E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নদীর তীরে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘স্মৃতি’

২০২৪ নভেম্বর ১৩ ১৮:৪৮:১২
নদীর তীরে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘স্মৃতি’

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ শহরের বুকচিরে বয়ে গেছে এক সময়ের খরস্রোতা নবগঙ্গা নদী। দখল, দুষণ আর ভরাটে এখন মৃতপ্রায় নদীটি। সেই নদীর পাশে এখনও মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শতবর্ষী দেবদারু গাছ। গাছগুলো ঘিরে তৈরী করা হয়েছে পৌর ইকোপার্ক। প্রতিদিন শত শত মানুষ সেখানে আসলেও বেশিরভাগই জানেন না গাছগুলো রোপন করেছিলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এমনকি বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানে না কে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। 

জানা যায়, ১৮৮৫ সালের পহেলা জুলাই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঝিনাইদহের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর (তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক) পদে যোগদান করেন। তখন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টরের বাংলো ছিলো নবগঙ্গা নদীর তীরে যা বর্তমানে সড়ক জনপথ বিভাগের বাংলোর সামনে। তখন খরস্রোতা নবগঙ্গা নদীর পাড়েই গাছগুলো রোপন করেছিলেন তিনি। নবগঙ্গা নদীর পাড়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত ৩০টি দেবদারু গাছ এখনও জীবিত আছে। গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে ঝিনাইদহ পৌর কর্তৃপক্ষ। সে সময় যে ভবনে বসে তিনি দাপ্তরিক কাজ করতেন সেই ভবনটি এখনও রয়েছে। তবে তা জরাজীর্ণ। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি ধরে রাখতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের।

স্থানটিতে আসা রাকিব হোসেন জানান, ‘এখানে সাইবোর্ডের মাধ্যমে গাছগুলো কবে লাগানো এবং কে লাগিয়েছে তা লিখে রাখলে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম তার সম্পর্কে ও গাছগুলো কে লাগিয়েছে সে সম্পর্কে জানতে পারবে।’

মায়শা ইসলাম নামে এক তরুণী বলেন, ‘এমন গাছ সাধারণত শহরের আশপাশে দেখা যায়না। তাই তারা ছবি তুলতে এখানে আসেন। জায়গাটি শতবর্ষী এসব গাছের জন্য আকর্ষনীয়।’

স্থানীয় আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সেইসময় গাছগুলো লাগিয়েছিলেন। যেহেতু গাছগুলো পৌর কর্তৃপক্ষ দেখভাল করে সেহেতু গাছগুলো সংরক্ষণ করে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি ধরে রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’

গাছগুলো সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘ইতোমধ্যে পৌর প্রশাসকের সাথে গাছগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে কথা হয়েছে। জায়গাটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও গাছগুলোর যত্ন নেওয়ার প্রতি খেয়াল রাখা হচ্ছে। এছাড়াও পুরো এলাকাটি ভবিষ্যতে কিভাবে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত রাখা যায় এবং গাছের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য যা যা করণীয় তার সবই করবে জেলা প্রশাসন।’

প্রসঙ্গত, উনিশ শতকের জনপ্রিয় বাঙালি ঔপন্যাসিক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যয়। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাঁকে প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবেও গণ্য করা হয়। তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসেবে ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও বিশেষ খ্যাতিমান তিনি। বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকও ছিলেন তিনি। তাঁকে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয়। এছাড়াও তিনি বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট হিসেবে পরিচিত। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয় ১৮৩৮ সালের ২৬ জুন বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে। রামহরির পৌত্র যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় পুত্র তিনি। ১৮৯৪ সালের ৮ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন এই সাহিত্যস¤্রাট।

(এসআই/এসপি/নভেম্বর ১৩, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৪ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test