দাবির আন্দোলন: উত্তাল রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
মীর আব্দুল আলীম
দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা যেন পিছু ছাড়ছে না। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে দেশের শরীর খারাপ হয়ে গেছে। সরকার পতনের পর থেকে প্রতিদিনই নতুন নতুন দাবিতে আন্দোলনে নামছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সচিবালয় থেকে গ্রাম পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজ, রিকশা থেকে রেল—সর্বত্রই দাবি আদায়ের জন্য মিছিল-সমাবেশ চলছে। রাজধানী ঢাকা যেন রূপ নিয়েছে দাবির শহরে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তাল দিন চলছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর থেকেই দেশের পরিস্থিতি নতুন নতুন সংকটের দিকে মোড় নিচ্ছে। আন্দোলন যেন প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সচিবালয় থেকে শুরু করে গ্রাম পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিকশাচালক—সবাই তাদের দাবির জন্য রাস্তায় নামছেন। ঢাকার রাজপথ যেন এখন দাবির শহরে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে তারা কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে। অন্যদিকে, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি বিরোধিতা জানিয়ে আওয়ামী লীগও সরব। এ দলটিও ফেব্রুয়ারিতে হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছে। রাজপথে আওয়ামী লীগের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির আন্দোলনের হুমকি ড. ইউনূস সরকারকে চাপের মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশ এখন এক জটিল রাজনৈতিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
হার্ডলাইনে বিএনপি: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের ছয় মাসের মেয়াদের মাথায় তারা দাবি করছে, নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ করতে হলে নতুন নিরপেক্ষ প্রশাসন দরকার। বিএনপির অভিযোগ, বর্তমান সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে এবং জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করছে। দলটির নতুন কর্মসূচি আগামী ফেব্রুয়ারিতে রাজপথে নামার বার্তা দিচ্ছে। দলটি দাবি করছে, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের আন্দোলন চলবে। তাদের লক্ষ্য, রাজনৈতিক অস্থিরতার মাধ্যমে সরকারকে চাপে ফেলা।
আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি ১৬ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক: অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগও সরব। তারা সরকারের 'অপশাসন' ও 'নির্যাতন'-এর প্রতিবাদে আগামী ১৬ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক দিয়েছে। তাদের দাবি, বর্তমান সরকার ব্যর্থ এবং জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য তাদের সরে দাঁড়ানো উচিত। আওয়ামী লীগ জনগণকে এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করছে।
কী হতে পারে ভবিষ্যৎ চিত্র?
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আগামী দিনে আরও উত্তপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের টানটান অবস্থানের ফলে সামনে বড় ধরনের সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো পক্ষই যদি সমঝোতার পথে না আসে, তাহলে দেশের রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘায়িত হতে পারে। সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা, উভয় পক্ষ সংলাপে বসে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাবে। নতুবা দেশজুড়ে চলমান অস্থিরতা দীর্ঘমেয়াদি সংকটের জন্ম দিতে পারে। এখন দেখার বিষয়, রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে তাদের কৌশল নির্ধারণ করে এবং জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্য রেখে এগিয়ে যায়।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় আতঙ্কিত জনগণ: রাজনৈতিক অস্থিরতা ও লাগাতার আন্দোলনের কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে, বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। পরিবহন খাতেও নৈরাজ্য দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি আন্দোলনের ফলে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধাক্কা দিতে পারে। বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে, বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দেশের রপ্তানি খাত এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চ্যালেঞ্জ: বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সময়টা বেশ জটিল। বিভিন্ন পক্ষ থেকে চাপ বাড়ছে। সরকারের করণীয় ছিল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, কিন্তু ক্রমবর্ধমান আন্দোলন ও রাজনৈতিক চাপের ফলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক চাপ এবং ভূমিকা: বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আন্তর্জাতিক মহলের নজর কেড়েছে। যুক্তরাজ্যের আন্তদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশে দুই হাজারের বেশি নৃশংসতার ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বহির্বিশ্বের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিবৃতি দিচ্ছে। তবে এসব বিবৃতির পাশাপাশি কিছু দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোপন ইন্ধনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও বাণিজ্যিক গুরুত্বের কারণে বিদেশি শক্তিগুলোর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলতে পারে।
সংশ্লিষ্ট আন্দোলন ও অপশক্তির ভূমিকা: বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও শ্রমিক ইউনিয়নের আন্দোলন বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও অনেক আন্দোলনের দাবিগুলো যৌক্তিক, তবে কিছু ক্ষেত্রে সন্দেহ করা হচ্ছে, এগুলোর পেছনে কোনো তৃতীয় পক্ষ কাজ করছে কি না। বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য সংগঠিত আন্দোলনের বাইরেও কিছু বিদেশি সংস্থা এবং চরমপন্থী শক্তির ইন্ধনের সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। পরিবহন শ্রমিকরা ভাড়া বৃদ্ধি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে।
সমঝোতার পথ কোথায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, একমাত্র সংলাপই পারে এই সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে। উভয় পক্ষের যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে, তবে তারা একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে পারে। অন্যথায়, এই অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে দেশের উন্নয়নের গতি স্তব্ধ করে দিতে পারে।
শেষ কথা হলো, দেশের জনগণ চায় স্থিতিশীলতা এবং শান্তি। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশল ও দাবি-দাওয়ার মাঝে সেই প্রত্যাশা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ এখন নেতৃবৃন্দের ওপর নির্ভরশীল—তারা কি সংকট নিরসনের পথে হাঁটবে, নাকি সংঘাত আরও বাড়িয়ে তুলবে?
লেখক : সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।
পাঠকের মতামত:
- মহম্মদপুরে প্রতিবন্ধীদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ
- বাঙালি সংস্কৃতিতে দোল উৎসব সার্বজনীনতা লাভ করে কবিগুরুর কল্যাণে
- ভোক্তার জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমানো সম্ভব
- আগৈলঝাড়ায় গলায় খাবার আটকে শিশুর মৃত্যু
- বন্ধ হওয়া একদিনের ভূমি সেবা পুনরায় চালু
- গৌরনদীতে পাঁচ মণ জাটকা জব্দ
- নারী-শিশু নির্যাতনে সহায়তায় সেল গঠন বিএনপির
- যমুনা রেলসেতুর কারণে ট্রেনযাত্রায় সময় কমেছে, বাড়ছে ভাড়া
- ঝিনাইদহ সীমান্তে থামানো যাচ্ছে না মানবপাচার
- কোস্টগার্ডের অভিজানে চোরাইকৃত কাঠসহ আটক ১০
- কোস্টগার্ডের অভিজানে ২৫ কেজি হরিণের মাংসসহ আটক ৫
- এম এম কলেজে মহাপ্রভূ শ্রী চৈতন্যদেবের ৫৪০তম আবির্ভাব তিথি ও দোল পূর্ণিমা উদযাপন
- ঝিনাইদহে গলায় ছুরি ধরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ
- বিজিবির সাবেক প্রধান সাফিনুলের সস্ত্রীক বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা
- মাগুরার সেই শিশুটির বোনের ভিডিও অপসারণ করতে নোটিশ
- সপ্তাহ ব্যবধানে সবজির বাজার চড়া, বেড়েছে চালের দাম
- স্পাইডারম্যানে যোগ দিলেন সেডি সিঙ্ক
- ‘বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মন্তব্য অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল’
- নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণা দিল্লি ক্যাপিটালসের
- ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি পুতিন
- গাজায় ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব
- ধর্ষণ-নিপীড়নের বিচার চেয়ে ঢাবিতে মশাল মিছিল
- সিলেটে মৌসুমের প্রথম শিলাবৃষ্টি, দুশ্চিন্তায় কৃষক
- ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু
- জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক
- ১০ লাখ টাকা নিয়ে ছেলে ঈশানের সঙ্গে আমিন খানের দ্বন্দ্ব
- বাগেরহাটে বিএনপির ভোটার তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর নাম
- প্রেমিককে মেরে হাসপাতালে, মোটরসাইকেলে আগুন
- বাগেরহাট পুনাকের পিঠা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
- ফরিদপুরে অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার ডিবি পুলিশ, আহত ৬, গ্রেফতার ২
- নাটোরে পরীক্ষা বয়কটের পর অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের
- রাম মন্দিরের মতো আর ইস্যু চান না আরএসএস প্রধান
- ‘বরেণ্য নারীদের লেখায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ বই প্রকাশ
- দুই নারী কসাই, আলোচনা সর্বত্রই!
- ওয়ালটন পণ্য কিনে আবারো মিলিয়নিয়ার হওয়ার সুযোগ
- ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জরুরি’
- বঙ্গবন্ধু
- লিভার রোগের ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজন সচেতনতা
- ময়মনসিংহে মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন ২৮ সাংবাদিক
- বৃহস্পতিবার একুশে পদক নেবে নারী ফুটবল দল
- ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগকে প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে’
- বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষকের চিকিৎসায় প্রয়োজন ৭৫ লাখ টাকা
- নড়াইলের পথে-প্রান্তরে ফাগুনের মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ‘ভাটি ফুল’
- সাবেক কৃষিমন্ত্রী ‘আব্দুস শহীদ’ কলেজের নাম পরিবর্তনের আল্টিমেটাম
- অদম্য মেধাবী এক কিশোরের গল্প, ভালো কলেজে ভর্তি নিয়েও সংশয়