E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

পল্লী কবি জসিম উদ্দিন 

যার লেখনীতে উঠে এসেছে গ্রাম বাংলার অনেক অজানা কথা 

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮ ১৮:৫৭:২১
যার লেখনীতে উঠে এসেছে গ্রাম বাংলার অনেক অজানা কথা 

দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : জসীম উদ্দীন। যার লেখনীতে বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার হয়েছে সমৃদ্ধ। যে কবির কবিতায় দোল খায় প্রকৃতি, নদী, মাঠ, বেঁদেপল্লীসহ অনুপম সব কাব্যগাঁথা, তিনি পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ১৯০৩ সালে পহেলা জানুয়ারি ফরিদপুর সদরের কৈজুরী ইউনিয়নের ডোমরাকান্দি গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন পল্লীকবি জসীম উদদীন। ‘নকশী কাঁথার মাঠ’, ‘সুজন বাদিয়ার ঘাট’ সহ কবির প্রতিটি রচনায় রয়েছে আধুনিক শিল্প চেতনার ছাপ।

এ কবির লেখনীর ভেতর দিয়ে ফুটে উঠেছে গ্রাম-বাংলার জীবন-জীবিকা, শ্রমজীবী, পেশাজীবীসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষের কথা। ‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসূলপুরে যাও।’ অথবা ‘ওইখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে,’ অথবা ‘ছুঁয়ে দাও আসি সুপ্তি জড়িমা, ফুটিছে রজনীগন্ধ্যা ক্লান্ত দেহের শান্তিদায়িনী, চিত্ততোষিনী সন্ধ্যা।’ এমনি শত শত কবিতা, গল্প, নাটক ও গানের মাধ্যমে পল্লী মানুষের দুঃখ-কষ্ট, হাসি-কান্না, আনন্দের কথা তুলে ধরে কবি পেয়েছিলেন পল্লীকবির উপাধি।

গ্রাম বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য, যাপনের ধরন তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। শুধু তাই নয় এগুলো তাকে খুব প্রভাবিত করেছিল। ফলে তার লেখায় গ্রাম বাংলার রূপ এবং গ্রামীণ মানুষের জীবনধারা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি কবিতা ছড়া গান এবং আরো নানাবিধ লেখা পাঠকদের উপহার দিয়েছেন।

জসীমউদ্দীন একজন বাঙালি কবি গীতিকার উপন্যাসিক ও লেখক। পল্লীকবি উপাধিতে ভূষিত জসিম উদ্দিন আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লালিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ আধুনিক কবি। ঐতিহ্যবাহী বাংলা কবিতার মূল ধারাটিকে নগর সভায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব জসীমউদ্দীনের। তার লেখা নকশী কাঁথার মাঠ ও সুজন বাদিয়ার ঘাট বাংলা ভাষায় গীতিময় কবিতার উৎকৃষ্টতম নিদর্শন গুলোর অন্যতম। তার লেখা অসংখ্য পল্লীগীতি এখনো গ্রাম বাংলার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় যেমন আমার হার কালা করলাম রে, আমায় ভাসাইলিরে, বন্ধু কাজল ভ্রমরারে ইত্যাদি।

কবি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৪ সালে শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার এবং পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৬২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। জসীমউদ্দীন ছিলেন প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী এবং সমাজতান্ত্রের একজন দৃঢ় সমর্থক। তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম।

জসিম উদ্দিন প্রেসিডেন্ট এর প্রাইড আপ পারফরম্যান্স পুরস্কার ১৯৫৮, বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক ১৯৭৬ ও স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) ১৯৭৮ ভূষিত হন। তিনি ১৯৭৪ সালের বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন।

পল্লী কবি জসিম উদ্দিন জাদুঘর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি অম্বিকাপুর গ্রামের পল্লী কবি জসীমউদ্দীন এর বাড়ি সংলগ্ন কুমার নদের তীরে অবস্থিত। উক্ত প্রকল্পটির কাজ ২০০৬ সালে আরম্ভ হয়ে ২০১৪ সালের শেষ হয় এবং ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃপক্ষ ১৬/১০/২০১৯ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন। ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে পরীক্ষামূলকভাবে দর্শকদের জন্য গ্যালারি খুলে দেওয়া হয় যা অদ্যবধি চালু রয়েছে।

জাদুঘরটি চার একর জমির উপর নির্মিত। জাদুঘরে মোট চারটি ভবন রয়েছে। গ্যালারি ভবন, অফিস ভবন, লাইব্রেরী ভবন ও ডরমেটরি ভবন। এছাড়াও পল্লীকবি জসীমউদ্দীন রচিত ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের জন্য একটি উন্মুক্ত পঞ্চ রয়েছে। গ্যালারিতে প্রদর্শিত নিদর্শন সংখ্যা ১৬০টি এবং স্টোরে রয়েছে ৩৩ টি। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অর্থায়নের পরিচালিত হচ্ছে।

পল্লীকবি জসীম উদদীনের বাড়িটি ঘিরে প্রতি বছর আয়োজন করা হতো ‘জসীম পল্লী মেলা’। কিন্তু এ বছর বন্ধ রয়েছে জসীম মেলা। মেলা বন্ধের কারণটিও অজানা। ফলে জসীম ভক্ত ও স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আবার দ্রুতই জসীম মেলা শুরু হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন স্থানীয়রা।

জসীমউদ্দীনের বাড়িতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী ও স্থানীয় জনসাধারণ বলেন এবার মেলা না হওয়ায় তারা খুব কষ্ট পেয়েছেন। কারণ প্রত্যেক বছর একমাস জুড়ে জসিম মেলা হয়। তখন স্থানীয় জনগণসহ দূর দুরান্ত থেকে বহু দর্শনার্থী পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের বাড়ি ও মেলা দেখতে আসেন। তাছাড়াও মেলায় দোকান করে স্থানীয় অনেক সাধারন মানুষের আর্থিক অস্বচ্ছলতা কিছুটা হলেও লাগব হয়।

কবির মেঝো ছেলে সদ্যপ্রয়াত ডক্টর জামাল আনোয়ার এর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার বলেন তার স্বামী বেঁচে থাকতে কবির বাড়ি দেখাশোনা সহ সবকিছু গুছিয়ে রাখতেন। তিনি চলে যাওয়ায় এখন তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন কিভাবে কবির এত বড় বাড়ি ও সহায় সম্পত্তি রক্ষা করবেন। স্থানীয় প্রশাসন সহায়তা না পেলে তার একার পক্ষে এ বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। সবার সহায়তা পেলে কবির স্মৃতি ধরে রাখা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

(ডিসি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test