E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

তুলসী গাবার্ডের দুশ্চিন্তা বনাম বাংলাদেশের বাস্তবতা

২০২৫ মার্চ ২০ ১৭:২৫:৩৫
তুলসী গাবার্ডের দুশ্চিন্তা বনাম বাংলাদেশের বাস্তবতা

মীর আব্দুল আলীম


বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশিদের চিন্তার শেষ নেই! এবার মঞ্চে আমেরিকান প্রতিনিধি তুলসী গাবার্ড, যিনি এমনভাবে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বললেন, যেন বাংলাদেশের জনগণ তার ‘গার্জিয়ানশিপ’ চাইছে! বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই নাটক, আর সেই নাটকে বিদেশি চরিত্র না থাকলে যেন জমেই না! এবার মঞ্চে হাজির আমেরিকান প্রতিনিধি তুলসী গাবার্ড, যিনি গুজব রটেছেন বাংলাদেশ নাকি ইসলামিক রাষ্ট্র হতে যাচ্ছে! তুলসীর বক্তব্য শুনে মনে হলো, তিনি আমাদের বিচারব্যবস্থা চালানোর নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়ে গেছেন! তিনি নাকি বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন! বাহ, যুক্তরাষ্ট্র যেখানে নিজেদের গণতন্ত্র বাঁচাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের ‘গণতন্ত্র শেখাতে’ চলে এলেন! আর ড. ইউনুসকে নিয়ে এমন মাতামাতি করছেন, যেন তিনি একমাত্র নিরপরাধ ব্যক্তি আর বাকিরা সবাই খলনায়ক! তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চলছে এবং ইসলামি সন্ত্রাসবাদীরা খেলাফতের আদর্শে দেশ শাসনের স্বপ্ন দেখছে। গ্যাবার্ডের এই মন্তব্য শুধু বাংলাদেশের সরকারকে নয়, দেশের সাধারণ মানুষকেও বিব্রত করেছে। বাংলাদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে এ ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এ ধরনের মন্তব্যের উদ্দেশ্য কী? এটি কি বাস্তবতার প্রতিফলন নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার?

বাংলাদেশের সরকারও তাতে চুপ থাকেনি, তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দিল-“ধন্যবাদ, তুলসী, কিন্তু আমাদের আইন-আদালত চালানোর জন্য বাইরের অভিভাবক দরকার নেই!” তবুও তুলসী ভাবছেন, বাংলাদেশের মানুষ নাকি সরকার-বিরোধী আন্দোলনে নেমে পড়বে! আফসোস, বাস্তবতা হলো-এখানে মানুষ গার্মেন্টসের ওভারটাইম, বাজারের দাম আর ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে বেশি চিন্তিত! তার ওপর আবার ‘বাংলাদেশ ইসলামিক রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে’-এমন এক বোকামিপূর্ণ তত্ত্বও তুলসীর মাথায় এসেছে! সংবিধান পড়ে দেখলে বুঝতেন, বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, এখানে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে থাকে। কিন্তু নাহ, কিছু লোকের কাজই হলো মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অযথা নাক গলানো! তুলসী গাবার্ডের মনে হয় বাংলাদেশ এখনো আমেরিকার কোনো উপনিবেশ! দুঃখিত, ম্যাডাম, এই দেশ স্বাধীন, আমাদের বিচারব্যবস্থা, রাজনীতি আর ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার আমাদেরই! আপনাদের ‘গার্ডিয়ানশিপ’ আমরা নিতে রাজি নই!

সম্প্রতি আমেরিকান প্রতিনিধি তুলসী গাবার্ড কিছু মন্তব্য করেছেন, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে সরকারের আইনি পদক্ষেপ নিয়ে তার উদ্বেগ ও সমালোচনা সরকার পক্ষ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। পাল্টা বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট করেছে যে, এটি দেশীয় আইন ও বিচার ব্যবস্থার অধীন একটি বিষয়, যেখানে বাইরের হস্তক্ষেপ অপ্রাসঙ্গিক। এদিকে, বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোর সম্ভাবনা নিয়ে যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, সেটি বাস্তবতা বিবর্জিত। বাংলাদেশের সংবিধান স্পষ্টভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা নিশ্চিত করেছে এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও সে পথেই এগোচ্ছে।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র: গ্যাবার্ড তার মন্তব্যে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন, যা বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না। বাংলাদেশ বরাবরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। যদিও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে, তা রাজনৈতিক ও সামাজিক দ্বন্দ্বের কারণে হয়ে থাকে, ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে নয়। সত্য হলো, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় মুসলমানদের থেকেও নিরাপদ জীবনযাপন করে। শত শত বছর ধরে এ দেশে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বসবাস করছে, একে অপরের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নিচ্ছে, যা বিশ্বের অনেক দেশেই বিরল। রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিরোধের কারণে কিছু সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্দিষ্ট হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনার অধিকাংশই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ধর্মীয় বিদ্বেষের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিটি ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করেছে। তাই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতিকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা আসলে বাস্তবতাকে ধামাচাপা দেওয়ার শামিল।

বাংলাদেশ ও জঙ্গিবাদ অপপ্রচারের বাস্তবতা: তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের অন্যতম বিতর্কিত দিক হলো বাংলাদেশের সাথে ‘ইসলামিক খেলাফত’ ও জঙ্গিবাদের সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টা। এটি একেবারেই ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি প্রচারণা। বাংলাদেশ সরকার এবং দেশের মানুষ বরাবরই উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ দমনে ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের ফলে জঙ্গি কার্যক্রম প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ যেখানে এখনো জঙ্গিবাদ দমনে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তাছাড়া, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে কোনো উগ্রবাদী গোষ্ঠী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার সক্ষমতা বা সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা রাখে না। দেশের সাধারণ মানুষ কখনো জঙ্গিবাদকে সমর্থন করেনি, বরং প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে বাংলাদেশকে ইসলামি খেলাফতের আদর্শের সঙ্গে যুক্ত করা একেবারেই কল্পনাপ্রসূত।

প্রোপাগান্ডার পেছনের উদ্দেশ্য: তুলসী গ্যাবার্ডের এই বক্তব্য পার্শ্ববর্তী দেশের স্বার্থরক্ষার একটি প্রচেষ্টা হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। ভারতের কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের উৎস হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে, যা মূলত আঞ্চলিক রাজনীতির অংশ। এই প্রচারণার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে দুর্বল দেখানোর পাশাপাশি ভারতের স্বার্থ রক্ষার প্রচেষ্টা চালানো হতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, গ্যাবার্ডের এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি, যার ভূরাজনৈতিক গুরুত্বও ক্রমেই বাড়ছে। তাই কিছু মহল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে দেশটিকে আন্তর্জাতিকভাবে কোণঠাসা করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশে ইসলামি খেলাফতের কোনো ভিত্তি নেই। বাংলাদেশের জনগণ বরাবরই গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং স্বাধীনতার আদর্শকে ধারণ করে এসেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশের মানুষ মৌলবাদীদের প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। তাই বাংলাদেশকে ইসলামিক খেলাফতের সঙ্গে যুক্ত করার প্রচেষ্টা শুধু ভুলই নয়, এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ইতিহাসের প্রতি অসম্মানজনক।

রাজনৈতিক পরিবর্তন ও প্রতিহিংসার প্রতিফলন: বাংলাদেশে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশে এক ধরনের প্রতিহিংসার রাজনীতি চর্চিত হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার নামে কিছু অসাধু নেতা লুটপাট, ভাঙচুর এবং সহিংসতা চালাচ্ছে, যা বর্তমান ড. ইউনুস সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পরপরই দেখা যায়, অতীতের ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। তারা নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছে, যা দেশের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা হয়েছে এবং ‘ডেভিল হান্ট’ নামে একটি বিশেষ যৌথ বাহিনী গঠন করা হয়েছে, যা সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে নিরলসভাবে কাজ করছে। সরকারের এই কঠোর পদক্ষেপের ফলে ইতোমধ্যেই অপরাধীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, শিগগিরই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে এবং সন্ত্রাসী ও লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও লুটপাটের এই ধারা বন্ধ করতে হলে সরকারকে শুধু কঠোর আইন প্রয়োগ নয়, বরং রাজনৈতিক শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। দেশের স্বার্থে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ একটি সুশৃঙ্খল ও উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যেতে পারে।

ইউনুস সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার ষড়যন্ত্র: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও অপপ্রচার নতুন কিছু নয়। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে অস্থিতিশীল করার প্রয়াসও চালানো হয় নানা মহল থেকে। বর্তমান ইউনুস সরকারকেও এক ধরনের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যা শুধু সরকারের জন্য বিব্রতকর নয়, বরং গোটা দেশের অগ্রযাত্রার জন্য হুমকিস্বরূপ। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। কিন্তু দেশের উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কিছু মহলের স্বার্থের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই সরকারকে বিব্রত করতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের অন্যতম লক্ষ্য হলো সরকারকে বেকায়দায় ফেলে জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করা, দেশকে একটি অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া এবং বিদেশি মহলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।

এই ষড়যন্ত্রে বিভিন্ন পক্ষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু নেতাকর্মী, বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং আন্তর্জাতিক কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এই চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত। তারা বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। সরকারকে বিব্রত করতে ষড়যন্ত্রকারীরা নানা পদ্ধতি অবলম্বন করছে। প্রথমত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া খবর ও গুজব ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ তুলে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম, ধর্মীয় উসকানি ও সহিংসতা ছড়িয়ে জনগণের মাঝে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করাও ষড়যন্ত্রের অন্যতম কৌশল। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিছু বিদেশি মহল বাংলাদেশকে ‘অপরাধপ্রবণ দেশ’ বা ‘চরমপন্থার উত্থানের দেশ’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে। এ ধরনের অপপ্রচার সরাসরি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হলে সরকারকে অবশ্যই কৌশলী হতে হবে এবং জনগণকে সচেতন করতে হবে। প্রথমত, গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সক্রিয় করতে হবে, যাতে যেকোনো নাশকতা বা সহিংসতা দমন করা যায়। তৃতীয়ত, জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে তারা কোনো ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হয় এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে পারে। সরকারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও নীতিনির্ধারকদের সামনে দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হবে। বর্তমান সরকারকে বিব্রত করতে যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা শুধু রাজনৈতিক চক্রান্ত নয়, বরং এটি গোটা দেশের অগ্রগতির বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত অপপ্রয়াস। জনগণ যদি সচেতন থাকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক হয় এবং সরকার যদি দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়, তবে এই ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এবং কোনো অপশক্তিই এই অগ্রযাত্রাকে রুখতে পারবে না।

বাংলাদেশকে ‘ইসলামি খেলাফতের’ সঙ্গে যুক্ত করার প্রচেষ্টা শুধু ভিত্তিহীন নয়, এটি একটি সুপরিকল্পিত অপপ্রচার। সংখ্যালঘু নিপীড়ন ও জঙ্গিবাদ ইস্যুতে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার একটি রাজনৈতিক কৌশল। বাংলাদেশ বরাবরই চরমপন্থার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সন্ত্রাসবাদ দমনে কাজ করছে। তাই এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে একসঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সচেতন থাকতে হবে। এ ধরনের ভিত্তিহীন মন্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা হলেও বাস্তবে বাংলাদেশ তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। দেশকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কূটচালে ফেলে দেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টাকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করাই হবে সঠিক পথ।

লেখক : সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।

পাঠকের মতামত:

২২ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test