্ট্য, কখনও দুই পাড়ের কোন বসতির ঘরবাড়ি গ্রাস করেনি। অর্থাৎ পাড়ের জনমানুষের বংশ রক্ষা করেই প্রবাহিত হয়েছে। ফলে এই নদীর নাম 'বংশাই' বলে জনশ্রুতি রয়েছে। মিঠাপানির নদীটি এক সময় স্রোতস্বিনী নদী হিসেবে প্রবাহিত হতো। চলতো নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। প্রতিবছর বর্ষাকালে নৌকাবাইচের আয়োজন করতেন আমাদের গ্রামের প্রয়াত শিক্ষক তৈয়ব আলী মাস্টার, হাসমত আলী, কিনাই মন্ডল, হারেজ আলী মহুরি, ইয়াদালী মন্ডল, ময়েজ উদ্দীন ও কফিল উদ্দিনরা, বিগত দুবার গ্রামে নৌকা বাইচের আয়োজন করেছিল আমার প্রতিষ্ঠিত বংশাই শিশু-কিশোর থিয়েটার। একবার ঘোড়ার দৌঁড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সংশ্লিষ্ট সংগঠনটি। মৌসুমি যত ক্রীড়া বিনোদন ছিল তা একসময় আমাদের গ্রামের লোকজনরাই করতেন। পালাগান, ধোঁয়াগানের দল ছিল এই গ্রামে। হাডুডু, ঘোড়দৌঁড়, ষাড়ের লড়াই, মই (চংগ) দৌঁড় হতো প্রতিবছর চৈত্র-বৈশাখে।
সম্প্রতি গ্রামের শৈশবের বন্ধু মতিউর রহমান আয়োজন করেছিল লোকজ উৎসব ও গুণিজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের, ভৌগোলিক কারণে গ্রামটি ততটা ফরোয়ার্ড জায়গায় নয়, একেতো জেলার শেষ পূর্ব -দক্ষিণ সীমান্তে। গ্রামে নেই কোন খোলামাঠ, ফলে উম্মুক্ত অনুষ্ঠান করতে হলে আমাদের যেতে হতো পাশের গ্রামের চাঁদপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত প্রাইমারি স্কুল মাঠে, না হয় পাশের রশিদপুর ইউনিয়নের শংকরপুর বাজারে। এবছর মতিউর রহমান তার পৈত্রিক সম্পত্তির অতি পুরনো একটি বিশাল পুকুরে মাটি ভরাট করে, তৈয়ার করেছিল অস্থায়ী মাঠ, এই মাঠেই ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা আটদিনব্যাপী চলেছে উৎসব। যে উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে সার্কাস,লটারিসহ এযুগের তরুণদের চাহিদা অনুযায়ী জমকালো নৃত্যানুষ্ঠান। প্রকাশ করেছেন ট্যাবলেট আকারের স্মরণিকা 'সুরের নদী বংশাই।' যে স্মরণিকাটি বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আত্মদানকারীদের -উৎসর্গ করা হয়েছে। ৪ কালারের দেড় ফর্মার স্মরণিকাটির প্রতিটি প্রবন্ধ, নিবন্ধই জ্ঞান পিপাসুদের জন্য তথ্য ভান্ডার বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। সংস্কৃতি হোক সত্য ও সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি, ক্রীড়া, সাংস্কৃতি হোক জীবন যৌবনের মহাশক্তি এবং দলমতের উর্দ্ধে থাকা এক সার্বজনীন সম্প্রীতির বলয়, রাষ্ট্র হোক শিষ্টের, দেশটি হোক আপনার, আমার এবং সব মানুষের।
লেখক : নাট্যকার, কলামিস্ট ও গবেষক।
পাঠকের মতামত:
- সভাপতি আবু বকর সিদ্দীক, সাধারণ সম্পাদক রনজক রিজভী
- মাদক সেবীদের কাজে বাধা দিতে গিয়েই জীবন গেল বৃদ্ধ তারা মিয়ার
- গোয়ালন্দ সম্মুখ যুদ্ধ ও প্রতিরোধ দিবস পালিত
- রাজবাড়ীতে ছাত্রদল কর্মী পারভেজের হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি
- আগৈলঝাড়ায় কালবৈশাখি ঝড়ে ডাল চাপায় শ্রমিকের মৃত্যু
- ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নতুন প্রজন্মকে যুক্ত করার উদ্যোগ ওয়ালটনের
- এসিল্যান্ড তারিকুলের খুঁটির জোর কোথায়
- জরাজীর্ণ ভবনে চলে জমি রেজিস্ট্রির কাজ, ভেঙে পড়ার শঙ্কা
- আমরা শহীদ পরিবার শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে অষ্ট শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি
- ফরিদপুরে অষ্ট শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান
- স্নাতক সমমানের দাবিতে ফরিদপুরে নার্সিং শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি
- বড়াইগ্রামে ফসলী জমিতে পুকুর খনন, একজনের ২ মাসের জেল
- ঢাকার সাবেক এমপি মনু গ্রেপ্তার
- সালথায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ
- চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে সুন্দরবন তীরে জেলে বাওয়ালীদের মানববন্ধন
- পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে ফরিদপুরে ছাত্রদলের বিক্ষোভ
- কবরের ওপর থেকে হাত-পা বাঁধা নারীর মরদেহ উদ্ধার
- কাজলা নদী পাড়ের প্রতিবন্ধী গোপীর সংগ্রামী জীবনের করুণ গল্প
- ঠাকুরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১
- গোপালগঞ্জে নিবন্ধিত ৭৫ মৎস্যজীবীর মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ
- গৃহবধূকে ধর্ষণ ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারন, এসআই’র বিরুদ্ধে মামলা
- চাঁদার টাকা না পেয়ে হত্যার হুমকি, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যবসায়ী
- ‘পলাতক সব এমপি-মন্ত্রীকে আইনের আওতায় আনা হবে’
- সরকারি জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ, ভেঙে দিলো প্রশাসন
- চোরাচালান বন্ধে ভুট্রা চাষিদের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়
- আবু আবদুল্লাহ খানকে অশ্রুশিক্ত বিদায়
- হিমোফিলিয়া রোগ নিয়ে আতঙ্ক নয় প্রয়োজন সতর্কতা
- আশাশুনির খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনস্থলে রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে
- ‘১৫ লাখ অনলাইন রিটার্নের ১০ লাখই শূন্য’
- প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ফল ১৪ ডিসেম্বর
- বাউফলের কাছিপাড়ায় ট্রলি-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১
- কুড়িগ্রামের চিলমারীতে অষ্টমীর স্নান ও মেলা সম্পন্ন
- ঝিনাইদহে মানবপাচার প্রতিরোধে ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভা
- রেকর্ডবুক এলোমেলো করে থাইল্যান্ডকে হারাল বাংলাদেশ
- সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত অজয়
- ফিলিস্তিনের সমর্থনে সারা দেশে বিক্ষোভ আজ
- ‘জামায়াত কারো চোখ রাঙানি পরোয়া করে না’
- ক্ষতি জেনেও অধিক লাভের আশায় তামাক চাষে আগ্রহী রাজবাড়ীর কৃষক
- ইনফিনিক্স নোট ৫০ সিরিজ এখন বাংলাদেশে
- ফুলপুরে মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় সচেতনতামূলক র্যালি
- ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের আশা ছেড়ে দিতে পারে
- ‘দেশের উন্নয়ন পরিস্থিতি প্রশাসনের কাছে জিম্মি ছিল’
- সুবর্ণচরে বিএনপি নেতার শোকসভা অনুষ্ঠিত
- একদিনের বাঙালি: সংস্কৃতির মৌসুমি মুখোশ
- 'নড়াইল, বগুড়া, রাজশাহী পাকবাহিনীর দখলে চলে যায়'