E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমীপে [পর্ব : দুই]

২০১৬ মে ২৯ ২১:০৪:০৩
আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমীপে [পর্ব : দুই]

পরম শ্রদ্ধাভাজন আপা,
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর চরম বৈরি পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকি নিয়ে ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে টিকিয়ে রেখেছিলেন যারা তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাবেক এম পি ইমাম উদ্দিন আহমেদ, এস এম নুরুন্নবী, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ও মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল, জনপ্রিয় জননেতা ও স্বৈরশাসকদের আতংক, ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টার, ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের অনেকটাই কিবদন্তি, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ফরিদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান হাসিবুল হাসান লাবলু, ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষ, ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শহীদুল ইসলাম নীরু, ফরিদপুর শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খোন্দকার মঞ্জুর আলী, কোতোয়ালি থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খলিফা কামাল উদ্দিন, ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এসএম শাহ আলম মুকুল প্রমুখ।

তারা আজ কোথায়, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলেই আপা আপনি পেয়ে যাবেন উত্তর , কেমন আছে বঙ্গবন্ধুর তথা শেখ হাসিনার প্রিয় সংগঠন আওয়ামীলীগের ফরিদপুর চ্যাপ্টার, ফরিদপুরে আওয়ামীলীগ এখন কাদের নিয়ন্ত্রণে, তারা সংগঠনের ব্যানারে কোন কোন অপকর্ম করে আওয়ামীলীগকে কালিমালিপ্ত করছে ইত্যাদি নানা জরুরি প্রশ্নের।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ফরিদপুরে কিংবদন্তি ছিলেন ইমাম উদ্দিন আহমেদ। বঙ্গবন্ধুর ক্ষুরধার কর্মী ইমাম উদ্দিনের আহমেদের শেষ বছরগুলো কেটেছে চূড়ান্ত অবহেলায়। ফরিদপুরের হাল আমলের আওয়ামীলীগ নেতারা তাকে 'বুড়ো খাটাশ' বলে টিপ্পনী কাটতেন। ওই অবহেলা বুকে চেপে অনেকটাই ডেকে আনা সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ইমাম উদ্দিন আহমেদ তথা একাত্তরের বীর সংগ্রামী ইমাম ভাই।

ফরিদপুর আওয়ামীলীগে আরও একজন 'বুড়ো খাটাশ' নিজের স্বকীয়তা বিকিয়ে নব্য আওয়ামীলীগারদের সাথে 'জি হুজুর' মার্কা কষ্টকর সম্পর্ক বজায় রেখে কোনো মতে 'সম্মান' বাঁচাতে বাঁচাতে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ও মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার, প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা পদ-পদবীর তোয়াক্কা না করে যারা ফরিদপুর আওয়ামীলীগকে লুটপাটের কারখানা বানিয়েছেন, তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করা তার স্বভাব। আর তারই জের ধরে খুন করবার উদ্দেশ্য নিয়ে ক্যাপ্টেন বাবুলকে চাপাতি দিয়ে নৃশংসভাবে কোপানো হয়। কোনো মতে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। বয়সের কাছে আত্মসমর্পণ না করা এক সাহসী তরুন সেই ক্যাপ্টেন বাবুল এখন আরেক 'বুড়ো খাটাশ'-এর খেতাব নিয়ে অনাদর-অবহেলায় মৃত্যুর দরজার দিকে উদাস তাকিয়ে সময় কাটাচ্ছেন।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি ছিলেন এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টার। হাল আমলে তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। তিনি এক সময় ফরিদপুর শহরতলীর চরমাধদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের জননন্দিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ফরিদপুর আওয়ামীলীগের সংকটকাল, স্বৈরশাসক জিয়া-এরশাদের ক্যাডারবাহিনী আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগের কর্মীদের মিছিল পর্যন্ত করতে দিতো না, সেই দুঃসময়ে ভোলা মাস্টার এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধুর বাঁশের লাঠি সজ্জিত বিশাল কর্মী বাহিনী ফরিদপুর শহরে এনে আওয়ামীলীগের শক্তি দেখিয়েছেন স্বৈরশাসকদের স্থানীয় এজেন্টদের। স্বৈরশাসকদের স্থানীয় এজেন্টরা আওয়ামীলীগের সাথে শক্তিতে হেরে ভোলা মাস্টারের বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা সাজিয়েছেন; আত্মসমর্পণ না করে ভোলা মাস্টার মাসের পর মাস কারানির্যাতন সয়েছেন। সেই এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টার আজ আওয়ামীলীগের কোথাও নেই। নিরিবিলি আইন পেশা করে যাবেন, সেটাও পারেন না; কখন আবার চাপাতি হামলা হয়!

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে টগবগে এক তরুণ নেতা অনেকটাই তরুণদের বংশীবাদক হিসেবে আবির্ভূত হন হাসিবুল হাসান লাবলু। জেল জুলুম হুলিয়া নিয়ে ফরিদপুরের তরুণ ও শ্রমিকদের চোখের মনি হয়ে ওঠেন লাবলু। ফরিদপুরের সাধারণ মানুষও তাকে ভালবাসা উজার করে কোলে তুলে নেয়। বিপুল ভোটে এক পর্যায়ে হাসিবুল হাসান লাবলু ফরিদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে মিথ্যা মামলায় লাবলুকে কারাগারে ঢুকানো হয়। তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনের মুখে তিনি মুক্তি পেলেও চেয়ারম্যান পদটি আর ফিরে পাননি। ওয়ান-ইলেভেনের পর বিশাল জনসমর্থন নিয়ে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলেও রহস্যজনক কারণে হাসিবুল হাসান লাবলু ফিরে পাননি ফরিদপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের চেয়ারটি। দলেও তাকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়। চূড়ান্ত অবহেলা আর অভিমান নিয়ে সকলের কাছ থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নেন জনগনের নেতা, অনেকটাই রাজনীতির কিবদন্তি লাবলু।

হাসিবুল হাসান লাবলুর সমসাময়িক সময়েই তারুণ্যের জোয়ার নিয়ে ফরিদপুর আওয়ামীলীগকে বেগবান করেন রাজনীতির আরেক নায়ক বিপুল ঘোষ। বেশ কয়েকবার কারানির্যাতনও সয়েছেন তিনি। জিয়ার শাসনামলে তিনি একটানা ৪ বছরেরও বেশী সময় কারানির্যাতন ভোগ করেন। এরশাদের শাসনামলে তিনি ১৭ বারেরও বেশী কারাবরণ করেন। বিপুল ঘোষ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী সমর্থকদের মন জয় করে হয়েছেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। ফরিদপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে হাইব্রিডদের প্রাধান্যকে তিনি বরদাশত করেননি, প্রতিবাদ করেছেন। এই প্রতিবাদী অবস্থানের কারণে তাকে শায়েস্তা করতে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে না পেয়ে তার পারিবারিক ইটভাটা ধ্বংস করে এক কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। সেই বিপুল ঘোষ চরম অসম্মান নিয়ে নিজেকে গৃহকোণে রাখতে রাখতে এখন জটিল হৃদরোগী। হৃদযন্ত্রের বাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে। আপা, সেই বিপুল ঘোষ আপনার কাছেও হাত পেতে চিকিৎসা সহায়তা নিয়েছেন। কিন্তু আরও টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় তিনি জরুরি চিকিৎসা করাতে পারছেন না। বাস্তবে তিনি এখন বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সাথে লড়ছেন।

ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বিপুল ঘোষ যখন জিয়ার রুদ্ররোষে বছরের পর বছর কারাগারে তখন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শহীদুল ইসলাম নীরু সংগঠনের হাল ধরেন। রাজনৈতিক ওই বৈরি সময়ে সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ফরিদপুরের ছাত্রলীগককে তিনি একটি শক্ত অবস্থানে দাঁড় করান। পরে তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিও হন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায়, দারুণ সম্ভাবনাময় সেই তরুণ শহীদুল ইসলাম নীরু রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন ফরিদপুর শহর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার খোন্দকার মঞ্জুর আলী ও কোতোয়ালি থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খলিফা কামাল উদ্দিন। আওয়ামীলীগের সকল দুর্দিনে সংগঠনকে জীবনের চেয়ে বেশী মূল্য দিয়েছেন তাঁরা। অথচ আজ দাপটের সাথে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়, কিন্তু খোন্দকার মঞ্জু ও খলিফা কামাল দলের কোথাও নেই; ভাবখানা এমন, ওদেরকে কারা যেন দলে নিষিদ্ধ করেছে!

ফরিদপুরে জনপ্রিয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এসএম শাহ আলম মুকুল ছিলেন সদ্য বিলুপ্ত ফরিদপুর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক। তিনি ফরিদপুর জেলা মিনি বাস মালিক সমিতির সভাপতিও ছিলেন। দলের সকল সংকটকালে সবরকমের ঝুঁকি নিয়ে তিনি রাজপথে থেকেছেন। পরিতাপের বিষয়, আজ ফরিদপুর আওয়ামীলীগের কোথাও নেই শাহ আলম মুকুল। মুকুলকে বিতাড়িত করা হয়েছে ফরিদপুর জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতির পদ থেকে। এমনকি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে ছাড়া করা হয় ফরিদপুরও।

পরম শ্রদ্ধাভাজন আপা,
দারুণ ট্রাজেডি হল, আজকের চিঠির এই পর্বে আওয়ামীলীগের ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতা হিসেবে আমি যাদের নাম উচ্চারণ করলাম, তারা প্রায় সবাই ফরিদপুর আওয়ামীলীগের বর্তমান কর্ণধার এক অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে নেতার আসনে বসিয়েছিলেন। এটা তারা করেছিলেন আপনার সম্মান রাখতেই। কিন্তু নিয়তি নেতা বানানোর কারিগরদের আস্তাকুরে ফেলে দিয়েছে।

ক্ষোভ হতাশার কথা আর কাকেই বা বলবে আপনার অনুসারীরা! আপনি ছাড়া তো ভরসার আর কোনো জায়গা নেই।

ভালো থাকবেন আপা।কাল চিঠি লিখবো আবার।

ইতি
আপনার স্নেহধন্য
প্রবীর
২৯ মে, ২০১৬

পাঠকের মতামত:

০২ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test