E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ঈদ বাজারে সতর্কতা জরুরি

২০২৫ মার্চ ১৮ ১৭:৩৭:১৯
ঈদ বাজারে সতর্কতা জরুরি

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


ঈদ মুসলমানদের জন্য একটি পবিত্র এবং আনন্দের উৎসব। এ সময় কেনাকাটা করা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। তবে ঈদ বাজার মানেই প্রচণ্ড ভিড়, ক্রেতাদের ঢল, এবং ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা। এই সময়ে অসতর্ক হলে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে, যেমন দাম বেশি নেওয়া, প্রতারণা, চুরি, পকেটমারদের দৌরাত্ম্য, নিম্নমানের পণ্য বিক্রি, ট্রাফিক জ্যাম ইত্যাদি। তাই ঈদ বাজারে কেনাকাটা করতে গেলে আমাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যাতে ঈদের আনন্দ যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয়।

ঈদ বাজারে কেন সতর্কতা জরুরি?

ঈদ বাজারের সময় মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে যায় এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী, চোর এবং প্রতারকরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। নিচে কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো, কেন এই সময় সতর্ক থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন—

মূল্যবৃদ্ধি ও অতিরিক্ত ব্যয়

ঈদের সময় ব্যবসায়ীরা অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।

কিছু দোকানদার সাধারণ মানের পণ্য উচ্চ দামে বিক্রি করেন।

বিক্রেতারা "ঈদ অফার" বলে প্রচার করে কিন্তু বাস্তবে দাম কমানোর পরিবর্তে বাড়িয়ে দেন।

নিম্নমানের ও নকল পণ্য

ঈদের সময় বিভিন্ন নকল প্রসাধনী, পোশাক, খাদ্যপণ্য ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী বাজারে আসে।

কিছু বিক্রেতা নিম্নমানের কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে।

চুরি ও প্রতারণা

বাজারে প্রচুর ভিড় থাকায় চোরেরা সহজেই ক্রেতাদের টার্গেট করতে পারে।

পকেটমারদের দৌরাত্ম্য এই সময়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভুল মাপ ও ভেজাল পণ্য বিক্রি করে।

যানজট ও পরিবহন সংকট

বাজারের চারপাশে অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়।

অনেক জায়গায় রিকশা ও অন্যান্য যানবাহনের বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়।

গণপরিবহনেও অতিরিক্ত চাপ থাকে, যার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।

সাইবার প্রতারণা ও অনলাইন শপিং বিপদ

অনেকেই ঈদের বাজারের ভিড় এড়াতে অনলাইনে কেনাকাটা করেন, কিন্তু এখানে প্রতারণার ঝুঁকি বেশি থাকে।

অনেক ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটে পণ্যের আসল ছবি দেখিয়ে ভিন্ন মানের বা নকল পণ্য পাঠানো হয়।

অনলাইন পেমেন্টেও জালিয়াতির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ঈদ বাজারে কীভাবে সতর্ক থাকা যায়?

নিচে কিছু কার্যকরী সতর্কতা দেওয়া হলো, যা মেনে চললে ঈদ বাজারে নিরাপদ কেনাকাটা করা সম্ভব—

১. সঠিক বাজেট ও পরিকল্পনা করুন

ঈদের কেনাকাটার জন্য আগে থেকেই একটি বাজেট ঠিক করে নিন।

অপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার প্রবণতা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

বিকল্প বাজার খুঁজে নিন এবং দরদাম সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

২. সঠিক দোকান ও নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা নির্বাচন করুন

শুধুমাত্র পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য দোকান থেকে কেনাকাটা করুন।

বিশেষ করে প্রসাধনী ও ইলেকট্রনিক পণ্য কেনার সময় সঠিক ব্র্যান্ডের পণ্য কিনুন।

নিম্নমানের বা নকল পণ্য থেকে দূরে থাকুন এবং সম্ভব হলে রসিদ সংগ্রহ করুন।

৩. দরদাম করুন ও মূল্য যাচাই করুন

বিভিন্ন দোকানে গিয়ে একই পণ্যের দাম যাচাই করুন।

পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং বিক্রেতার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিন।

অস্বাভাবিক কম দামের পণ্যে আকৃষ্ট হয়ে প্রতারণার শিকার হবেন না।

৪. চুরি ও প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকুন

বাজারে গেলে ব্যাগ বা মানিব্যাগ নিরাপদ স্থানে রাখুন।

মোবাইল ফোন, টাকা ও মূল্যবান জিনিস সাবধানে রাখুন।

অপরিচিত কারো দেওয়া খাবার বা পানীয় গ্রহণ করবেন না।

৫. অনলাইন কেনাকাটায় সতর্কতা

কেবলমাত্র বিশ্বস্ত এবং ভালো রিভিউ আছে এমন ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজ থেকে কেনাকাটা করুন।

ক্যাশ অন ডেলিভারি অপশন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

মূল্য পরিশোধের আগে পণ্য পরীক্ষা করুন।

৬. যানজট এড়ানোর কৌশল

সম্ভব হলে ঈদের কয়েকদিন আগে কেনাকাটা শেষ করুন।

ভিড় এড়িয়ে চলতে বিকেল বা রাতের পরিবর্তে সকালবেলা বাজার করুন।

ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে গণপরিবহন বা রিকশা ব্যবহার করুন।

৭. স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

করোনাসহ অন্যান্য রোগের সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক ব্যবহার করুন।

প্রচণ্ড ভিড় এড়িয়ে চলুন এবং সম্ভব হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।

পানি পান করুন এবং দীর্ঘক্ষণ কেনাকাটা করার ফলে ক্লান্তি এড়ানোর চেষ্টা করুন।

ঈদ বাজারে প্রশাসনের ভূমিকা

সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার জন্য সরকারের কিছু ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন—

বাজার নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা উচিত।

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা দরকার।

বাজারে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত।

অনলাইনে প্রতারণা রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

পরিশেষ বলতে চাই, ঈদ বাজার আনন্দের হলেও এটি বিভিন্ন বিপদের কারণ হতে পারে, যদি আমরা সচেতন না থাকি। অযথা অতিরিক্ত ব্যয়, চুরি, প্রতারণা, যানজট এবং নিম্নমানের পণ্য কেনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের সঠিক পরিকল্পনা এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রশাসন, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি নিরাপদ ও সুন্দর ঈদ বাজার নিশ্চিত করা সম্ভব। ঈদের আনন্দ যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য সবাইকে সাবধান ও সচেতন থাকতে হবে।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

১৮ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test