E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বিশ্ব পথশিশু দিবস

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ

২০২৫ এপ্রিল ১১ ১৮:০৮:৫৫
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


পথশিশু নিয়ে লিখতে গেলে, প্রথমেই জানতে হয়, পথ শিশু কারা? এর উত্তরে বলা যায় যে, পথশিশু হলো, সেই সব শিশু, যারা দারিদ্র্যতা বা গৃহহীনতার ফলে নগর, শহর বা গ্রামের রাস্তায় বসবাস করে।প্রতি বছর ১২ই এপ্রিল দিনটিতে "বিশ্ব পথশিশু দিবস ২০২৫" পালিত হবে।দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘পথ নবজাতকেরা আপনজন, হবে না কোনো বিভাজন’। এই দিবসটির লক্ষ্য, বিশ্ব জুড়ে  সেই লক্ষ, লক্ষ শিশু সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যারা রাস্তায় কাজ ও বাস করছে চরম দারিদ্র্যতার সঙ্গে, হিংস্রতা, অমানবিকতা, শোষণ ও দুর্দশা শিকার হয় যারা, তাদের জন্য সমান অধিকার দাবি করা। আসুন আমরা এই পথশিশুদের একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য একত্রিত হই।

এই দিনটি সারা বিশ্বের পথশিশুদের সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলিকে সুযোগ দেয়। সরকার, মানবাধিকার সংস্থা এবং ব্যক্তিদের একাগ্র প্রচেষ্টের মাধ্যমে পথ শিশুদের পুনর্বাসন করা যেতে পারে এবং তাদের ভালবাসার বাড়িতে রাখা যেতে পারে। নিরাপদ বাড়ি খোঁজার পাশাপাশি তাদের শিক্ষিত করা, চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া এবং উন্নত জীবিকার জন্য তাদের দক্ষতা শেখানোও অন্যতম উদ্দেশ্য এই দিনটি পালনের।

১২ই এপ্রিল দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে পথ শিশুদের হয়ে কিছু করার জন্য। তাদের কল্যাণে প্রচার করার এবং জীবনকে উন্নত করার লক্ষ্যে এমন উদ্যোগকে সমর্থন করার একটি সুযোগের দিন হিসেবে মানা হয়।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে জন্ম থেকে ২৮ দিন বয়সী শিশুই নবজাতক। এই বয়সী শিশুর মৃত্যুঝুঁকি সব দেশেই বেশি। বাংলাদেশে এক হাজার শিশু জন্ম নিলে ২০টির মৃত্যু হচ্ছে বয়স ২৮ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই। এই বয়সের শিশুকে রাস্তাঘাটে বা অন্যত্র ফেলে গেলে মৃত্যুঝুঁকি আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আর, ‘কতটা নৃশংস ও পাশবিক হলে একটি সদ্যোজাত শিশুকে ফেলে দেওয়া যায়। এটা দুঃখজনক, মর্মান্তিক। কিন্তু এটাই কঠিন বাস্তবতা।’

আর সামাজিক মর্যাদা, পারিপার্শ্বিকতা, সামাজিক পরিচয়, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মা ও বাবা নবজাতককে ফেলে দেওয়ার মতো অপরাধ করে ফেলেন।তাই সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও এটা নিশ্চিত, দেশের বিভিন্ন জেলায় এমন ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। যে নবজাতকের পরম আদরে মায়ের কোলে থাকার কথা ছিল; তাকে পাওয়া যায় ফুটপাতে, ঝোপঝাড়ে, ডাস্টবিন বা ময়লার ভাগাড়ে, ধানখেতে, সেতুর নিচে বা নদীনালার পাড়ে।গত পাঁচ বছরে প্রায় ১০ হাজার পথশিশুর সন্ধান মিলেছে। তাদের মধ্যে ৮০০ ছিল নবজাতক। ২০২৪ সালে ৯৪টি নবজাতক উদ্ধার হয়। এর মধ্যে ৬৪টি নবজাতক ছিল মৃত। সে হিসাবে ফেলে যাওয়া নবজাতকদের ৬৮ শতাংশ উদ্ধার হচ্ছে মৃত অবস্থায়
পথ শিশুদের উন্নতিকল্পে চারটি ধাপে কাজ করা হয়, যেমন:-

১. পথ শিশুদের জন্য সমতার আহ্বান জানিয়ে প্রতিটি সরকারের কাছে একটি বার্তা পাঠানো চেষ্টা।

২. সমতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া।

৩. প্রতিটি শিশুকে রক্ষা করা।

৪. পথশিশুদের সমস্যার সমাধান এবং তা বস্তবায়িত করা।

পথ শিশুদের মুখোমুখি হওয়া সমস্যা সম্পর্কে জানতে, সচেতনতা বাড়াতে ও তাদের অধিকারের পক্ষে ওকালতি করতে এছাড়াও তাদের জীবনকে উন্নতি করার লক্ষ্যে যে উদ্যোগগুলিকে সমর্থন করে সেগুলি সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিরা একত্রিত হবে।

এই দিনটির প্রধান উদ্দেশ্য হলো, পথ শশিশুদের হওয়া চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরা এবং কৌশলগুলি প্রকাশ করার উপর প্রচার করা, যা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা এবং শোষণ থেকে সুরক্ষা প্রদানের সহায়তা করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রত্যেকটা স্মরণীয় দিবসের মতোই এই স্মরণীয় দিবসেরও একটি ইতিহাস আছে। ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সংক্রান্ত একটি কনভেনশনের আয়োজন করে। কনভেনশনে যা আলোচনা হয়েছিল, সেই অনুসারে বিশ্বের সমস্ত শিশুর যে অধিকার গুলি একটি স্থিতিশীল প্রেমময় এবং লালন-পালন পরিবেশের অধিকারের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল। কিন্তু পথশিশুরা স্বাস্থ্য, সেবা, পুষ্টি পরিষ্কার জল এবং বৈদ্যুতিক শক্তি সমান সুযোগ সমান মর্যাদা এবং স্বাধীনতায় বসবাস করতে পারে না।রাস্তায় বসবাসকারী শিশুদের উক্ত অধিকার নেই।

রাস্তার শিশুদের জন্য কনসোর্টিয়াম সিএসসির মতো সংস্থাগুলি মনে করে, শিশুরা যে বিপদ গুলির মধ্যে নিজেদের খুঁজে পায়, সেগুলি দূর করার জন্য চারটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা পূর্বেই আলোচনা করেছি।

বর্তমান পরিসংখ্যান অনুসারে সারাবিশ্বে ১৫০ মিলিয়ন শিশু রাস্তায় বাস করে। কিছু শিশু তাদের পরিবারের সাথে রাস্তায় থাকে, অন্যরা তাদের বেশিরভাগ সময় রাস্তার খাবার এবং অর্থের জন্য ভিক্ষা করে কাটায়, কিন্তু রাতে বাড়িতে ফিরে আসে। কিছু শিশু আবার রাস্তায় অনাথ হিসেবে বাস করে, যার পরিবার নেই, বলা বাহুল্য এই শিশুরা অনেক মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত।

শিশুদের পথশিশু হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলির মধ্যে একটি হলো যুদ্ধ এবং সংঘাত দ্বারা প্রভাবিত একটি পরিস্থিতিতে বসবাস করা। এই পরিস্থিতিতে শিশুরা হয় তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বা তাদের পরিবারের সদস্যরা মারা গেছে। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ইসরাইল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধে শিশুরা তাদের আপনজনদের হারিয়ে পথশিশুতে পরিণত হয়েছে।

কিছু শিশু যুদ্ধে তো কিছু শিশু স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, কারণ তারা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিত হয়। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে তাদের পরিবারের দ্বারা প্রত্যাখ্যান, স্বাস্থ্য সমস্যা বা অপরাধ মূলক কার্যকলাপে বাধ্য হওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

পরিশেষে বলতে চাই, দেশের পথ শিশুদের সুরক্ষা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিবছর আমাদের দেশে পালিত হয় পথ শিশু দিবস। আর পথশিশুরা কারও না কারও সন্তান, আত্মীয়-স্বজন। আল্লাহর সৃষ্টি সেরা জীব মানুষ হওয়ার কারণে পথশিশুদেরও রয়েছে ন্যায্য অধিকার। স্বাধীন দেশে এ পথশিশুদেরও সমান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বড় হওয়ার অধিকার আছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এ মৌলিক চাহিদাগুলো যথোপযুক্তভাবে পাওয়ার অধিকার তাদেরও আছে। পথিশিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে পালিত হোক জাতীয় পথশিশু দিবস।

লেখক: কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

১৩ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test