মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নামক আগাছা উপড়ে ফেলতে হবে
আবীর আহাদ
ইতিহাসের অমোঘধারায় সম্প্রতি দেশে পটপরিবর্তন ঘটেছে। নতুন সরকারের মুক্তিযুযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিশেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মাঠপর্যায়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই-আজম দায়িত্বলাভ করায় আমরা যারপরনাই গৌরববোধ করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে ভুয়ামুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছেদের লক্ষ্যে তাঁর সদয় বিবেচনার্থে এ নিবন্ধটি উত্থাপন করলাম।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুঃখ করে বলেছেন :"আগাছাগুলিকে আমার বড় ভয়। এগুলি না তুললে আসল গাছগুলি ধ্বংস হয়ে যাবে। যেমন আমাদের দেশের পরগাছা রাজনীতিবিদ, যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক তাদের ধ্বংস করে এবং করতে চেষ্টা করে।" কারাগারের রোজনামচা : শেখ মুজিবুর রহমান। পৃষ্ঠা- ১১৭
জাতির পিতার কথার সূত্র ধরে একথা বলতে চাই যে, মুক্তিযোদ্ধা অঙ্গন থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নামক আগাছাগুলো উৎপাটিত করতে না পারলে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস শৌর্য ত্যাগ বীরত্ব ও মর্যাদা ধ্বংস হয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অপমৃত্যু ঘটবে। আর এভাবেই সাগরসম রক্তমূল্যে কেনা আমাদের স্বাধীনতা মূল্যহীন হয়ে পড়বে।
এ-পরিপ্রেক্ষিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঐতিহাসিক অবদানের মূল্যায়ন ও অমুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে আমরা একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের গোড়াপত্তন করে 'বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাসহ আরো কিছু মৌলিক দাবিতে আজ কয়েক বছর যাবত মাঠে, ময়দানে, প্রেসক্লাবে, পদযাত্রায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশসহ ধারাবাহিক লেখা ও বিবৃতির মাধ্যমে এক অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে আসছি।
আমরা আগেই বলেছি, " মুক্তিযোদ্ধা মানে এমন একজন ব্যক্তি যিনি যেকোনো একটি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য হিশেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন"- বঙ্গবন্ধু সরকারের '৭২ সালের এই মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে একটি উচ্চপর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই যাচাই কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা উচিত ছিলো। এ সংজ্ঞা ব্যবহৃত হয়নি বলেই অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় গোঁজামিল সংজ্ঞা ও নির্দেশিকায় মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অমুক্তিযোদ্ধার অনুপ্রবেশ ঘটার ফলে তালিকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। যারা মুক্তিযোদ্ধা নয়, তারা আজ মুক্তিযোদ্ধা সেজে মুক্তিযোদ্ধার গৌরব ও রাষ্ট্রীয় সুবিধাদি ভোগ করে আসছে।
মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে গেছে। সেই মেঘ আকাশে রয়েই গেছে। সেই মেঘ ঠেলে আরো না হয় কিছু সময় যাক- মেঘ সরে গিয়ে সূর্য দেখা দিক- তেমনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকাটা শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হিশেবে পরিগণিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আরো কিছু সময় নিয়ে হলেও অস্বচ্ছতাকে ঝেড়ে ফেলে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার তালিকা প্রণয়ন করা যেতে পারে। সেই স্বচ্ছ প্রক্রিয়াটি আমরা অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছি । সেটি হলো, সর্বাগ্রে জামুকা বাতিল এবং বঙ্গবন্ধু সরকারের মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞার আলোকে উচ্চতর আদালত, সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন মুক্তিযোদ্ধা কমিশন গঠন করা। সাম্প্রতিক প্রধানমন্ত্রী সমীপে পেশকৃত স্মারকলিপিতে এ বিষয়টি আমরা তুলে ধরেছি। আমাদের বদ্ধমূল ধারণা, কোনোপ্রকার প্রভাব ছাড়া এ স্বাধীন কমিশনকে দায়িত্ব অর্পণ করা হলে মাত্র ৫/৬ মাসের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারদের একটি স্বচ্ছ তালিকা উঠে আসবে। যেখানে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করতে কয়েক যুগ অতিবাহিত হচ্ছে, সেখানে এ সময়টি কোনো বিষয়ই নয়।
সাম্প্রতিক অতীতে জামুকা নামক যে সংস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে, তার কর্মকর্তাদেরও এ-বিষয়ে কোনো ধারণা ও মাথা ব্যথা ছিলো বলেও মনে হয় না। এসব বিষয়ে এ নিবন্ধকার এতোবেশি লেখালেখি ও প্রচেষ্টা চালিয়েও তাদের শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাতে পারিনি! অ-মুক্তিযোদ্ধা বিতাড়নের বিষয়ে দেশে যে একটা প্রবল দাবি উঠেছে, সে-ব্যাপারেও তাদের কোনো চৈতন্য ছিলো না। প্রায় ৮০/৮৫ হাজার অ-মুক্তিযোদ্ধা, এমনকি রাজাকারদেরও মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় রেখে দেয়ায় তারা যে সরকার তথা রাষ্ট্রের অর্থ ও অন্যান্য সুবিধাদি হাতিয়ে নিচ্ছে, অকারণে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে ভাগ বসিয়ে চলেছে- এসব বিষয় তাদের কোনোই বিবেচন ছিলো না। তাদের বিবেকেও বাঁধেনি। এসব বিষয়ে যারা সঠিক পরামর্শ দিতে পারে, তাদের সহযোগিতা নিতেও তাদের দেখা যায়নি। মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে ভুয়ামুক্ত করবে কি, তারা বরং নানান গোঁজামিলের সংজ্ঞা আবিষ্কার করে ভুয়াদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে চলেছেন। এর মূলে রয়েছে অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক বিবেচনা। বলা চলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা একটি নপুংসক স্বার্থান্ধ আত্মবিনাশী গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছিলাম। অপরদিকে রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরাও এ-ব্যাপারে একেবারেই নির্লিপ্ত ছিলেন! মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়ে তাদের কোনোই মাথাব্যথা ছিলো না। তারা ছিলো কীভাবে তাদের আত্মীয় পরিজনদেরও মুক্তিযোদ্ধা বানানো যায় তা নিয়ে বিভোর। ফলে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে তাদের মনে ও বিবেকে কোনো আবেদন সৃষ্টি হয়নি!
বীর মুক্তিযোদ্ধারা আজ জীবনের শেষপ্রান্তে অবস্থান করছেন। অবহেলায় অনাদরে ও মর্যাদাহীন অবস্থায় প্রতিদিন পাঁচ/ছ'জন করে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছেন। অধিকাংশই রোগে শোকে বয়সের ভারে নুয়ে থেকে চরমতম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। স্বাধীনতার সুফল ভোগকারীরা কি একটিবার ভেবে দেখেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবনের বিনিময়ে দেশটাকে স্বাধীন করেছিলো বলেই যিনি জীবনে যা কল্পনাও করেননি, তিনি তাই হয়েছেন, হচ্ছেন ও হবেন ! অথচ সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নূন্যতম মৌলিক অধিকার ও তাদের জাতীয় মর্যাদা নিশ্চিত করতে কারো কোনো মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় নি। এতোটা অবিবেচক ও অকৃতজ্ঞ কি কোনো মানুষ হতে পারে?
আসলে যে জাতি বা যারা তাদের জাতীয় বীরদের মর্যাদা ও অবদানের বিষয়ে নির্লিপ্ত থাকে, সেই জাতি বা তারা ভবিষ্যতে কোনো জাতীয় বীরদের আগমন আশা করতে পারে না। বঙ্গবন্ধু ঠিকই বলে গেছেন, আগাছা-পরগাছাগুলো দেশকে ধ্বংস করে দেয়। আমাদের দেশের আগাছা নামক অ-মুক্তিযোদ্ধা ও পরগাছা নামক ক্ষমতাবান ও লুটেরা অমানুষগুলো দেশ ও জাতির ইতিহাস চেতনা ও মর্যাদাকে ধ্বংস করে চলেছে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ চলতে পারে না।
লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
পাঠকের মতামত:
- নারায়ণগঞ্জে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে নবনিযুক্ত ডিসির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
- ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন সবচেয়ে সৎ রাজনীতিবিদ’
- বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা জোট গড়তে চায় পাকিস্তান
- মার্সেল ডিস্ট্রিবিউটর সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
- বাগেরহাটে দুই শতাধিক থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বিনামূল্যে রক্ত প্রদান, খুশি রোগী ও স্বজনরা
- সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব উপলক্ষে মতবিনিময় সভা
- ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ও সংবিধানে পাঁচ মূলনীতি চায় সংস্কার কমিশন
- ইংল্যান্ডকে হারাল বাংলাদেশের মেয়েরা
- ‘সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হবে’
- টিউলিপের পদত্যাগে তোপের মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
- ‘হত্যার বিচার না করতে পারলে আমাদের বাঁচার অধিকার নেই’
- আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা নিন্দনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক: ঐক্য পরিষদ
- নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি অনুমোদন
- পাংশায় ৪৬তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদ্বোধন
- গাইবান্ধায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ
- মহম্মদপুরে বিজ্ঞান মেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ
- সিদ্ধিরগঞ্জে সুতায় ব্যবহৃত কুন কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
- পঞ্চগড়ে ‘তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালা
- বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত
- ববি’র লাইব্রেরিসহ দুই হলের নাম পরিবর্তন
- ‘সংস্কার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন’
- বিকনলিংক ফিচারযুক্ত অপো ফোনের দাম কমল
- বোয়ালমারীতে ট্রেনের ধাক্কায় নছিমন চালক নিহত
- ফুলপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা অনুষ্ঠিত
- গোপালগঞ্জে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ডিসি অফিস পরিদর্শন
- একমাস পর সর্বনিম্ন সংক্রমণ শনাক্ত ভারতে
- বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির বিষ
- ডেঙ্গুতে আরও ৪ মৃত্যু, একদিনে হাসপাতালে ২৪১ জন
- খাগড়াছড়িতে বাঙ্গালি ছাত্র পরিষদের সড়ক অবরোধ
- মাকে বাঁচাতে জবি শিক্ষার্থীর আকুতি
- ‘পাকিস্তানের আক্রমণ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে’
- ‘পাকিস্তানের আক্রমণ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে’
- পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা
- নিউ ইয়র্কে সাকিব আল হাসানের নয়া কৌশলে চাঁদাবাজি
- থানা থেকে আসামি পালানোর ঘটনায় দুই পুলিশ সাময়িক বরখাস্ত
- শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে নানা আয়োজন
- বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল : কৃষিমন্ত্রী
- তোমার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর প্রথম যে ব্যক্তিটি খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, তিনি মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, যাকে তুমি পিতৃজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতে
- ইসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০১ আইনজীবীর আবেদন
- জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ভিসা দেয়া সম্ভব নয় : হোয়াইট হাউজ
- আরও কমল সবজির দাম
- আল জাজিরার প্রতিবেদনে ১৫ বিশিষ্ট নাগরিকের নিন্দা
- জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির রেজাউল সাতদিনের রিমান্ডে
- 'আমি নিশ্চিত, পিতা মুজিব যদি রাষ্ট্রপতির প্রটোকল মেনে বঙ্গভবনে থাকতেন, তাহলে বাঙালির এতো বড় মহাসর্বনাশ কেউ করতে পারত না'
- অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন নিহত