E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা

২০২৪ আগস্ট ১৭ ১৬:৩৯:১২
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপেক্ষিতে সৃষ্ট অসহযোগ আন্দোলনের ফলে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ৮ আগস্ট শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শান্তিতে নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়েছে। প্রতিবাদী ছাত্ররা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে পৌঁছার আগেই বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানে তাণ্ডবলীলা চালায়। এটি কতটা ভয়াবহ ছিল, তা পরবর্তী সময়ে গণভবন দেখতে যাওয়া উৎসুক জনতা নিশ্চয় আঁচ করতে পেরেছেন।

যে গণভবন ছিল দুর্গের মতো সুরক্ষিত, সে ভবনের সীমানা প্রাচীরের জীর্ণ দশায় পাশের সড়ক থেকেই দেখা গেছে ভেতরের বিস্তীর্ণ অঙ্গন জুড়ে থাকা সবজি ক্ষেত ও বাগান। গণভবনে গণহারে লুট হয়েছে জিনিসপত্র। নিশ্চয়ই এমন পরিণতি কারও কাছে প্রত্যাশিত নয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর দেশ কার্যত সরকারবিহীন হয়ে পড়ে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই শূন্যতা পূরণ হয়েছে।

বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে দায়িত্ব নেয়া নতুন সরকারকে নিঃসন্দেহে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসনে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়েছে, সেগুলোকে সংস্কার করে কার্যকর করার কাজটি সহজ নয়। সংস্কার অবশ্যই গুরুত্ব পাবে। তবে এই মুহূর্তে সরকারের প্রধান কাজ হবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া এবং পুলিশ ও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। আমাদের বিশ্বাস যিনি শান্তিতে অবদানের জন্য নোবেল পেয়েছেন, তিনি আমাদের দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সফল হবেন। তিনি নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, এতে জন-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে। দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। একজন অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে তিনি এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল। নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা দিয়ে বিরূপ পরিস্থিতি কাটিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার কাজটি করতে তিনি সক্ষম হবেন বলেই ধারণা।

আর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তায় এক অন্ধকার যাত্রা পথে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫৩ বছরের এই দেশ এখন নিত্যনতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের দিকে চলছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি চোখে পড়ছে না। বাংলাদেশের জনগণের ধর্মীয় বাকস্বাধীনতা সম্প্রীতি ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সংখ্যালঘু মানুষ নিজদের অনিরাপদ মনে করছে। তারা দেশ থেকে অন্য কোথাও বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে। ধর্মীয় রাজনৈতিক কর্মসূচির আন্দোলনে সংখ্যালঘুরা আতঙ্কিত হচ্ছে। যে কোনো সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্থান পতনে রাজনীতির বলির শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এসব চরিত্র জাতির জন্য কোনোভাবেই কল্যাণকর নয়। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সবার জন্য সমানভাবে নিরাপদ হতে হবে। যে কোনো আন্দোলন রক্তপাতহীন কর্মসূচিতে পালন করতে হবে। জনগণের জানমাল জীবন জীবিকা নিরাপদ করতে হবে।

প্রচলিত সরকারকে জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অনির্বাচিত সরকার একটি স্বল্পসময়ের সরকার। এটি দলীয় নির্বাচিত সরকার নয়। তাদের সমস্ত জাতীয় কর্মসূচির পরিচ্ছন্ন আয় ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে। কোনো গোষ্ঠী বা মহলের প্রতিনিধি তারা নয়। তারা বাংলাদেশের জনগণের অস্থায়ী ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত মাত্র। সেই কথা মাথায় রেখে পরিচ্ছন্নভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে দেয়ার কাজ শেষ করতে হবে। রাজনৈতিক শূন্যতা দূর করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রচলিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। উন্নয়ন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা জনগণের অধিকারের বাস্তবায়ন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রম্নত সময়ের মধ্যে ঠিক করতে হবে। জনমনে শঙ্কা দূর করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে। পুলিশ বাহিনীকে দলীয়ভাবে ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্র করতে হবে। তাদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনুগত্যে প্রজাতন্ত্রের নিবেদিত সেবক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বৈষম্য সব জায়গা থেকে প্রতিরোধ করতে হবে। ইউপি পরিষদ থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত সবগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত জনগণের সেবক হিসেবে দেখতে চাই।

পরিশেষে বলতে চাই, রাজনৈতিক সরকারগুলোর মধ্যে অভিন্ন স্বাভাবিক প্রবণতা রয়েছে। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু দলীয়করণ করা হয়। সরকারের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় আসীন অনুগত কর্মকর্তারা মনে করেন পরিস্থিতি আর অনুকূলে নেই। তারা বিদায় নিয়েছেন, কিংবা বিদায়ের অপেক্ষায় আছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশ প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার কাজে নতুন সরকার সফল হবে, এটাই প্রত্যাশিত। এটা প্রতি মুহূর্তে মনে রাখতে হবে দীর্ঘদিনের সুবিধাভোগীরা বসে থাকবে না। তারা নতুন সরকারের পদে পদে বাধার সৃষ্টি করবে; তাদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়োগ, শিক্ষা, প্রশাসন তথা সর্বত্র বৈষম্যবিরোধী সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রয়াস নেবে।আর আমরা চাই, প্রতিহিংসা ও হানাহানি পরিহার করে শাস্তি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের নীতি কার্যকর হোক।তাই বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শতভাগ সফল হবে, এটাই প্রত্যাশা।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test