E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

এনালগ-ডিজিটাল প্রেম 

২০২৪ জুন ২১ ১৬:৫২:৩২
এনালগ-ডিজিটাল প্রেম 

শিতাংশু গুহ


শরৎচন্দ্রের ‘দত্তা’-র নায়ক নরেন-এর প্রতি নায়িকা জমিদার নন্দিনী বা জমিদার বিজয়া’র ভালবাসাকে বলা যায়, ‘এনালগ প্রেম’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘অমিত-লাবণ্য’ প্রেমও তাই। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে প্রেম  মোটামুটিভাবে ‘এনালগ’ তা হয়তো বলা যায়? আর এযুগে হুমায়ুন আহমদ, তিশা-করিম; অপু বিশ্বাসের ভালবাসা হচ্ছে, ‘ডিজিটাল প্রেম’। শুধু ওঁরা কেন, ‘ভালবাসা’র পুরো সামাজিক চিত্রটাই এখন ‘ডিজিটাল’। মানুষের জীবন ডিজিটাল হচ্ছে, আর প্রেম ‘এনালগ’ থাকবে তা তো হয়না! ও হ্যাঁ, এনালগ প্রেমের সংজ্ঞা হচ্ছে, একসাথে মন ও দেহ পাওয়া, এবং সেটি বিয়ের পর? আর ডিজিটাল প্রেম হচ্ছে, বিয়ে পরে, আগে উভয়ে-উভয়ের সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখে নেয়া? এনালগ প্রেম হচ্ছে, ‘পানসে’; আর ডিজিটাল প্রেম ‘উন্মত্ত’। কৌতুক অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘দুনিয়ার নিয়ম বিস্তর পাল্টাইছে’। সুতরাং প্রেমের নিয়ম পাল্টাবে সেটাই তো স্বাভাবিক। 

আমাদের এলাকায় এক গায়নীজ মেয়ের দু’টি বাচ্চা। থাকেন মায়ের বাড়ীর দোতালায়। সবাই দেখে স্বামী-স্ত্রী বাচ্চা দু’টি নিয়ে বিকালে ঘুরতে বেড়োন। সুখী পরিবার! মেয়েটি’র মা একদিন সবার ভুল ভাঙিয়ে দিয়ে জানান, ওঁরা স্বামী-স্ত্রী নন, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড। আঁতকে ওঠার কিছু নেই। বাচ্চা হবার জন্যে বিয়ে জরুরি নয়। আমাদের দেশীয় সমাজে এই বাচ্চা হবার ভয়টা না থাকলে ছেলেদের কপাল খুলে যেতো। বাংলাদেশ ডিজিটাল হচ্ছে, ভালবাসাটা এখনো ‘এনালগ-ডিজিটাল’র মধ্যখানে। সামাজিক মাধ্যমে দেখি, ঢাকায় এখন বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড কালচার ভালোই চলছে। এটি ডিজিটাল ভালবাসা। দু:খ হয় আমাদের সময় এই কালচার ছিলোনা, প্রেম ছিলো এনালগ। আমাদের এক বন্ধু পড়াশোনা শেষ করেই জার্মানী চলে যায়, এবং চুটিয়ে ডিজিটাল প্রেমে জড়িয়ে পরে? এখন বয়স হয়েছে, বলে, দেশে থাকতে আমরা কতই না আহাম্মক ছিলাম।

কিছুকাল আগে আমার এক তরুনের সাথে পরিচয় ঘটে, ইতালীয় বংশোদ্ভূত। ফর্সা, সুদর্শন, কিছুটা মেয়েলী। একদিন জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তুমি কি বিবাহিত?’ উত্তর, হ্যাঁ। তোমার স্ত্রী কি করেন? বললো, স্ত্রী নয়, স্বামী, তিনি ইঞ্জিনিয়ার। এনালগ যুগে কোন পুরুষকে কেউ হয়তো ‘স্ত্রী’ হতে দেখেননি, ডিজিটাল যুগে এটি সম্ভব। ‘গে’ ও ‘লেসবিয়ান’ নিয়ে কথা বলছি না। আমার আগের এক অফিসে এক বয়োবৃদ্ধ পুরুষ একদিন জানতে চাইলো, ‘গুহ, ‘গে’ নাহয় বুঝলাম, কিন্তু লেসবিয়ানরা করে কি’? তাকে উন্নত মানের কোন ‘সেক্স-শপ’-এ যাওয়ার পরামর্শ দেই। লন্ডনের রাসেল স্কয়ারে আমরা একবার একটি বিশাল ‘সেক্সষ্টোরে’ ঢুকি। এলাহী কান্ড। টমাস-দা তো বের হতেই চায়না। গে হবার কারণে ঢাকায় ‘জুলহাস মান্নান’ মৌলবাদীদের হাতে খুন হয়েছিলো, অথচ মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত মাদ্রাসায় হুজুরদের এ অপকর্মের সংবাদ হরদম বেরুচ্ছে, অথচ তাদের কিন্তু কেউ গে বলেনা, কারণ হয়তো এরা ‘উভচর’-অর্থাৎ এঁরা জলে ও ডাঙ্গায় সমানভাবে পারদর্শী!

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test