E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

টাঙ্গাইলের পথে পথে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জারুল

২০২৫ এপ্রিল ২৯ ১৬:১৫:১৬
টাঙ্গাইলের পথে পথে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জারুল

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : সবুজ-শ্যামল আমাদের এ বাংলা। দু মাস পরপর ঋতু বদল হয়। ঋতুরাজ বসন্তের পরে আসে গ্রীষ্ম। আর সবুজ শ্যামল আমাদের দেশে ঋতুবৈচিত্র্যের পরিবর্তন যে সৌন্দর্য নিয়ে আসে, তা এই প্রকৃতিকে ঘিরেই, এ সবুজকে ঘিরেই। আর এই প্রকৃতিকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে তোলে নানান রকম ফুল। গ্রীষ্মে ফোটা তেমনই একটি অন্যতম ফুল জারুল।

জারুল শুধু সৌন্দর্য বিলায় না, রয়েছে ঔষধি গুণও।

জারুল বেড়ে উঠে অযত্নে আর অবহেলায়। রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত জমি বা আগাছা বেষ্টিত নির্জন কোন স্থানে। জারুল ফোটে আপন মহিমায়। এর কোন যত্ন বা পরিচর্যার দরকার হয় না। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেই জারুল তার মুগ্ধতা ছড়ায়।

জারুলকে বলা হয় বাংলার চেরি। দু চোখ ভরে উঠে তার অপরূপ রূপ দেখে। গ্রীষ্মের দাবদাহে ধরা যখন উষ্ণ হয়ে ওঠে তখন সেই উষ্ণতাকে ম্লান করে দিয়ে হেসে ওঠে জারুল । জারুলের রঙে মুগ্ধ হয়ে কবি আহসান হাবিব তার স্বদেশ কবিতায় লিখেছেন:-

‘মনের মধ্যে যখন খুশি
এই ছবিটি আঁকি,
এক পাশে তার জারুল গাছে দুটি হলুদ পাখি।’

গাঢ় সবুজ পাতার মাঝে মাথা উঁচু করে থাকে থোকায় থোকায় জারুল ফুল। পুরো গাছ ভরে যায় ফুলে ফুলে। গাঢ় বেগুনি ও গোলাপি জারুলে চোখ আটকে যায়। মোহনীয় সৌন্দর্যের এ ফুল দেখে চলতে চলতে থমকে যায় পথচারী।

জারুল গ্রীষ্মকালে ফোটা শুরু হলেও শরৎকাল পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি। এটি পাতা ঝরা বৃক্ষ। শীতকালে পাতা ঝরে যায়। বসন্তকালে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মকালে ফুল আসা শুরু হয়। গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ এই তিন ঋতুকে রাঙিয়ে দেয় জারুল। সুশোভিত এই জারুলের আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায় হলেও এটি ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলগাছের দেখা মেলে।

জারুল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম লেজারস্ট্রমিয়া স্পেসিওসা। নামটির প্রথম অংশ এসেছে সুইডেনের অন্যতম তরু অনুরাগী লেজারস্ট্রমের নাম থেকে। স্পেসিওসা লাতিন শব্দ, যার অর্থ সুন্দর।

জারুলের লেজারস্ট্রমিয়া ইনডিকা নামে ছোট একটি প্রজাতি রয়েছে, যা আমাদের দেশের সিলেট ও কিশোরগঞ্জ এলাকায় চোখে পড়ে।

‘জারুল’ ফুলকে অনেকেই কম-বেশি চিনে থাকেন। কিন্তু ‘ছোট জারুল’ ফুলটিকে তেমনভাবে অনেকেই চেনেন না। আর গাছটিকেও দেখা যায় না তেমন। ছোট জারুলের অনেক নাম বিচিত্র রয়েছে।

যেমন: ‘তিলা জারুল’, ‘জলধর’, ‘তিনিশ’, ‘চক্রী, প্রভৃতি। তবে আশ্চর্যের বিষয় – অপূর্ব সুন্দর এই ফুলটিকে কেউ কেউ আবার ‘ফুরুশ’ নামক এমন উদ্ভট শব্দেও উল্লেখ করে থাকেন!

‘ছোট জারুল’ ফুলের ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান লিলাক ( Indian Lilac) এবং বৈজ্ঞানিক নাম - লাজাস্ট্রইমিয়া ইন্ডিকা ( Lagerstroemia indica)।

জারুলগাছ মধ্যমাকৃতির পত্রমোচী বৃক্ষ। ম্লানধূসর মসৃণ কা-বিশিষ্ট জারুল ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর পাতা বড়, পুরু ও গাঢ় সবুজ। ৬-৮ ইঞ্চি দীর্ঘ, লম্বাটে ও মসৃণ। এর পাতার পিঠের রঙ ঈষৎ ম্লান। গাছের শাখা-প্রশাখা, ডালপালা, খুবই শক্ত। ফুলের বোটাও শক্ত। মঞ্জরি অনিয়ত, শাখায়তি, বহুপৌষ্পিক ও প্রান্তিক। জারুলের ফুলের বেগুনি বর্ণ যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি শোভনীয় তার পাঁপড়ির নমনীয় কোমলতা। জারুলের বেগুনি ও গোলাপি রঙের ফুল থাকলেও আমাদের দেশে বেগুনি রঙ বেশি দেখা যায়। অনেক সময় সাদার কাছাকাছি এসে পৌঁছায় কিছু ফুলের রঙ। জারুল ফুলগুলো থাকে শাখার ডগায়, পাতার ওপরের স্তরে। প্রতিটি ফুলের থাকে ছটি করে পাপড়ি, মাঝখানে পুংকেশরের সঙ্গে যুক্ত হলুদ পরাগকোষ। থোকায় থোকায় ফোটে ফুল। বোটার গোড়া থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ডগায় যায়। ফুল শেষে গাছে বীজ হয়। বীজ দেখতে গোলাকার ও কালো। জারুল বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে।

বরেণ্য উদ্ভিদবিজ্ঞানী, প্রকৃতি গবেষক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ড. নওয়াজেশ আহমদ এ ফুল সম্পর্কে লিখেছেন, ‘ছোট জারুল ঔষধিগুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। উষ্ণবীর্য, কফ এবং রক্ত অতিসারনাশক। এছাড়াও মলসংগ্রাহক, দাহজনক এবং শ্রেষ্ঠ বায়ুরোগনাশক। এর পাতা ও ফলের মধ্যে রয়েছে ইলাজিটানিস, এলামাইন এবং মেনথালিন। ’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘পুরোনো পাতায় আছে হাইপোগ্লাইকেমিক, যা অনেকটা ইনসুলিনের মতো কাজ করে থাকে। এর পাতার রস ডায়াবেটিস রোগের উপকারী বলে উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। ’

(এসএএম/এএস/এপ্রিল ২৯, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test