E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

সড়ক হত্যা দিবস: কারণ ও প্রেক্ষাপট

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১১ ১৭:২৯:২৪
সড়ক হত্যা দিবস: কারণ ও প্রেক্ষাপট

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


আজ মঙ্গলবার সড়ক হত্যা দিবস ২০২৫। সড়ক হত্যা দিবস মূলত একটি প্রতীকী উপলক্ষ, যা সমাজে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান হার এবং এর পিছনের কারণগুলোকে তুলে ধরে। এটি সড়ক নিরাপত্তার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারি নীতিমালা পুনর্বিবেচনা, এবং জনসাধারণের সচেতনতার অভাবের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য পালিত হয়। এ দিবসটি বিশেষত বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ভয়াবহতা ও এর সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়।

২০২৪ সাল ও ২০২৫ সালের বছরের প্রথম মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের পরিসংখ্যান

২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সারাদেশে ৮ হাজার ৫৪৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছে ১২ হাজার ৬০৮ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৩২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৫৭০ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন ৩ হাজার ১৫১ জন।আর ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ১.৫৪ শতাংশ, নিহতের সংখ্যা ৭.৫০ শতাংশ এবং আহতের সংখ্যা ১৭.৭৩ শতাংশ বেড়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে রেলপথে ৪৯৭টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত এবং ৩১৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১১৮টি দুর্ঘটনায় ১৮২ জন নিহত, ২৬৭ জন আহত এবং ১৫৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ২ হাজার ৩২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৫৭০ জন নিহত এবং ৩ হাজার ১৫১ জন আহত হয়েছেন। আর বিগত ১০ বছরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ১৫ লাখ থেকে বেড়ে ৬০ লাখ হয়েছে। নতুন করে ৬০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা রাস্তায় চলাচলের পাশাপাশি ছোট যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এসব যানবাহনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আর ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ১৬৮ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১ হাজার ৯৫২ জন চালক, ১ হাজার ৮৭৯ জন পথচারী, ৬২২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৭৫৫ জন শিক্ষার্থী, ১২৬ জন শিক্ষক, ১ হাজার ২০৬ জন নারী, ৬৫৮ জন শিশু, ৪৮ জন সাংবাদিক, ১৭ জন চিকিৎসক, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১ জন চিত্রনায়ক, ৬ জন আইনজীবী, ১২ জন প্রকৌশলী এবং ২১৫ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় পাওয়া গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৫০.৮৪ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়া, ২৪.৩৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়া, ৪.৯৯ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং ০.৭৩ শতাংশ ট্রেনের সাথে যানবাহনের সংঘর্ষের কারণে হয়েছে।

এসব দুর্ঘটনার ৩৫.৬৭ শতাংশ ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ২১.৬৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৫.৮১ শতাংশ ফিডার রোডে এবং ৪.৯৩ শতাংশ দুর্ঘটনা ঢাকা মহানগরীতে এবং ১.২০ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ঘটেছে।আর শুধু ২০২৫ সালের বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬২১টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬০৮ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার ১০০ জন মানুষ। এরমধ্যে ২৭১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৬৪ জন, ৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৬ জন ও দুইজন আহত হয়েছেন। ২২টি রেল ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত এবং সাতজন আহত হয়েছেন।

সড়ক হত্যা কী?

‘সড়ক হত্যা’ বলতে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বোঝায়, যা বেশিরভাগ সময় অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চালানো, ট্রাফিক আইন না মানা, দুর্বল অবকাঠামো এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাবের কারণে ঘটে। দুর্ঘটনাগুলো অনেক সময় পরিকল্পিত না হলেও এগুলোকে হত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এ ধরনের মৃত্যু অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধযোগ্য।

সড়ক হত্যা দিবসের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার ইতিহাস অত্যন্ত করুণ। সড়কে মৃত্যু যেন প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। আন্দোলনের পেছনে মূল কারণ ছিল রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে একটি বাসের ধাক্কায় দুই স্কুল শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু। এ ঘটনা সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে চরম অসন্তোষের জন্ম দেয়।

ছাত্র আন্দোলনের সময় স্লোগান উঠেছিল, “আমার ভাই মরবে কেন? সড়কে লাশ পড়বে কেন?” এই আন্দোলনের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে সড়ক হত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এর পর থেকে, সড়ক হত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে জনগণ সড়কে মৃত্যুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণসমূহ

সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু প্রধান কারণ নিচে আলোচনা করা হলো:

১. অতিরিক্ত গতি: অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। চালকের নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয় এবং অনেক সময় এটি প্রাণঘাতী রূপ নেয়।

২. অদক্ষ চালক: দেশের অনেক চালক যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়াই যানবাহন চালান। এছাড়া, ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে অবৈধ প্রক্রিয়া এবং দুর্নীতির ফলে অদক্ষ চালকরা রাস্তায় যানবাহন চালানোর অনুমতি পান, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. ট্রাফিক আইন না মানা: বাংলাদেশে ট্রাফিক আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিথিলতা এবং জনগণের অসচেতনতা সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। সিগন্যাল ভঙ্গ করা, ওভারটেকিং, এবং যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো সড়ক ব্যবস্থাপনার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।

৪. যানবাহনের দুর্বল মান: অনেক যানবাহন যথাযথ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া রাস্তায় চলাচল করে। বিশেষত পুরোনো বাস ও ট্রাকগুলোর প্রযুক্তিগত সমস্যা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৫. সড়কের দুর্বল অবকাঠামো: অনেক রাস্তা অপ্রশস্ত, খানাখন্দে ভরা বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। এসব রাস্তায় যানবাহন চলাচল করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, যথাযথ ট্রাফিক সিগন্যাল বা জেব্রা ক্রসিংয়ের অভাবও একটি বড় সমস্যা।

৬. মাদকের প্রভাব: অনেক চালক মাদক সেবন করে গাড়ি চালান, যা তাদের সঠিকভাবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে। এর ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

৭. অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন: অনেক যানবাহনে ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী বা পণ্য পরিবহন করা হয়, যা যানবাহনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং দুর্ঘটনা ঘটায়।

সড়ক হত্যার সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

সড়ক দুর্ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে সমাজের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। এটি ব্যক্তি, পরিবার, ও দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

১. মানসিক ও পারিবারিক ক্ষতি: প্রতিদিনকার সড়ক হত্যাগুলো অসংখ্য পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে দেয়। প্রিয়জনকে হারানোর মানসিক যন্ত্রণা অনেক পরিবার বহন করে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার তাদের উপার্জনক্ষম সদস্য হারায়, যা তাদের আর্থিক অবস্থাকে দুর্বল করে।

২. অর্থনৈতিক ক্ষতি: সড়ক দুর্ঘটনা দেশের অর্থনীতির ওপরও বড় প্রভাব ফেলে। দুর্ঘটনার কারণে ভুক্তভোগীর চিকিৎসা খরচ, কর্মক্ষমতা হারানো, এবং যানবাহনের ক্ষতির কারণে প্রচুর অর্থব্যয় হয়।

৩. শিক্ষা ও ভবিষ্যত বিপর্যয়: অনেক তরুণ শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়, যা তাদের সম্ভাবনাময় জীবনকে অসময়ে থামিয়ে দেয়।

৪. সমাজে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি: প্রতিনিয়ত সড়ক হত্যার খবর মানুষকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। বিশেষত পিতামাতারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বা রাস্তায় চলাচল নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন।

সড়ক হত্যা প্রতিরোধে করণীয়

সড়ক হত্যার হার কমানোর জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরা হলো:

১. সুষ্ঠু আইন প্রয়োগ: ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা এবং ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও কঠোর করা উচিত।

২. চালকদের প্রশিক্ষণ: চালকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা এবং তাদের জন্য নিয়মিত ড্রাইভিং পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।

৩. যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ: যানবাহনের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে নিয়মিত পরীক্ষা চালু করা দরকার। যেসব যানবাহন মানদণ্ডে পাস করতে পারবে না, তাদের রাস্তায় চলাচল নিষিদ্ধ করা উচিত।

৪. সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন: সড়কের মানোন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। যেমন, ফুটপাত, জেব্রা ক্রসিং, এবং ওভারপাস তৈরি করা যেতে পারে।

৫. সচেতনতা বৃদ্ধি: সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো, স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন।

৬. প্রযুক্তির ব্যবহার: সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ট্রাফিক মনিটরিং ডিভাইস ব্যবহার করে সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যেতে পারে। এছাড়া, চালকদের মদ্যপানের পরিমাপ করার জন্য অ্যালকোহল ডিটেক্টর চালু করা যেতে পারে।

সরকার ও নাগরিকদের দায়িত্ব

সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্ব রয়েছে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে এবং অন্যদের আইন মেনে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। চালকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং যাত্রীদেরও সচেতনভাবে চলাচল করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, সড়ক হত্যা একটি জাতীয় দুর্যোগ। বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন এক হাজারের বেশি শিশু এবং ৩০ বছরের কম বয়সী যুবক রোডক্র্যাশে মারা যায়। বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ২৩ জন রোডক্র্যাশে প্রাণ হারান। অথচ এই মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। জাতিসংঘ নির্ধারিত নিরাপত্তা কৌশল অনুসরণ করে এই প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু কমানো সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন। আর বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আমাদের সকলের দাবি, সড়ক নিরাপত্তার সংস্কার ভাবনায় সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করতে হবে। আর গণমাধ্যম গণজাগরণের হাতিয়ার। জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিকালে গণমাধ্যম 'মুশকিল আসান' হিসেবে কাজ করেছে। কী প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কী রাজনৈতিক অস্থিরতা, কী অন্যান্য আপদকালীন সময়– সর্বদা বাংলাদেশের গণমাধ্যম সেগুলো উত্তরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। তাদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো ভূমিকা পালনের কারণে বাংলাদেশে সামাজিক ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন, তা আজ ভীষণভাবে বেগবান। আর সড়ক দুর্ঘটনা যে এখন আর নিছক দুর্ঘটনা নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মনুষ্যসৃষ্ট এক দুর্যোগে পর্যবসিত হয়েছে– এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে মিডিয়া। কখনও কখনও সড়কে অপূরণীয় ক্ষতি বা অসহনীয় ট্র্যাজিডির প্রেক্ষাপটে আমরা দেখেছি, গণমাধ্যমের তেজস্বী ভূমিকা।আর সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করাসহ ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে অনেকটাই কমে আসবে সড়ক দুর্ঘটনা।

সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেখা গেছে, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে পণ্যবাহী যানবাহনের সংঘর্ষে। মূলত সড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, কাভার্ডভ্যান এবং মোটরসাইকেল এখন মরণদূত হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো কার্যকর ও টেকসই পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। আর মেনে চলতে হবে ট্রাফিক আইন, শ্রদ্ধাশীল হতে হবে আইনের প্রতি, কঠোর করতে হবে ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ, নিশ্চিত করতে হবে আইন অমান্যকারীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও হেলমেট পরিধান করা। বন্ধ করতে হবে মোবাইলে কথা বলা ও হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা। এছাড়া পরিহার করতে হবে প্রতিযোগিতা, ওভারটেকিং ও ফাঁকা থাকলেও মাঝপথ দিয়ে গাড়ি চালানো।প্রচার চালাতে হবে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য। কীভাবে রাস্তায় হাটতে হয় বা রাস্তা পার হতে হয় তাও অনেকে জানে না। তা জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তায় গাড়ি, বাইক চালাতে গিয়ে নিজেকে যেন রাজা না ভাবি। এটিও মনে রাখতে হবে বাসায় প্রিয়জনরা অপেক্ষা করছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাগুলো যাতে না ঘটে সেদিকে সকলের দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। এজন্য প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। সরকার, চালক, মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে- মনে রাখতে হবে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।তবেই নিরাপদ হবে সড়ক। কমবে মৃত্যুর মিছিল।তবে সরকারের নির্দিষ্ট পদক্ষেপ এবং চালক ও সাধারণ জনগনের সচেতনতার মাধ্যমে সড়কে কমবে মৃত্যুহার, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

লেখক : সংগঠক, কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

১৩ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test