E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আমায় ক্ষমা কর পিতা : ১১

যে বুলেট তোমার প্রাণ কেড়েছে সেই বুলেটকে আমি কথা দিয়েছি, আমায় মেরো না; আমি মুজিবের মতো বাংলা ও বাঙালিকে ভালোবাসবো না

২০২৩ আগস্ট ১১ ০০:০৫:৪৩
যে বুলেট তোমার প্রাণ কেড়েছে সেই বুলেটকে আমি কথা দিয়েছি, আমায় মেরো না; আমি মুজিবের মতো বাংলা ও বাঙালিকে ভালোবাসবো না

প্রবীর সিকদার

বাকশাল ঘোষণার পর দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছিলেন, ‘দেশে রক্ত গঙ্গা বয়ে যাবে'। একদিন বঙ্গবন্ধুও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে বলেছিলেন, ‘টেল ইয়োর ফ্রেন্ডস, আই অ্যাম নট এফ্রেইড।’

বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর দৈনিক ইত্তেফাকে ‘প্রসঙ্গ: দেশ ও জাতি’ শিরোনামের এক উপ-সম্পাদকীয়তে সেই আনোয়ার হোসেন মঞ্জু লেখেন, ‘……… নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনটি সাধিত হইয়াছে প্রবীন রাজনৈতিক নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে, সেনাবাহিনীর দ্বারা। এই পরিবর্তন সাধনে তরুন সামরিক অফিসারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বলা যায়, দেশের একটা অসম্ভব দুঃসহ অবস্থার বিলোপ ঘটাইয়াছেন তাহারা এবং জাতির সামনে সৃষ্টি করিয়াছেন চলার উপযোগী পথ ও সুযোগ। এই কাজের জন্য তাহারা গোটা জাতিরই অভিনন্দন লাভের যোগ্য। গোটা জাতি যে সময় দিগ-বিদিক জ্ঞানশূন্য অবস্থায় শুধু নিচের দিকে তলাইয়া যাইতেছিল, সেই সময় তাহারাই জীবনের ঝুঁকি লইয়া এই পরিবর্তন সাধন করিয়াছেন। ব্যক্তি পর্যায়ে কাহারো জন্য দুঃখ শোক বা সহানুভূতি প্রকাশের চাইতেও জাতীয় স্বার্থের দিকটা বড় করিয়া দেখার যে আবশ্যকতা, সেই বিবেচনায় এই নতুন রাজনৈতিক পরিবর্তনকে স্বাগত জানাইতে হইবে। ………’

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ভারতীয় লোকসভায়, এই উপমহাদেশের সিআইএ এজেন্টদের নামের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। ওই তালিকায় গুরুত্বের সাথে জায়গা পেয়েছিল ইত্তেফাক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নাম।

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। নবরূপে সুসজ্জিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৪ আগস্ট বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা বিস্ফোরিত হয়। ধারণা করা হয়, এটি জাসদ বা গণ বাহিনী বা উগ্রপন্থী কোনো বিপ্লবী গ্রুপের কাজ। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট আসে, যে বোমাগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে তা শুধু মাত্র সেনাবাহিনীর কাছেই মজুদ থাকে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

দালাল আইনে কট্টর পাকিস্তানপন্থী মাওলানা আব্দুর রহিমের কারাদন্ড হয়েছিল। পরে বঙ্গবন্ধু তাকে ক্ষমা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস মৃত্যুর পর ‘আমার দৃষ্টিতে আগস্ট বিপ্লব’ শীর্ষক এক নিবন্ধে ওই মাওলানা রহিম লেখেন, ‘……… ১৫ই আগস্টের ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশর জন্য একটি অনিবার্য, বাঞ্ছনীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ ঘটনা। তা না ঘটলে আজকের বাংলাদেশের জনগণের সামগ্রীক চেতনার অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে অকল্পনীয়ই থেকে যেত। ……… খোদা না খাস্তা ১৫ই আগস্টের ঘটনা সংঘটিত না হলে আজকের বিপুল মুসলিম সংখ্যাধিক্য সম্বলিত বাংলাদেশ অধিকৃত কাশ্মীরের অবস্থায় পৌঁছে যেত এবং এদেশকে একটি আদর্শিক ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত করার ও সংগ্রামের কোনো অবকাশেরই চিন্তাধারা সম্ভবপর হতো না। ………’

পিতা! তোমার নৃশংস মৃত্যুর আগে ও পরের নানা ঘটনা এবং নানা জনের নানা প্রতিক্রিয়ায় একথা স্পষ্ট যে, তোমাকে খুনের পরিকল্পনাটি বেশ পাকাপোক্ত ছিলো। তুমি এর কিছুই বুঝতে পারনি? সরকারের বিভিন্ন এজেন্সীগুলো তোমাকে কিছুই জানায়নি? কালরাতের ঠিক আগের দিন ১৪ আগস্ট বিকেলে পূর্ব ইউরোপীয় একটি দেশের এক দূতাবাস কর্মকর্তা শেখ ফজলূল হক মনির মাধ্যমে তোমাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তারপরও তুমি গুরুত্ব দাওনি! কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো এর আগে তোমাকে বলেছিলেন, ‘একটি বুলেট অহরহ তোমার পিছু নেবে।' ক্যাস্ট্রোর ভবিষ্যৎ বাণীই সত্য হলো! যে বুলেট তোমার প্রাণ কেড়েছে সেই বুলেটকে আমি কথা দিয়েছি, আমায় মেরো না; আমি মুজিবের মতো বাংলা ও বাঙালিকে ভালোবাসবো না। কী অকৃতজ্ঞ, কী কৃতঘ্ন সন্তান আমি!
পিতা, আমায় ক্ষমা কর তুমি, ক্ষমা কর।

পাঠকের মতামত:

২১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test