E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

৫২ বছরেও বিচার পায়নি গোপালগঞ্জের ৪ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

২০২৫ মার্চ ১০ ১৯:১১:৩৭
৫২ বছরেও বিচার পায়নি গোপালগঞ্জের ৪ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : আজ ১০ মার্চ। গোপালগঞ্জের ৪ বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস। এদিন জেলার কোটালীপাড়ার টুপুরিয়ায় কমিউনিস্ট নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা কমরেড ওয়ালিউর রহমান লেবু, ন্যাপ নেতা কমলেশ বেদজ্ঞ, ছাত্র ইউনিয়নের বিষ্ণুপদ কর্মকার ও রমপ্রসাদ চক্রবর্তী মানিকের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে আজ সোমবার নিহতদের সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পন ও বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জানের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মরকলিপি প্রদান করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)গোপালগঞ্জ জেলা কমিটি।

সিপিবি জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মহম্মদ আবু হোসেনের নেতৃত্বে এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার আড়পাড়া গ্রামে কমরেড ওয়ালিউর রহমান লেবুর সমাধিতে ও বেলা ১১টায় মানিকদাহ পৌর শ্মশানে বাকী তিন নেতার সমাধীসৌধে পুষ্পর্ঘ অর্পন করা হয়। পরে দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি জমাদেন নেতৃবৃন্দ। এসময় খুলনা জেলা কমিউনিস্ট কমিটির সভাপতি ডাঃ মনোজ দাস, সদস্য সুতপা বেদজ্ঞ, গোপালগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য মোঃ নাজমুল ইসলামসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে ন্যাপ (মোজাফফর) মনোনীত সিপিবি ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থিত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া আসনের প্রার্থী কমরেড কমলেশ বেদজ্ঞ, কমিউনিস্ট নেতা কমরেড ওয়ালিউর রহমান লেবু, ছাত্র ইউনিয়ন গোপালগঞ্জ মহকুমার সহ-সভাপতি বিষ্ণুপদ কর্মকার, ছাত্র ইউনিয়নের কোটালীপাড়া থানা কমিটির তৎকালীন প্রচার সম্পাদক রামপ্রসাদ চক্রবর্তী মানিক।

নির্বাচন শেষে কোটালীপাড়া হতে ১০ মার্চ সকালে পায়ে হেঁটে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন।পথিমধ্যে টুপুরিয়া নামক স্থানে পৌঁছালে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হেমায়েতউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী এই চার নেতার ওপর হামলা চালিয়ে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে ও ‍কুপিয়ে হত্যা করে।
এই হত্যাকান্ডের পর ১০ মার্চ রাষ্ট্র বনাম হেমায়েতউদ্দিন গং নামে একটি মামলা নথিবদ্ধ হয়। মামলা নম্বর মামলা নম্বর-৫(৩)/১৯৭৩, জি আর নম্বর-৯৬/৭৩, স্পেশাল ট্রাইবুনাল নম্বর-১/৮৬ ধারা-ইউ/এস-৩০২/৩৬৪/৩২৫/১০৯/১১৪/১৪৮ বি.পি.সি, আইও- মি. এন রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার, গোপালগঞ্জ । মামলার বর্তমান বাদী কমলেশ বেদজ্ঞের মেয়ে সুতপা বেদজ্ঞ।

মামলার বাদী সুতপা বেদজ্ঞ বলেন, এ হত্যামামলাটি ৫২ বছর ধরে আসামীদের অপকৌশলে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নিম্ন ও উচ্চ আদালতে বার বার স্থগিতাদেশের মাধ্যমে বিচার কাজ বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে। ২০২২ সালে সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট আসামিদের মামলা স্থগিত আবেদন খারিজ করে দেন। ২০২৩ সালের ১২ জুলাই মামলার নথিপত্র গোপালগঞ্জ স্পেশাল ট্রাইবুনাল আদালতে পাঠানো হলেও এখনো সে আদেশ আদালতে পৌঁছেনি। সকল তথ্য প্রমাণ থাকার পরেও তথ্যপ্রমাণের অভাবের অযুহাতে এবং আসামিরা ৫২ বছর ধরে সকল সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাবে এই মামলার বিচারকার্য শেষ করতে বাধা দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে দেয়নি বলে জানান সুতপা বেদজ্ঞ।

জেলা সিপিবির সভাপতি অধ্যক্ষ মহম্মদ আবু হোসেন বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বৈষম্য বিলোপের এক নতুন বাংলাদেশ বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। নতুন এই প্রেক্ষাপটে আমাদের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নৃশংস হত্যার বিচার শেষ করতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।

গোপালগঞ্জের পিপি এ্যাড কাজী আবুল খায়ের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশের নথি এখনো আমার কার্যালয়ে আসেনি। স্পেশাল ট্রাইবুনাল আদালতে এসেছে কিনা তা আমার জনানেই । উচ্চ আদালতের নথি হাতে পাওয়ার পর আদেশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(টিবি/এসপি/মার্চ ১০, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১১ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test