E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

আমায় ক্ষমা কর পিতা : ০৬

বঙ্গবন্ধুর নেপথ্য খুনি জিয়াকে যিনি উদ্ধার করেন, তাকে বিপ্লবী বলতে হবে কেন! ফাঁসিতে ঝুললেই বুঝি ক্ষুদিরাম হওয়া যায়!

২০২৩ আগস্ট ০৬ ১২:১৬:০৬
বঙ্গবন্ধুর নেপথ্য খুনি জিয়াকে যিনি উদ্ধার করেন, তাকে বিপ্লবী বলতে হবে কেন! ফাঁসিতে ঝুললেই বুঝি ক্ষুদিরাম হওয়া যায়!

প্রবীর সিকদার



সুযোগ পেলেই আমার প্রিয় শিক্ষক গল্পকার কায়েস আহমেদ বলতেন, মুজিব যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিশৃঙ্খল বাংলাদেশকে পূর্ণ শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই তাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। বাঙালি বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবে সেটি কি করে হয়! মুজিব ব্যর্থ হলে তিনি খুন হতেন না।

তাঁর বিশাল সফলতাই তাঁকে নৃশংস মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে। তিনি খালেদ মোশাররফের পাল্টা ক্যু নিয়েও প্রশ্ন তুলতেন। তিনি বলতেন, কি উদ্দেশ্য ছিল খালেদ মোশাররফের? তিনি যদি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিশোধই নিয়ে থাকেন তাহলে জিয়াউর রহমান জীবিত থাকেন কি করে! রাষ্ট্রপতি পদেই বা বহাল থাকেন কি করে মীরজাফর মুস্তাক! কি করেই বা বঙ্গবন্ধুর খুনিরা নৃশংস জেল হত্যাকান্ড ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে লিবিয়ায় পালিয়ে যায়! কর্নেল তাহেরের বিপ্লবও ছিল তার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি বলতেন, বঙ্গবন্ধু খুনের মদদদাতারা কি বিপ্লবী! বঙ্গবন্ধুর নেপথ্য খুনি জিয়াকে যিনি উদ্ধার করেন, তাকে বিপ্লবী বলতে হবে কেন! ফাঁসিতে ঝুললেই বুঝি ক্ষুদিরাম হওয়া যায়!

সেদিন কায়েস স্যারের অনেক কথারই অর্থ বুঝিনি। আজ যখন তার সেই সব কথা কানেবাজে, তখন তা ব্যাপক অর্থবহ হিসেবেই হৃদয়কে আলোড়িত করে। স্যার বেঁচে থাকলে অন্ততঃ এই কারণে খুশি হতেন যে, তিনি যে ধারণাগুলো পচাঁত্তরে করেছিলেন, সেগুলোই সুদীর্ঘকাল বাংলাদেশকে করেছে যন্ত্রনাকাতর।

মুহূর্তে নিষিদ্ধ হয়ে গেল জয় বাংলা! জিন্দাবাদে ভরে গেল দেশ! দেশের অনেক ‘মনীষী’ যোগ দিয়েছেন খুনি জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে! কারো মুখেই নেই আওয়ামীলীগ! মুক্তিযোদ্ধা-রাজাকার একাকার! জিন্দাবাদের দল গড়তে সে কী কসরত! আউটার স্টেডিয়ামে প্রকাশ্য প্রথম সমাবেশে জিয়া বললেন, ‘আওয়ামী বাকশালীরা স্বাধীনতা চায়নি’। স্কুলের শিক্ষার্থীদের গুরুত্বের সাথে পড়ানো শুরু হলো ভাব-সম্প্রসারন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’। ভাবখানা এমন, মুজিব স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারছিলেন না! সেই সব ষড়যন্ত্রের গভীরতা আমাকে আজও ভাবায়। একাত্তরের এই বাংলাদেশে ‘হারামজাদা’র সংখ্যা নেহায়েত কম ছিল না! বঙ্গবন্ধু মুজিবের মহানুভবতায় বেঁচে থেকে যথোপযুক্ত সময়ে বিষাক্ত ছোবল মারতে এক মুহূর্ত দেরি করেনি কেউ!

পিতা মুজিব! এই তোমার প্রিয় বাঙালি আর বাংলাদেশ! তোমাকে খুন করে ওরা ‘বাংলাস্তান’ তথা ‘মিনি পাকিস্তান’ বানিয়ে ফেললো! সবাই ‘বাংলাস্তান’-এ টিকে থাকার লড়াইয়ে অবতীর্ণ! কেউ যেন পেছনে পড়তে চায় না! যারা তোমার নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেছিলো তারা ‘দুর্বৃত্ত’ হয়ে ফেরার থাকলো। আমি টিকে রইলাম জিন্দাবাদের ভিড়ে। কী অকৃতজ্ঞ, কী কৃতঘ্ন সন্তান আমি!

পিতা মুজিব, আমায় ক্ষমা কর তুমি, ক্ষমা কর।

পাঠকের মতামত:

২৯ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test