E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

গ্রামের কারখানায় ৬০ বছর ধরে ভেজালমুক্ত ‘গুড়’ তৈরি

২০২৫ মার্চ ১৮ ১৪:৩২:৫৫
গ্রামের কারখানায় ৬০ বছর ধরে ভেজালমুক্ত ‘গুড়’ তৈরি

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ভেজালের ভিড়ে খাঁটি শব্দটি হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। খাদ্য থেকে শুরু করে নানাবিদ জিনিসপত্রে হরহামেশাই মেশানো হচ্ছে ভেজালদ্রব্য। যার প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে। এত এত ভেজালের ভিড়ে ভেজালমুক্ত আখের গুড় তৈরি হচ্ছে ঝিনাইদহের একটি গ্রামে। কালের বিবর্তণে হারিয়ে গেলেও এখনও এই পেশা ধরে রেখেছেন দুই সহোদর। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ গুড় যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। কৃষি বিভাগও ভেজালমুক্ত গুড় তৈরিতে সব ধরণের সহযোগিতা করছে।

গ্রামটিতে গিয়ে দেখা গেল, সড়কের পাশেই চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। স্তুপ করে রাখা হয়েছে আখ। পাশেই যন্ত্রের সাহায্যে আখ থেকে বের করা হচ্ছে রস। এরপর সেই রস পাত্রের সাহায্যে চুলার পাশে কাপড়ের মাধ্যমে ছেঁকে চাড়িতে রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি জ¦লছে ছয়টি চুলা। চুলার ওপর টগবগ করে ফুটছে আখের রস। রস লাল হয়ে এলে এক চুলা থেকে চলে যাচ্ছে আরেক চুলায়। জ¦ালানো শেষে তা টিনের পাত্রে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানে। এরপর সেখানে রাখা মাটির পাত্রে ঢেলে তা ঠান্ডা করা হচ্ছে। ঠান্ডা হয়ে গেলেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে সুস্বাদু আখের গুড়। এ চিত্র অজপাড়াগাঁয়ের এক কারখানার।

প্রায় ৬০ বছর ধরে এই কারাখানায় তৈরি হচ্ছে ভেজালমুক্ত গুড়। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার খন্দকবাড়িয়া গ্রামে কারখানাটির অবস্থান। ওই গ্রামের দুই ভাই রেজাউল ইসলাম ও মিজানুর রহমান কারখানাটির মালিক। তাঁরা নিজেরাই তৈরি করেন গুড়। জেলায় আগে অধিকাংশ বাড়িতেই দেখা মিলতো এই গুড় তৈরির কারখানার। তবে তা এখন বিলুপ্তির পথে। বাবার হাতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় স্মৃতি হিসেবে এই কারখানাটি আকড়ে ধরে রেখেছেন এই দুই সহোদর। এ কারখানার গুড় এলাকার লোকজন পিঠা-পায়েস,সেমাই-সুজিসহ মিষ্টি খাবার তৈরিতে ব্যবহার করেন। এছাড়াও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই গুড় যায় বাইরের জেলায়ও।


আখচাষিরা বলছেন,আখের দাম কম হওয়ায় তা বাইরে বিক্রি না করে এই কারখানায় এনে গুড় তৈরি করেন। তাতে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও বিক্রি করতে পারেন।

কারখানার মালিক মিজানুর রহমান বলেন,‘তাঁর বাবা আখের চাষ করতেন। সে সময় অনেকে নিজ নিজ বাড়িতে রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রি করতেন। ১৯৬৫ সালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মোবারকগঞ্জ চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁদের বাড়ি থেকে ওই চিনিকলের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। এর দু-তিন বছর আগেই কারখানা তৈরি করে তাঁর বাবা বাড়িতে গুড় তৈরি শুরু করেন । আগে গরু দিয়ে আখমাড়াইয়ের কল চালানো হতো। এখন শ্যালো মেশিনের ফিতা চালিয়ে রস বের করা হয়। এরপর মাটির চুলায় রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করা যায়। এক প্রান্তে মাড়াইয়ের যন্ত্র,আরেক প্রান্তে গুড় তৈরির চুলা। রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য চুলাগুলো একটি চালার নিচে করা হয়েছে। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এ কারখানায় গুড় তৈরি করা হয়। প্রতি ১০ কেজি আখ থেকে ১ কেজি গুড় পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন,আগে তাঁরা মাসে প্রায় ৪০০ কেজি গুড় তৈরি করেছেন। তবে এখন তা অনেক কমে এসেছে।’

মিজানুর রহমানের ভাই রেজাউল ইসলাম বলেন,‘এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে আখ কিনে তাঁরা গুড় তৈরি করেন। পরে সে গুড় বাজারে বিক্রি করেন। আবার অনেকে আখ নিয়ে এসে গুড় তৈরি করে নিয়ে যান। পুরাতন ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এ পেশা ধরে রেখেছেন। এবছর ৩০ মণ গুড় উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে। আর প্রতি কেজি বিক্রি হবে ২’শ টাকা কেজি দরে।’

শৈলকুপা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসনাত বলেন,‘নিরাপদ গুড় উৎপাদন করতে তাদেরকে সবরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।’

(এসই/এএস/মার্চ ১৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৮ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test