E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা প্রসঙ্গ

২০২৪ আগস্ট ৩০ ১৮:৩৬:১২
বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা প্রসঙ্গ

আবু মকসুদ


বর্তমান সরকার পূর্বতন আওয়ামী লীগ সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অস্বীকার করে এবং সেই সাথে বেশিরভাগ আইন বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা মনে করে, এসব আইন ও উন্নয়ন কার্যক্রম দেশকে শুধু ভারী ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে দেশের সার্বভৌমত্বকে বন্ধক রেখেছে। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের করা বিভিন্ন চুক্তিকে দেশের স্বার্থবিরোধী হিসেবে প্রচার করছে, যেখানে দেশের সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে তারা দাবি করছে। বর্তমান সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো সঠিক উন্নয়নমূলক কাজ ছিল না এবং তারা দেশকে ভারতের দাসত্বে আবদ্ধ করেছে। 

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন বাতিল করা হয়েছে। এই আইনের বিরুদ্ধে সরকার যে যুক্তি দিয়েছে তা হলো, একক পরিবারের জন্য বিশেষ সুবিধা বৈষম্যমূলক। সরকার দাবি করছে যে তারা বৈষম্যহীনতার পক্ষে, আর সেই কারণেই একক পরিবারের জন্য কোনো আলাদা আইন থাকতে পারে না। যদিও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বৈষম্যবিরোধী হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, তবে এই আইনের প্রয়োজনীয়তা যে কতটা ছিল তা সরকার বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।

শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে তার বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী হামলার সংখ্যা অসংখ্য। বিশ্বজুড়ে অন্যান্য রাষ্ট্রনেতাদের তুলনায় তার ওপর চালানো হামলার সংখ্যা অনেক বেশি। কোটালীপাড়ার বোমা হামলা থেকে ২১শে আগস্টের বোমা হামলা পর্যন্ত, শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা বারবার করা হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিগুলো বরাবরই শেখ হাসিনার প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করেছে। এসব হামলা থেকে বোঝা যায়, তার নিরাপত্তার জন্য আলাদা আইনের প্রয়োজন কতটা জরুরি ছিল।

বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারা এই পরিস্থিতি সম্পর্কে একেবারেই অনভিজ্ঞ। তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে পারে, কিন্তু বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে তাদের কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে না পারা তাদের দূরদর্শিতার অভাবের পরিচায়ক। একটি দেশের নেতা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে যদি হত্যাচেষ্টা হয়, তবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। সরকারের উপদেষ্টারা এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে, এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে শাস্তি পেতে হবে। শেখ হাসিনা নিজে দায়ী হতে পারেন, কিন্তু তার পুত্র, কন্যা, কিংবা অন্যান্য সদস্যরা এর জন্য দায়ী নয়। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যরা এখনও দেশবিরোধী শক্তির টার্গেট। এই আইন রদ করার মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণরূপে অন্যায়।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাদের গণতান্ত্রিক মনোভাবের অভাবকেই প্রকাশ করে। একটি পরিবারের মৌলিক অধিকার হরণ করে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, সরকার দেশবিরোধী শক্তিগুলোর সামনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের খোলা মাঠে ফেলে দিচ্ছে। এটি একপ্রকার নির্দেশ যে, তারা চায় না শেখ হাসিনা কিংবা বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য কেউ দেশে নিরাপদে ফিরে আসুক। সরকার তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে এবং এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছে।

তবে ইতিহাস সাক্ষী, এমন কোনো প্রচেষ্টা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি। একইভাবে, বর্তমান সরকারের এই পদক্ষেপও সফল হবে না। সরকারকে বুঝতে হবে যে, কোনো সরকারই চিরস্থায়ী নয়। বর্তমান সরকারের মেয়াদও একদিন শেষ হবে, আর তখন যারা আজ স্বাধীনতার স্বপক্ষে থাকার চেষ্টা করছে, তাদেরকেও একদিন এর জন্য মূল্য দিতে হবে।

বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে এক প্রকার শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছে, এবং শেখ হাসিনার কার্যকলাপের জন্য তার পুরো পরিবারকে দোষারোপ করছে। এটি স্পষ্টতই অন্যায় এবং অমানবিক। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, একজনের পাপের জন্য পুরো পরিবারকে শাস্তি দেওয়া কখনোই যুক্তিসঙ্গত নয়। শেখ হাসিনা যদি অন্যায় করে থাকে, তবে তার জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, কিন্তু তার পরিবারের অন্য সদস্যদের কেন সেই দায়িত্ব নিতে হবে?

সরকারের কাছে একমাত্র অনুরোধ হচ্ছে, তারা যেন হুজুগে প্রভাবিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়। শেখ হাসিনার অন্যায়ের শাস্তি যদি তাকে দিতে হয়, সেটি অবশ্যই হওয়া উচিত, কিন্তু তার পরিবারের নিরপরাধ সদস্যদের এভাবে নিগ্রহ করা অন্যায় এবং অমানবিক। সরকারকে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, এর ফলাফল তাদের জন্যও ভয়াবহ হতে পারে।

সরকারের এই আইন রদ করার পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে তারা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়। তারা শুধু রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সরকারের উচিত হবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা, কারণ এর মাধ্যমে তারা শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে না, বরং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি রাষ্ট্রের নৈতিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব। শেখ হাসিনা যদি কোনো অন্যায় করে থাকেন, তবে তার শাস্তি হওয়া উচিত, কিন্তু তার পরিবারের নিরপরাধ সদস্যদের উপর এর প্রভাব পড়া উচিত নয়। বর্তমান সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু অগণতান্ত্রিক নয়, বরং মানবিকতারও পরিপন্থী। এই ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকা উচিত, এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধকে রক্ষা করার জন্য সরকারের উচিত হবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা পুনরায় নিশ্চিত করা।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ছোটকাগজ ‘শব্দপাঠ’ সম্পাদক।

পাঠকের মতামত:

১৫ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test