E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

২৩ আগস্ট, ১৯৭১

মুক্তিবাহিনী কুমিল্লায় পাকসেনাদের জগন্নাথ দিঘী ঘাঁটি আক্রমণ করে

২০২৪ আগস্ট ২৩ ১২:১১:২৭
মুক্তিবাহিনী কুমিল্লায় পাকসেনাদের জগন্নাথ দিঘী ঘাঁটি আক্রমণ করে

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : কুমিল্লায় মেজর জাফর ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদল চিয়ারা গ্রামে অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং ২৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। কিছু পাকসেনা আহত অবস্থায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

মুক্তিবাহিনী কুমিল্লায় পাকসেনাদের জগন্নাথ দিঘী ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর চারটি বাঙ্কার ধ্বংস হয় ও অনেক পাকসেনা হতাহত হয়। আক্রমণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।

২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ৪র্থ বেঙ্গলের ‘এ’ ও ‘সি’ কোম্পানী পাকসেনাদের নয়ানপুর রেলস্টেশন অবস্থানের ওপর উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে মর্টার ও ১০৬-রিকয়েললেস রাইফেলের সাহায্যে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকবাহিনীর কয়েকটি শক্ত বাঙ্কার বিধ্বস্ত হয়এবং অনেক পাকবর্বর হতাহত হয়।

কুমিল্লায় পাকসেনাদের একটি নৌকা সেনেরবাজার ঘেঁষে আসতে থাকলে মুক্তিবাহিনীর এ্যামবুশ দল শত্রু নৌকাটির ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে ৭ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। অবশিষ্ট সেনারা নৌকাটিকে তাড়াতাড়ি পশ্চিম তীরে ভিড়িয়ে নৌকা থেকে নেমে গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।

৭নং সেক্টরে ক্যাপ্টেন ইদ্রিস ও সুবেদার মেজর মজিদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদল পাকবাহিনীর কানসাট অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। প্রায় চারঘন্টা স্থায়ী এই ভয়াবহ যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রচুর সৈন্য হতাহত হয় ও ব্যাপক ক্ষতি হয়।

ঢাকায় প্রাদেশিক সরকারের জনৈক মুখপাত্র বলেন, বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত সব সদস্যকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ৮৮ জন এম.এন.এ. ও ৯৪ জন এম.পি.এ.-র বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ফলে তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই সঙ্কট মুহুর্তে অর্পিত দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে তাদের দ্বিধাবোধ করা উচিত নয়। সরকার তাদের পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

লাহোরে পূর্ব পাকিস্থান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আজম বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় চরদের (মুক্তিযোদ্ধা) প্রধান শিকার জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের (আওয়ামী লীগ) বিরোধীতা করার জন্য সেখানে বহু জামায়াত কর্মী দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) হাতে প্রাণ হারিয়েছে। একমাত্র জামায়াত ইসলামী প্রদেশের প্রতিটি অংশে দুষ্কৃতকারীদের মোকাবেলা করছে।

লন্ডনে পিডিপি নেতা মাহমুদ আলী বলেন, ‘আমি প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বলছি, পত্র-পত্রিকায় যা প্রকাশিত হয়েছে পরিস্থিতি ঠিক তার বিপরীত। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যে সব প্রশ্ন তুলেছেন তা ঠিক নয়। ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসনে দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। মিল, কলকারখানা, ডকইয়ার্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান বাঙালী অফিসারদের দ্বারা পরিচালিত হয়। কেন্দ্রেও বাঙালীরা উচ্চ পদে রয়েছে।

হাতিয়ার নলচিরা বাজার জামে মসজিদে এলাকার দালালরা একত্র হয়। এতে মাহমুদুর রহমানকে সভাপতি, সৈয়দ আহমদ খানকে সম্পাদক এবং মৌলভী ছালেহ উদ্দিনকে যুগ্ম সম্পাদক করে নলচিরা ইউনিয়ন শান্তি কমিটির কার্য নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়।

‘বাংলাদেশ’ সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় :
বাংলাদেশের বহু বিচিত্র দেওয়ালের লিখন দেখেছি। কোথাও দেখেছি ‘পাঞ্জাবী কুকুর বাংলা ছাড়’, আবার কোথাও দেখেছি ‘পশ্চিম পাকিস্তানি পশুরা মানুষ হত্যা করছে, আসুন আমরা পশু হত্যা করি।’ স্থানে স্থানে প্রত্যক্ষ করছি, বঙ্গবন্ধু দীর্ঘজীবী হউক। এক জায়গায় দেখেছি লেখা রয়েছে ‘মুজিববাদ দীর্ঘজীবী হউক’।

আজকে শেখ মুজিব কোন ব্যক্তির নাম বা কোন দলীয় প্রধান নয়। শেখ মুজিব এক কালজয়ী আদর্শ, এক জ্বলন্ত শিখা। এই অগ্নি-শিখার আলোকে অনাগত ভবিষ্যতের অগনিত নিপীড়িত জনতা পথ দেখে নেবে। বিশ্বের যেখানে অত্যাচার, অনাচার,সাম্রাজ্যবাদী শোষণ-শাসন, ফ্যাসিবাদী নির্যাতন, নির্মম আঞ্চলিক বৈষম্য বিরাজমান, সে সব এলাকার মানুষের জন্য মুজিব এক বলিষ্ঠ সোচ্চার প্রতিবাদ, স্বৈরতন্ত্র ও সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে অনড় চ্যালেঞ্জ; বাস্তব, প্রাণবন্ত ও নির্ভেজাল গণতন্ত্রের প্রতীক এবং শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার বিমূর্ত প্রকাশ।

বিশ্বের দেশে দেশে আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে, রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শাসন-শোষণ; অত্যাচার, অনাচার, নিপীড়নের অবসান আজ ও ঘটেনি। আজও স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরছে। অনাগত বিশ্বে এই জাতীয় বৈষম্য, শোষণ-শাসন বা নিপীড়নের রূপান্তর ঘটবে বটে , তবে একেবারে তিরোহিত হবে না। এই জাতীয় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যাধি নিরসনের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা প্রয়োজন। এর নাম ৬ দফা না হলেও কিছু একটা হবে। কিন্তু এর প্রতিষ্ঠাতার আবেদন চির ভাস্কর। মুজিববাদ তাই স্থান-কাল-জয়ী-।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
(ওএস/এএস/আগস্ট ২৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test