E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ঈদ-নববর্ষ ঘিরে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লিতে বেড়েছে ব্যস্ততা

২০২৫ মার্চ ২২ ১৪:৫৬:০৬
ঈদ-নববর্ষ ঘিরে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লিতে বেড়েছে ব্যস্ততা

মোহাম্মদ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : আর কিছু দিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর।
এর পরেই আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ।  ঈদ ও নববর্ষকে সামনে রেখে  টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লিতে বেড়েছে ব্যস্ততা। তবে ব্যস্ততা বাড়লেও পুরোদমে এখনো জমে ওঠেনি শাড়ির বাজার। টাঙ্গাইলের স্থানীয় বাজারে শাড়ির চেয়ে বেশি চাহিদা দেশি-বিদেশি থ্রি পিচ,টু পিচের। তবুও দেশ-বিদেশে তাঁতের শাড়ির চাহিদা মেটাতে ও আসছে নববর্ষ উপলক্ষে বাহারি ডিজাইন আর নতুন নকশায়  শ্রমিকরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শাড়ি তৈরি করছেন।চিরচেনা রূপে ফিরেছে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লিগুলো। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও মেতেছেন কর্মযজ্ঞে। এবার ঈদে দেড় লাখ পিস শাড়ি বিক্রির আশা তাঁত মালিকদের।

ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবার ঈদেও টাঙ্গাইল শাড়িতে এসেছে বাহারি ডিজাইন আর নতুনত্ব। তবে মজুরি কম পাওয়ায় হতাশ তাঁতীরা। ঈদের পরই বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। এই দুই উৎসবে নারী-পুরুষ সবাই নতুন পোশাক পরেন। নারীদের উৎসবের পোশাক মানেই শাড়ি। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির প্রতি রয়েছে আলাদা টান। তাই সব মিলেয়ে দম ফেলার ফুরসত নেই তাঁত শ্রমিকদের।

জানা যায়, তাঁতের রাজধানী টাঙ্গাইলের পাথরাইল ছাড়াও বাজিতপুর, এলাসিন, করটিয়া, বল্লা, এনায়েতপুর, পোড়াবাড়ি, চারাবাড়ি, বাঘিলসহ সব তাঁতপল্লিগুলো তাঁত বুননের শব্দ ।

সরেজমিনে দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল তাঁতপল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির নারীরাও কাজ করছেন। কেউ সুতা ছিটায় ওঠানোর কাজে, কেউ সুতা পাড়ি করার কাজে, আবার কেউ সুতা নাটাইয়ে ওঠানোর কাজে ব্যস্ত। তবে আগের তুলনায় কমেছে তাঁত ঘরের সংখ্যা।

তাঁত শ্রমিকরা বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। আগে সপ্তাহে ৩টি শাড়ির তৈরি করতাম। কিন্তু এখন সপ্তাহে ৪টি শাড়ি তৈরি করছি। ব্যস্ততা বাড়লেও বর্তমানে আমাদের মজুরি কম। কম মজুরি দিয়ে সংসার চালানো দুরূহ হয়ে উঠেছে। আগের মতো জমজমাট নেই তাঁতপল্লি। তবুও বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি আমরা।

তাঁত শ্রমিক আলতাফ হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। আমি জামদানি শাড়ি তৈরি করছি। সপ্তাহে ৩টি শাড়ি তৈরি করতে পারি। এতে মজুরি পাওয়া যায় ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা। আগের মতো এ পেশায় লাভ পাওয়া যায় না। বিশেষ করে বাজারে সূতার দাম বেশি। এখনো পুরোপুরি তাঁতের বাজার জমেনি। ১৫ বছর ধরে এ পেশায় কাজ করছি।

আরেক শ্রমিক জহিরুল ইসলাম বলেন, ২৩ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। ঈদ উপলক্ষে বালুচুরি শাড়ি তৈরি করছি। প্রতি পিস শাড়িতে ৬০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। সপ্তাহে ৫টি শাড়ি তৈরি করছি। এতে আমাদের পোষায় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, গত ঈদে দুই থেকে আড়াই লাখ পিস শাড়ি বিক্রি হয়েছিল। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। কিন্তু এবারের অবস্থা খুবই বাজে। শাড়িতে আগের মতো ইনভেস্ট করছে না। তবুও আশা করছি প্রায় দেড় লাখ পিস বিক্রি হবে। যা টাকার অঙ্কে ৮০-৯০ কোটি।

দেশের নানা প্রান্ত থেকে দলে দলে ক্রেতারা শাড়ি কিনতে ভিড় করছেন টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লি ও জেলা শহরের শো-রুমগুলোতে। স্বাচ্ছন্দ্যে পছন্দের শাড়ি কিনছেন ক্রেতারা।
টাঙ্গাইল শহর থেকে আসা মো.আনিসুল নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদ উপলক্ষে পরিবারের জন্য শাড়ি কিনতে এসেছি। আগের থেকে কিছুটা দাম বেশি। তবুও টাঙ্গাইল শাড়ির মান ভালো থাকায় চাহিদা বেশি।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে এবার নতুন ডিজাইনির শাড়ি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আবহাওয়া অনুযায়ী ‘ভেজিটেবল ডাই’ নামের নতুন শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। রোজার ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ কাছাকাছি হওয়ায় আশা করছি বিপুল পরিমাণ শাড়ি বিক্রি হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশীয় বাজার অনেক ছোট হয়ে আসছে। আমরা বিদেশি বাজারের প্রতি বেশি ঝুঁকে যাচ্ছি। বিগত সময়ে পাথরাইলে ৫ হাজার তাঁত ছিল। কিন্তু এখন ৪০০ তাঁত রয়েছে। চাহিদা কমায় আমাদের উৎপাদনও কম হচ্ছে।

(এসএএম/এএস/মার্চ ২২, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২৩ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test