E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

গণিতবিদ কেপি বসুর স্মৃতি যেন ‘বিস্মৃতি’

২০২৫ জানুয়ারি ১০ ১৮:৪১:৪০
গণিতবিদ কেপি বসুর স্মৃতি যেন ‘বিস্মৃতি’

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : দেয়াল ও ছাদে ধরেছে ফাটল। অধিকাংশ স্থানে খসে পড়েছে পলেস্তারা। বেরিয়ে পড়েছে রড। ভেঙে গেছে জানালা দরজা। খসে পড়ছে দেয়ালের ইট। অ্যালজাবরার জনক গণিতবিদ কালীপদ বসুর (কেপি বসু) বাড়ির অবস্থা এমন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে অবস্থিত গণিতবিদ কালীপদ (কেপি) বসুর বাড়িটি অযত্ন অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সংশ্লিষ্ট মহলের তদারকি না থাকায় দিন দিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে বাড়িটি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় অধিকাংশ ভবনই পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।

১৯০৭ সালে হরিশংকরপুর গ্রামের নবগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে নয় বিঘা জমির উপর এই বাড়িটি নির্মাণ করেন তিনি। বাড়ি নির্মাণের জন্য বিদেশি কাঠ ও সৃজনশীল কারুকাজ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বাড়ি থেকে সিঁড়ি নামানো হয় ওই সময়ের প্রমত্তা নবগঙ্গা নদীতে। বাড়িটির অপরূপ সৌন্দর্য এখনো গ্রামের মানুষকে বিমোহিত করে। বাড়ির নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন হরিশংকরপুর গ্রামে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।

জানা যায়, কেপি বসু ১৮৬৫ সালে হরিশংকরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মহিমাচরণ বসু। ১৮৯২ সালে তিনি ঢাকা কলেজে গণিত শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং আমৃত্যু ওই কলেজের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯১৪ সালে পার্নিসাস ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃতদেহ ঝিনাইদহ এসে পৌঁছালে ঝিনাইদহের সকল অফিস আদালত বন্ধ হয়ে যায়। শোকাভিভূত হাজার হাজার মানুষ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে নবগঙ্গা নদীর তীরে উপস্থিত হয়। ঝিনাইদহ শহরে তার নামে একটি সড়কেরও নামকরণ করা হয়েছে।

কে পি বসু প্রখ্যাত বাঙালি গণিতশাস্ত্রবিদ ও বিজ্ঞান শিক্ষকের পাশাপাশি কে পি বসু পাবলিশিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। নিজ গ্রামের পাঠশালায় হাতে খড়ি হয় তার। বাল্যকাল থেকে গণিতে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান তিনি। গ্রামের পাঠশালার শিক্ষক নাছিম বিশ্বাসের কাছ থেকে জটিল অংকের সমাধান করার শিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি। এরপর তিনি লর্ড রিপন কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা জীবনে পাঠদানের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি। তার ‘আধুনিক অ্যালজাবরা’ বইটি গণিত অধ্যয়ন ও অনুশীলনের পথকে সুগম করেছে। এছাড়া তিনি অসংখ্য নতুন অংক উদ্ভাবন করে এ শাস্ত্রের কলেবর বৃদ্ধি ও উৎকর্ষ সাধন করেছেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি অ্যালজাবরা ও জ্যামিতি শাস্ত্রের গবেষণা চালিয়ে গেছেন। তার ঐকান্তিক সাধনায় ‘অ্যালজাবরা মেডইজি’, ‘মডার্ন জিওমেট্রি’ ও ‘ইন্টারমিডিয়েট সলিড জিওমেট্রি’ প্রভৃতি গ্রন্থ রচিত হয়।

এত গুনে গুনান্বিত এ মানুষটির বাড়িটি অযতœ অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহলের তদারকি না থাকায় দিন দিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে বাড়িটি। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ঐতিহাসিক এ বাড়িটি সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের।

যশোর থেকে ঘুরতে আসা সুমন ঘোষ বলেন,‘কেপি বসুর বিষয়ে পাঠ্যপুস্তকে পড়েছি। এসে দেখলাম জরাজীর্ণ অবস্থায় বাড়িটি পড়ে আছে। যখন তখন ভেঙে পড়তে পারে। সরকারীভাবে বাড়িটি সংস্কারে উদ্যেগ নিলে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক আসবে এখানে। জানতে পারবে কেপি বসু সম্পর্কে।’

স্থানীয় ইউসুফ আলী বলেন, ‘বাড়িটি সংস্কার করতে সরকারীভাবে বেশকয়েকবার উদ্যেগ নেওয়া হলেও অদৃশ্য কারণে তা হয়নি। বাড়িটি সংস্কার কওে হলে কেপি বসুর স্মৃতি রক্ষা করা প্রয়োজন।’

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা রহিম বলেন, ‘অন্য জেলায় বেড়াতে গেলে মানুষ বলে আপনাদের গ্রামে গনিতবিদ কেপি বসুর বাড়ি। তখন অনেক গর্ব হয়। কিন্তু বাড়িটি দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে আবেদন করছি, বাড়িটি সংরক্ষণ করে সংস্কার করার।’

(এসআই/এসপি/জানুয়ারি ১০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test