আজ সিলেট মুক্ত দিবস

সিলেট প্রতিনিধি : আজ ১৫ ডিসেম্বর। সিলেট মুক্ত দিবস। এদিন মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করেছিলেন সিলেটের মুক্তিকামী মানুষ। ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে সেদিন মুখর ছিল সিলেটের অলিগলি। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব বয়সী মানুষ ছিলেন আনন্দে উদ্বেল। সব স্লোগান, সব কণ্ঠস্বর একই স্রোতে মিশে গিয়েছিল সেদিন।
স্বাধীনতার লক্ষ্যে সারা দেশের মতো সিলেটও ছিল ঐক্যবদ্ধ, অবিচল। পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর বর্বর শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সিলেটের মানুষ। একটি স্ফূলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠেছিলেন মুক্তিকামী মানুষ। দৃশ্যপটের এই শহরে সেদিন বইছিল ভিন্ন বাস্তবতা। চারদিকে, জ্বলছিল আগুনের লেলিহান শিখা। বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল আলী আমজাদের ঘড়ি। কিন ব্রিজ হয়েছিল দ্বিখণ্ডিত। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল বিভিন্ন নির্মাণ, আবাসভূমি।
৬ ডিসেম্বর সিলেট শহরে প্রচণ্ড বোমা হামলা শুরু হয়। এই হামলা ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে মুক্তিবাহিনীর একটি দল খাদিমনগর এলাকায় এসে অবস্থান নেয়। একই দিন মুক্তিযোদ্ধাদের আরো কয়েকটি দল দক্ষিণ জালালপুর ও পশ্চিম লামাকাজিতে আসে। তখন ফাঁকা ছিল শুধু উত্তর দিক। কিন্তু সেদিকে সীমান্তবর্তী পাহাড়, বনাঞ্চল থাকায় হানাদারদের পালাবার কোনো পথ ছিল না। তারপর হঠাৎ একদিন নাম না জানা দু’জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা খাদিমনগর থেকে একটি গাড়িতে চড়ে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের জন্য বেশ কয়েকঘণ্টা শহরে মাইকিং করতে থাকেন। তাদের সেই মাইকিংয়ের মধ্যদিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনে নতুন করে সাহসের সঞ্চার হয়। তখন সিলেট শহর ছিল পুরোদমে উত্তপ্ত।
এদিকে, মাইকিং করতে করতে সাহসী মুক্তিযোদ্ধা দু’জন ক্রমান্বয়ে শহরের দিকে আসেন। পথে পথে, বাসাবাড়ি, দোকানপাটে থাকা উদ্বিগ্ন মানুষ তাদের কণ্ঠের ধ্বনি শুনে আবেগ আপ্লুত হয়েছিলেন। বাহ, বাহ দিচ্ছিলেন সবাই। যে গাড়িতে মাইকিং চলছিল সেই গাড়ির পেছনে আরেকটি গাড়িতে করে শহরের দিকে আসছিলেন মুক্তিযুদ্ধে উত্তরাঞ্চলের (১) বেসামরিক উপদেষ্টা, তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজী ও মিত্রবাহিনীর অধিনায়ক কর্নেল বাগচী। শহরের লোকজন অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে তাদের যাত্রা দেখছিলেন। তখন হানাদারদের অবস্থান ছিল সিলেট সরকারি কলেজের আশপাশে। তারাও শক্ত অবস্থানের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।
ক্রমান্বয়ে (গোপনে) তারা সংগঠিত হওয়ার জন্য শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু মাইকিং করার পর শত্রুরা আত্মসমর্পণের বিষয়টিকে উড়িয়ে দেয়। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদিমনগরের দিকে ফিরে যেতে হয়। ওইদিন কদমতলী এলাকায় ঘটে আরেক ঘটনা। একটি ইটখোলায় থেকে যাওয়া ২১ জন পাকি সেনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ৩৫ জনের মিত্রবাহিনীর একটি দল।
ওই দলের সঙ্গে সেদিন আরো ছিলেন- মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক, গামা, আফরাইন, আব্দুল মতিন, ম. আ. মুক্তাদির, মনির উদ্দিন, ইশতিয়াক আহমদ, বেলায়েত হোসেন, বেলায়েত হোসেন খান, জামানসহ ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ওইদিন মোকাবিলা করেছিলেন শত্রুদের। সেদিনের অপারেশনে নেতৃত্ব দেন রানা নামে এক ভারতীয় সুবেদার। প্রায় ৯ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধের পর নিরুপায় হয়ে পাকিরা আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয়। এরপর শুরু হয় আরেকটি অধ্যায়। মাছিমপুর থেকে নিক্ষিপ্ত একটি শক্তিশালী মর্টার এসে আঘাত করে সুবেদার রানাকে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিহত হন। আহত হন মিত্রবাহিনীর আরো দুই সদস্য। তবে তাদের নাম সেদিন জানা ছিল না কারো।
পরে ১৪ ডিসেম্বর সরকারি কলেজের আশপাশ থেকে শত্রুরা তাদের অবস্থান তুলে নেয়। ওইদিন দুপুরে দেওয়ান ফরিদ গাজী ও কর্নেল বাগচী বিনা প্রতিরোধে শুধু শহরেই নন; বিমানবন্দরের পাশে গড়ে ওঠা শত্রুদের মূল ঘাঁটির কাছাকাছি পর্যন্ত ঘুরে আসেন। ইতোমধ্যে ‘জেড’ ফোর্সের সেনারা সিলেট এমসি কলেজ সংলগ্ন আলুরতলে সরকারি দুগ্ধ খামারের কাছে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়। তখন পাকিস্তানি সৈন্যরা সবদিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ওইদিন সন্ধ্যায় চারদিক থেকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর জওয়ানরা দলবদ্ধভাবে এবং স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে সিলেট শহর। পাড়ামহল্লা, অলিগলি প্রকম্পিত হয়ে ওঠে তাদের পদধ্বনিতে। জয় বাংলা জয় বাংলা স্লোগানে সরে যায় রাজাকার-আলবদরদের পায়ের তলার মাটি। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা রাতেই গা-ঢাকা দিতে শুরু করে।
পরদিন ১৫ ডিসেম্বর সকালে সব বয়সী মুক্তিপাগল মানুষের ঢল নামে শহরে। তাদেরকে ঘিরে ভিড় জমে পথে পথে। ঘড়িতে তখনো ১২টা হয়নি। শহরবাসী মাইকের মাধ্যমে গোটা সিলেটে প্রচার করতে থাকেন ‘সিলেট হানাদারমুক্ত সিলেট হানাদারমুক্ত’। সেই থেকে সিলেট মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠন র্যালি-আনন্দ শোভাযাত্রা এবং আলোচনাসভাসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬)
পাঠকের মতামত:
- ছোটপর্দায় আজকের ঈদ আয়োজন
- ঈদ আনন্দে সামিল হলেন রোনালদোও
- ঈদে ট্রেনের ফিরতি যাত্রা শুরু ২ এপ্রিল
- ‘ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠবে’
- জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপি নেতাদের শ্রদ্ধা
- ‘ফ্যাসিস্টমুক্ত নতুন বাংলাদেশে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা’
- বিশ্ববাজারে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম
- কারাগারে ‘মলিন’ ঈদ দাপুটে আ.লীগ নেতাদের
- সালথার বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত
- খালেদা জিয়া এপ্রিলে দেশে আসছেন : মিল্লাত
- দিনাজপুরে দেশের অন্যতম বৃহৎ ঈদ জামাত
- পাংশাবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইউএনও এসএম আবু দারদা
- ঢাকার রাস্তায় বর্ণাঢ্য ঈদ আনন্দ মিছিল
- পুতিনের ওপর ‘খুব রেগে’ আছেন ট্রাম্প
- ‘যত বাধাই আসুক ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়বই’
- রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনে হতাহত ৩৭
- মহম্মদপুরে ‘নবমতি পদক প্রদান’ ও ‘এই দেশে এক জুলাই এসেছিল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
- ২ সহস্রাধিক মানুষের মাঝে বিএনপি নেতা হাবিবের ঈদ উপহার প্রদান
- নড়াইলে দু'পক্ষের সংঘর্ষে ১ জন নিহত, আহত ৪
- চট্টগ্রামে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৫
- জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
- জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত
- বিএনপি নেতার উদ্যোগে দরিদ্রদের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণ
- দিনাজপুর শহর শত্রুমুক্ত হয়
- ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ
- ৯ বছর পর সিরিজ জিতল পাকিস্তান
- মহাকুম্ভ
- পলাশবাড়ীতে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস পালিত
- আওয়ামী লীগ থেকে অন্য দলগুলো কী শিক্ষা গ্রহণ করবে?
- মহম্মদপুরে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান
- পাংশা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জনবল সংকটে দাপ্তরিক কার্যক্রম ব্যাহত
- সাংবাদিকদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদলেন হাজী মুজিব
- যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ উপদেষ্টা-গভর্নরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত
- আগৈলঝাড়ায় সাড়ে ৬ হাজার কিশোরীর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি শুরু
- ১৬ বছর পর আজ নতুন সভাপতি পাচ্ছে বাফুফে
- কেটে গেলো নিষেধাজ্ঞা, ফের অধিনায়ক হতে পারবেন ওয়ার্নার
- নিউ ইয়র্কে চট্টগ্রাম সমিতির নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ, পরিকল্পিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান
- প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ফল ১৪ ডিসেম্বর
- ‘বিএনপি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি, দলটি নিশ্চিতভাবে বঙ্গোপসাগরে ডুববে’
- ডিমের পর বাজার গরম পেঁয়াজের
- পাকহানাদার বাহিনী শহরে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে
- তুলসী গ্যাবার্ড’র বক্তব্য সঠিক এবং সত্য
- রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে বন্ধ ‘বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা’
- ২০৩১ সালের পর শুরু হবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষা কার্যক্রম
- বাগেরহাটে ছেলের হত্যাকারীর বিচার চেয়ে মায়ের আকুতি