বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা প্রসঙ্গ
আবু মকসুদ
বর্তমান সরকার পূর্বতন আওয়ামী লীগ সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অস্বীকার করে এবং সেই সাথে বেশিরভাগ আইন বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা মনে করে, এসব আইন ও উন্নয়ন কার্যক্রম দেশকে শুধু ভারী ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে দেশের সার্বভৌমত্বকে বন্ধক রেখেছে। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের করা বিভিন্ন চুক্তিকে দেশের স্বার্থবিরোধী হিসেবে প্রচার করছে, যেখানে দেশের সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে তারা দাবি করছে। বর্তমান সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো সঠিক উন্নয়নমূলক কাজ ছিল না এবং তারা দেশকে ভারতের দাসত্বে আবদ্ধ করেছে।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন বাতিল করা হয়েছে। এই আইনের বিরুদ্ধে সরকার যে যুক্তি দিয়েছে তা হলো, একক পরিবারের জন্য বিশেষ সুবিধা বৈষম্যমূলক। সরকার দাবি করছে যে তারা বৈষম্যহীনতার পক্ষে, আর সেই কারণেই একক পরিবারের জন্য কোনো আলাদা আইন থাকতে পারে না। যদিও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বৈষম্যবিরোধী হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, তবে এই আইনের প্রয়োজনীয়তা যে কতটা ছিল তা সরকার বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে তার বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী হামলার সংখ্যা অসংখ্য। বিশ্বজুড়ে অন্যান্য রাষ্ট্রনেতাদের তুলনায় তার ওপর চালানো হামলার সংখ্যা অনেক বেশি। কোটালীপাড়ার বোমা হামলা থেকে ২১শে আগস্টের বোমা হামলা পর্যন্ত, শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা বারবার করা হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিগুলো বরাবরই শেখ হাসিনার প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র করেছে। এসব হামলা থেকে বোঝা যায়, তার নিরাপত্তার জন্য আলাদা আইনের প্রয়োজন কতটা জরুরি ছিল।
বর্তমান সরকারের উপদেষ্টারা এই পরিস্থিতি সম্পর্কে একেবারেই অনভিজ্ঞ। তারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে পারে, কিন্তু বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে তাদের কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে না পারা তাদের দূরদর্শিতার অভাবের পরিচায়ক। একটি দেশের নেতা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে যদি হত্যাচেষ্টা হয়, তবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। সরকারের উপদেষ্টারা এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে, এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করা যুক্তিসঙ্গত হতে পারে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে শাস্তি পেতে হবে। শেখ হাসিনা নিজে দায়ী হতে পারেন, কিন্তু তার পুত্র, কন্যা, কিংবা অন্যান্য সদস্যরা এর জন্য দায়ী নয়। বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যরা এখনও দেশবিরোধী শক্তির টার্গেট। এই আইন রদ করার মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণরূপে অন্যায়।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাদের গণতান্ত্রিক মনোভাবের অভাবকেই প্রকাশ করে। একটি পরিবারের মৌলিক অধিকার হরণ করে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, সরকার দেশবিরোধী শক্তিগুলোর সামনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের খোলা মাঠে ফেলে দিচ্ছে। এটি একপ্রকার নির্দেশ যে, তারা চায় না শেখ হাসিনা কিংবা বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য কেউ দেশে নিরাপদে ফিরে আসুক। সরকার তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে এবং এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছে।
তবে ইতিহাস সাক্ষী, এমন কোনো প্রচেষ্টা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি। একইভাবে, বর্তমান সরকারের এই পদক্ষেপও সফল হবে না। সরকারকে বুঝতে হবে যে, কোনো সরকারই চিরস্থায়ী নয়। বর্তমান সরকারের মেয়াদও একদিন শেষ হবে, আর তখন যারা আজ স্বাধীনতার স্বপক্ষে থাকার চেষ্টা করছে, তাদেরকেও একদিন এর জন্য মূল্য দিতে হবে।
বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে এক প্রকার শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছে, এবং শেখ হাসিনার কার্যকলাপের জন্য তার পুরো পরিবারকে দোষারোপ করছে। এটি স্পষ্টতই অন্যায় এবং অমানবিক। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, একজনের পাপের জন্য পুরো পরিবারকে শাস্তি দেওয়া কখনোই যুক্তিসঙ্গত নয়। শেখ হাসিনা যদি অন্যায় করে থাকে, তবে তার জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে, কিন্তু তার পরিবারের অন্য সদস্যদের কেন সেই দায়িত্ব নিতে হবে?
সরকারের কাছে একমাত্র অনুরোধ হচ্ছে, তারা যেন হুজুগে প্রভাবিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়। শেখ হাসিনার অন্যায়ের শাস্তি যদি তাকে দিতে হয়, সেটি অবশ্যই হওয়া উচিত, কিন্তু তার পরিবারের নিরপরাধ সদস্যদের এভাবে নিগ্রহ করা অন্যায় এবং অমানবিক। সরকারকে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, এর ফলাফল তাদের জন্যও ভয়াবহ হতে পারে।
সরকারের এই আইন রদ করার পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে তারা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়। তারা শুধু রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সরকারের উচিত হবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা, কারণ এর মাধ্যমে তারা শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলছে না, বরং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি রাষ্ট্রের নৈতিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ব। শেখ হাসিনা যদি কোনো অন্যায় করে থাকেন, তবে তার শাস্তি হওয়া উচিত, কিন্তু তার পরিবারের নিরপরাধ সদস্যদের উপর এর প্রভাব পড়া উচিত নয়। বর্তমান সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু অগণতান্ত্রিক নয়, বরং মানবিকতারও পরিপন্থী। এই ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকা উচিত, এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধকে রক্ষা করার জন্য সরকারের উচিত হবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিরাপত্তা পুনরায় নিশ্চিত করা।
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ছোটকাগজ ‘শব্দপাঠ’ সম্পাদক।
পাঠকের মতামত:
- যাত্রাভঙ্গ
- সবার আমি ছাত্র
- দাবানলের কারণে আবার পেছালো অস্কার মনোনয়ন
- পেট খালি রাখলেই বিপদ
- ‘বিএনপির সংস্কার কর্মসূচি জাতির মুক্তির সনদ’
- ঘোষণাপত্র জারি হবে ছাত্রদের নেতৃত্বে, উপস্থিত থাকবেন সবাই
- সিটি মিনিস্টার পদ থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ
- সাতক্ষীরায় প্রায় ২৭ লক্ষ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি
- শ্যামনগরে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াই
- কুশিয়ারা তীরে তিনদিনের মেলায় ২০ কোটি টাকার মাছ বিক্রি
- কোটচাঁদপুরে কাঠ রিফাইন করা বয়লার বিস্ফোরণে নিহত ২
- সব বিনিয়োগ সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনার আহ্বান
- জামালপুরে জাতীয় কবিতা পরিষদের কমিটি গঠন
- মাগুরায় ইসাডোর শীতবস্ত্র বিতরণ
- রক্ষাকবজ হিসেবে জামায়াত নেতাদের তদবির
- বাগেরহাটে বিশ্বমানের ক্যান্সার হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন ২৫ বিসিএস কর্মকর্তা
- নাটোরে আদিবাসী কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক আটক
- ভোটার হালনাগাদ নিয়ে ইসির বিশেষ ১৬ নির্দেশনা
- নাটোরের বড়াইগ্রামে ভুতুড়ে কৃষি মেলা, লক্ষ টাকা গচ্চা!
- ওয়ালটন প্লাজার ‘চ্যালেঞ্জার্স সামিট’ অনুষ্ঠিত
- ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপেয়ারেল ডিজাইনের ভবিষ্যৎ শীর্ষক সেমিনার
- মগড়ায় বিএনপি নেতা টুকুর পক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ
- মহম্মদপুরে ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদ্বোধন
- বোয়ালমারীতে তারুণ্যের মেলা অনুষ্ঠিত
- বাগেরহাটে লবণাক্ত অনাবাদি হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ, কৃষকের মুখে হাসি
- একমাস পর সর্বনিম্ন সংক্রমণ শনাক্ত ভারতে
- বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির বিষ
- নতুন দায়িত্বে বাফুফেতে ফিরলেন ছোটন
- কাপ্তাইয়ে হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে মতবিনিময় সভা
- দিনাজপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন
- খাগড়াছড়িতে বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের সড়ক অবরোধ
- মাকে বাঁচাতে জবি শিক্ষার্থীর আকুতি
- পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা
- কলেজের ডিজিটাল সাইনবোর্ডে ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরবে’
- টেলিফটো প্রযুক্তি ও পারফরম্যান্স নিয়ে নজর কাড়ল ভিভো এক্স২০০
- রাজবাড়ীতে ১৬ হাজার মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদনের আশা
- ‘নতুন বছর স্বাগত জানাতে আতশবাজি ফোটাবেন না’
- নিউ ইয়র্কে সাকিব আল হাসানের নয়া কৌশলে চাঁদাবাজি
- তোমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম যে ব্যক্তিটি খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, যাকে তুমি পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে
- বিদেশে প্রবাসী জীবন, যন্ত্রণার মাঝে স্বপ্নের খোঁজ
- বিজয় দিবসে শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের মিলন মেলা
- 'আমি নিশ্চিত, পিতা মুজিব যদি রাষ্ট্রপতির প্রটোকল মেনে বঙ্গভবনে থাকতেন, তাহলে বাঙালির এতো বড় মহাসর্বনাশ কেউ করতে পারত না'
- সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে মুরগি ও মাছের দাম
- পাঠ্যবইয়ে র্যাপার হান্নান ও সেজান
- কোস্টাল মডেল কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীদের বিদায় ও দোয়া অনুষ্ঠিত