E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য মদনেরপাড়া ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে একদিন

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২১ ১৭:৫৯:২১
দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য মদনেরপাড়া ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে একদিন

রহিম আব্দুর রহিম


গল্পটা মজার, কোন এককালে মদন নামের একব্যক্তি পঞ্চায়েতের শাসক ছিলেন। তাঁর এলাকার জনমানুষ তাঁকে প্রচুর সম্মানও করতেন। কারণে-অকারণে, বিপদে- আপদে, অভাব-অনটনে মদন ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়াতেন। মানুষের ভালো বাসায় এলাকাটির নামকরণ হয়,‌ ‘মদনেরপাড়া’। সবুজ-শ্যামলিমায় ভরা প্রকৃতির অমায়িক   মদনেরপাড়া গ্রামটি, গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। জেলা শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরের গ্রামটির শোভাবর্ধনে যুক্ত হয়েছে আধুনিক যুগের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। গাইবান্ধা -বালাসী সড়ক ঘেঁষা পলাশবাড়ী থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে, বালাসীঘাট থেকে আনুমানিক ২ কিলোমিটার পশ্চিমে যার অবস্থান। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়। 

৭ ফ্রেবুয়ারি পঞ্চগড় লীড বিনোদন ও সমাজসেবী শিশু-কিশোর সংগঠন, ষড়ঋতু জগদল এর ১২ সদস্যের একটি দল ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার পরিদর্শনের উদ্দেশ্য রওনা হই। ভোর পাঁচটায় আমাদের পরিবহন, পঞ্চগড় থেকে সেন্টারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সকাল সাড়ে ন'টার মধ্যে আমরা কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছে যায়। সেন্টারটি বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত বিধায়, অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হয়। যে কারণে 'Daily NewAge' ও 'আমার দেশ' পত্রিকার গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি, বন্ধুবর সাংবাদিক শামীম উল হক শাহিনের সহযোগিতায় আগের দিনই অনুমতি নিয়ে রাখা হয়। অপরদিকে আমাদের শিক্ষা যাত্রায় সর্বদায় অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহ দিয়ে দলটির গতি বৃদ্ধি করেন বিজিবি'র পঞ্চগড় ১৮ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনির এবং পঞ্চগড় জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এস এম শফিকুল ইসলাম।

অনবদ্য স্থাপনাটি একাধিকবার বিদেশি পদকে ভূষিত হয়েছে। মাটির নিচে অবস্থিত স্থাপত্যটি কৃত্রিম উপায়ে অত্যন্ত দরদী আদলে নির্মিত। ভবনের ছাদ ভূমি সমতল।ছাদে শোভা পাচ্ছে নানা জাতের ঘাস।ডেকারেশনটা প্রায় মহাস্থানগড়ের বৌদ্ধবিহারের মতই। যেটি দেখলে সবাই অভিভূত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এই ভবনে চলে দাপ্তরিক নানা কর্মকান্ড। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাসহ যেখানে রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র; চলে অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া বিনোদন। ভেতরের সব কিছুই আর্কষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন।সেন্টারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, কোলাহল মুক্ত পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়-হাওয়া থেকে নিরাপদ ও প্রখর তাপসহনশীল।

২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর মদনেরপাড়া গ্রামের প্রায় আটবিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই স্থাপত্যের উদ্বোধন হয়। ভবনটি ৩২ হাজার স্কয়ার বর্গফিট জুড়ে বিস্তৃণ। প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেন্টারের নির্মাণ কাজ করে "আরবান কন্সটেলেশন" নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যাতে সময় লেগেছে প্রায় দুইবছর। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে রয়েছে দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এর একটি এসি, অন্যটি ননএসি। দুটি কেন্দ্র এক সাথে প্রায় ২০০ জন প্রশিক্ষণ নিতে পারে। আবাসিক কক্ষ ২৪টি, এর মধ্যে এসি ৫টি, বাকীসব ননএসি। সবমিলিয়ে রয়েছে ৫০ জনের আবাসন ধারণ ক্ষমতা। একসঙ্গে ৭০ জনের খাবার ব্যবস্থাও সম্ভব। পয়ঃপ্রণালি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে ৫টি নর্দমা।

যারা আবাসিক থাকে তাদের জন্য ৫ শতাধিক বই নিয়ে গঠিত একটি লাইব্রেরি এবং খেলাধুলার ব্যবস্থা।কেরাম, দাবা, ব্যাডমিন্টন চলে মৌসুম অনুযায়ী। রয়েছে আধুনিক ইন্টারনেট সুবিধা এবং উন্নতমানের মিউজিক সিস্টেমের সুযোগ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে জন্য রিজার্ভ রেখেছে নিজস্ব জেনারেটর। সৌন্দর্য মন্ডিত স্থাপত্য নির্মাণ করায় ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার (Friendship Center) টিকে লন্ডন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্কিটেক্স রিভিউ ২০১২ সালে এআরপ্লাসডি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। সেন্টারে স্থপতি কাশেফ চৌধুরী পেয়েছেন, সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (এককেডিএন) কর্তৃক 'আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার' পদক। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারে ৯০ শতাংশ সময় নিজস্ব কোম্পানির প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। স্থানীয় ইটের গাঁথুনি দ্বারা নির্মিত ভবনটি দেখার জন্য প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কৌতুহলী জনমানুষ আসা যাওয়া করে। এই সেন্টার পর্যটকদের জন্য শুধুই যে বিনোদন তা নয়, এটা হতে পারে অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয় কোন নতুন আবিষ্কারের প্রখর প্রেরণা।

লেখক : নাট্যকার ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test