অপচিকিৎসা রোধে প্রয়োজন সেনা অভিযান

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
অপচিকিৎসা, বিশেষত গ্রামীণ এবং প্রান্তিক অঞ্চলে, বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং উদ্বেগজনক সমস্যা। অযোগ্য চিকিৎসক, পেশাদার চিকিৎসকের অভাব এবং সচেতনতার অভাবের কারণে সাধারণ মানুষ প্রায়ই চিকিৎসার নামে প্রতারণার শিকার হন। অপচিকিৎসা মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়। এই সমস্যাটি এতটাই বিস্তৃত যে, একে নির্মূল করার জন্য শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা এই ক্ষেত্রে কার্যকরী সমাধান হতে পারে। সেনাবাহিনী তাদের সুশৃঙ্খলতা, সংগঠনের দক্ষতা এবং কঠোর নিয়মানুবর্তিতার কারণে অপচিকিৎসা রোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
অপচিকিৎসার বর্তমান প্রেক্ষাপট
অপচিকিৎসা মূলত দুটি প্রধান উপায়ে ঘটছে: অযোগ্য ব্যক্তি দ্বারা চিকিৎসা প্রদান: বাংলাদেশে গ্রাম এবং শহরতলিতে অনেক ভুয়া ডাক্তার আছেন যারা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তারা মানুষের অসহায়ত্ব এবং অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে আর্থিকভাবে শোষণ করেন।
ভুল ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি: অনেক সময় অনুমোদিত চিকিৎসকও জেনে বা না জেনে ভুল ওষুধ বা চিকিৎসা দেন, যার ফলে রোগীর স্বাস্থ্যক্ষতি হয়।
সেনা অভিযানের প্রয়োজনীয়তা
অপচিকিৎসা রোধে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:
সুশৃঙ্খল ও দক্ষ কার্যক্রম পরিচালনা: সেনাবাহিনী তাদের সুশৃঙ্খলতার জন্য পরিচিত। তারা সঠিক পরিকল্পনা, সমন্বয় এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম।
আইন প্রয়োগ ও নজরদারি: সেনাবাহিনী কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে পারে, যা অপচিকিৎসা প্রতিরোধে সহায়ক হবে।
সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা রাখে। তাদের উপস্থিতি অপচিকিৎসকদের ভীত ও প্রতিহত করতে পারে।
দুর্গম অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা: সেনাবাহিনী প্রান্তিক ও দুর্গম এলাকায় সহজেই পৌঁছাতে পারে, যেখানে অপচিকিৎসা বেশি ঘটে।
সেনাবাহিনীর ভূমিকা
সেনাবাহিনী কিভাবে এই সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে, তা কয়েকটি ধাপে আলোচনা করা হলো:
ক. সচেতনতা বৃদ্ধি
সেনাবাহিনী স্কুল, কলেজ এবং কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি চালাতে পারে।
স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং মানুষকে অপচিকিৎসার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানানো যেতে পারে।
ভুয়া চিকিৎসকদের শনাক্ত করতে জনগণকে সচেতন করা হবে।
খ. ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযান
সেনাবাহিনী স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ভুয়া চিকিৎসকদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে পারে।
ভুয়া হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া।
অপচিকিৎসা প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা।
গ. সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা
সেনাবাহিনীর উদ্যোগে সশস্ত্র বাহিনীর স্বাস্থ্যসেবা ইউনিটগুলোর মাধ্যমে প্রান্তিক এলাকায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করা।
সঠিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের সম্পৃক্ত করা এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সাথে সমন্বয় সাধন।
দূরবর্তী এলাকাগুলোতে সাময়িকভাবে সেনা পরিচালিত মেডিকেল সেন্টার স্থাপন।
ঘ. আইন প্রয়োগ
সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে চিকিৎসা খাতে জালিয়াতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে।
ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
সেনা অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ আসতে পারে:
বিরোধী প্রতিক্রিয়া: কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং চক্র এই অভিযানের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। তবে সেনাবাহিনীর কঠোর ভূমিকা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে।
আইনগত জটিলতা: সেনাবাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আইনগত কাঠামো প্রয়োজন। এজন্য সরকারকে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
মানুষের আস্থা অর্জন: অনেকেই সেনা অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান হতে পারেন। তাদের আস্থা অর্জনের জন্য স্বচ্ছতা বজায় রাখা জরুরি।
সেনাবাহিনীর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
অপচিকিৎসা রোধে সেনাবাহিনী শুধু অস্থায়ী পদক্ষেপ নেবে না; বরং একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এ পরিকল্পনার মধ্যে থাকতে পারে:
স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো উন্নয়ন: গ্রামীণ এবং প্রান্তিক এলাকায় সরকারি হাসপাতাল স্থাপন।
প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা: পেশাদার চিকিৎসক তৈরির লক্ষ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ।
নিয়মিত তদারকি: সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত একটি নিয়মিত তদারকি ব্যবস্থা, যা নিশ্চিত করবে যে ভুয়া চিকিৎসা নতুন করে শুরু না হয়।
অন্যান্য অংশীদারদের সম্পৃক্ততা
সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অপচিকিৎসা রোধে অন্যান্য অংশীদারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা হলো:
স্থানীয় প্রশাসন: সেনাবাহিনীর সাথে স্থানীয় প্রশাসন সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করতে পারে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়: চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করতে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
গণমাধ্যম: অপচিকিৎসা নিয়ে গণমাধ্যম সচেতনতা বাড়াতে পারে এবং জনগণকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারে।
এনজিও এবং স্থানীয় সংগঠন: এরা স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
সেনা অভিযানের সুফল
সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পরিচালিত একটি সঠিক এবং সুসংগঠিত অভিযান নিম্নলিখিত সুফল আনতে পারে:
সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুরক্ষিত হবে। ভুয়া চিকিৎসা চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে এবং তারা সঠিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা এবং স্বচ্ছতা ফিরে আসবে।
পরিশেষে বলতে চাই , অপচিকিৎসা রোধে সেনাবাহিনীর অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে ভুয়া ডাক্তার ও হাসপাতাল চিরতরে বন্ধ করা সম্ভব। তবে এই উদ্যোগ সফল করতে সরকার, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, বরং মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করাও অত্যন্ত জরুরি। সেনাবাহিনীর দক্ষতা, শৃঙ্খলা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকার মাধ্যমে বাংলাদেশে অপচিকিৎসা একটি অতীত সমস্যা হয়ে উঠতে পারে।
লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
পাঠকের মতামত:
- ঘরে ঘরে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ে
- ‘সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ’
- কিউইদের স্বপ্ন ভেঙে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা ভারতের
- রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা
- ঈশ্বরদীতে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
- সোনারগাঁয়ে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে
- খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় সালথায় ইফতার ও দোয়া মাহফিল
- ‘আমরা ভাষা হারিয়ে ফেলেছি’
- দুই প্রকল্পের কাজ ১০ বছর আটকে থাকায় প্রধান উপদেষ্টার উষ্মা প্রকাশ
- ধর্ষণ-নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে খোলা হচ্ছে ‘হটলাইন’
- ১২ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
- ‘১৫ রমজানের আগে রাস্তা সংস্কার করা হবে’
- ‘ফরিদপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশ সর্বদা সতর্ক রয়েছে’
- আছিয়া ধর্ষণের প্রতিবাদে জামালপুরে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন
- সাতক্ষীরায় স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার
- নড়াইলে বিরোধপূর্ণ চরের জমি দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংর্ষের আশঙ্কা
- ডাকাতদের গ্রেফতার ও সুবিচার প্রাপ্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
- নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠক সহ দুইজন আটক
- ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের র্যালি প্রতিবাদ সমাবেশ
- সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ওকালত আলীর একদিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর
- বিষ খাইয়ে সৎ মেয়েকে হত্যা মামলায় মা গ্রেপ্তার
- গৌরনদীতে ইয়াবাসহ বিক্রেতা গ্রেপ্তার
- ছাত্রদল নেতার হাত ও পায়ের রগ কর্তন করেছে বিএনপি নেতা
- যুবদল নেতা হত্যায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা গ্রেপ্তার
- বিএনপির ব্যানার টাঙিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা
- ড. ইউনূস কি জনগণকে পাশে পাবেন না?
- ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনে রসাটমের নতুন প্রযুক্তি
- বাংলাদেশের সামনে এখন অনেক কাজ
- ‘ছোট ছড়ায় বড় কথা’ শেখ হাসিনার ছড়া
- তুমি যে সেনা কর্মকর্তার ভাঙা ঘর জোড়া লাগিয়েছিলে, সেই তোমাকে সপরিবারে খুনের উস্কানিদাতা! কী কঠিন হৃদয় তার! এই জন্যই বুঝি তিনি সানগ্লাসে চোখ ঢেকে রাখতেন; চোখ দেখলেও নাকি খুনী চেনা যায়!
- নির্ভার, তবুও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ইকবাল হোসেন অপু
- পালং-জাজিরায় দলীয় বিভেদ নিরসন করে চলেছেন অপু
- অপচিকিৎসা রোধে প্রয়োজন সেনা অভিযান
- রাজশাহীতে অটোরিকশায় ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ৫
- বাবাকে আজ বড্ড বেশি মনে পড়ছে
- ঝালকাঠি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে ৬ প্রার্থী নিয়ে ব্যাপক আলোচনা
- যুক্তরাষ্ট্রে নারীর হিজাব খুলে ফেলায় ৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
- প্ররক্ষা নির্দেশিকা হাইকোর্টে স্থগিত, স্বরাষ্ট্র সচিবকে তলব
- দুই মাস বন্ধ থাকার পর সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা শুরু
- জামিন চাইলেন সাদপন্থীদের প্রধান মুরব্বিসহ ২৫ জন
- ‘বরেণ্য নারীদের লেখায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ বই প্রকাশ
- বঙ্গবন্ধু
- দুই নারী কসাই, আলোচনা সর্বত্রই!
- লিভার রোগের ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজন সচেতনতা
- ‘লুটপাটের টাকা ফেরত আনতে হবে’