১৯ ডিসেম্বর ভৈরব মুক্ত দিবস
সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবারভৈরব মুক্ত দিবস। আজ থেকে ৫২ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে নদীবন্দর ভৈরবে পাক হানাদার বাহিনী অসংখ্য নারী-পুরুষ, আবাল বৃদ্ধ-বনিতাকে হত্যা, মা-বোনদের ইজ্জত লুট ও ভৈরব বাজার ও গ্রামকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। তারা মিত্রবাহিনী ও ভৈরবের দামাল ছেলেদের হাতে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। মুহুমুর্হু জয় বাংলা ধ্বনির মাধ্যমে পাকিস্তানি পতাকাকে পদদলিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে উত্তোলনের মাধ্যমে এই দিনে ভৈরবের মানুষ মুক্ত ও স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করে।
১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল চারদিক থেকে ঘেরাও করে সামরিক হেলিকপ্টার, গানবোর্ড এবং সাবরজেট জঙ্গি বিমানের সহায়তায় পাকহানাদাররা শিমুলকান্দি ইউনিয়নের গোছামারা গ্রামের উত্তর দিকে ফসলি জমিতে তৎকালীন শিবপুর ইউনিয়নে পানাউল্লারচর এবং কালিপুর বাদশা বিলের পাড় ভৈরব বাজারের দক্ষিণ দিকে গৌরিপুর ছত্রীসেনা নামায়। ছত্রীসেনা অবতরণের পর নৌ, বিমান ও স্থলবাহিনীর মদতপোষ্ট হয়ে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে নিরীহ মানুষকে হত্যা, মা ও বোনদের ইজ্জত হরণ করে ও গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে তারা ভৈরব শহরের দিকে ধাবিত হতে থাকে। এ সময় গোছামারা এবং পানাউল্লারচর গ্রামবাসীরা লাঠি সোঠা, দা, বল্লম নিয়ে তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয়।
পানাউল্লারচরে অবতরণকারী পাকহানাদাররা বন্দরে আসার পথে আলগড়া নামকস্থানে খেয়া পারাপারের জন্য ৫ থেকে ৬শ নারী পুরুষ, অবাল বৃদ্ধ বনিতাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে শহরের দিকে অগ্রসর হয়। গুলি বর্ষণ করে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে হানাদাররা এক নারকীয় অবস্থা সৃষ্টি করে ভৈরব বন্দরকে দখল করে নেয়। ভৈরব বন্দর দখল করার পর হানাদার ও তাদের দোসররা আলবদর রাজাকার ভৈরব বাজার নদীর পাড়সহ ৩ ভাগের ২ ভাগ জ্বালিয়ে দেয় এবং ব্যবসায়ের দোকানের সিন্ধুক ভেঙ্গে টাকা পয়সা এবং গুদামে রক্ষিত মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং ভৈরবের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বর্গকে ধরে এনে হাতের হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে এবং হানাদারদের খুশি করার জন্য তাদের তাবেদার আলবদর রাজাকাররা অসংখ্য মা-বোনকে তাদের হাতে তুলে দেয়। এরই মধ্যে ভৈরবসহ সারা দেশেই মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা শুরু হয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধারা রাতের বেলায় বৈদ্যুতিক টাওয়ার ও গ্যাসের মূল পাইপ লাইন, গুরুত্বপুর্ণ রেলওয়ে ব্রীজ ও সড়ক সেতু ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং হানাদারদের ব্যাংকারে ও তাদের দোসরদের উপর গ্রেনেড নিক্ষিপ ও চোরাগুপ্ত হামলা করে তাদের আতঙ্কিত করে তুলে। তরিতরকারি বিক্রেতার ছদ্মবেশে ভৈরব ছবির কমপ্লেক্স রোডে হামলা চালিয়ে হানাদারদের অন্যতম দোসর মমতাজ পাগলাসহ কয়েকজনকে হত্যা করে। হামলায় দুজন মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েকজন নিরীহ লোকও শাহাদাৎ বরণ করে। এ হামলার পর থেকেই হানাদাররা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আর এ অবস্থায় দীর্ঘ ৯ মাস চলতে থাকে। এরই মধ্যে ১৯৭১ সালে ডিসেম্বরে শুরু হওয়ার সাথে সাথেই মিত্রবাহিনী বাংলাদেশকে হানাদারমুক্ত করার লক্ষ্যে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে। ওই অভিযান শুরু হওয়ার সাথে সাথেই হানাদাররা মিত্রবাহিনীর সাথে বিভিন্ন সেক্টরে মার খেয়ে পিছু হটতে থাকে।
প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা হানাদার মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে পতাকা উত্তোলিত হতে থাকে। এ অবস্থার মধ্য দিয়ে মিত্রবাহিনীর সদস্যরা ১২ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শাহবাজপুর ও সরাইলকে শত্রæমুক্ত করে দুর্গাপুরের দিকে এগুতে থাকে। ১২ ডিসেম্বর ভোরে সূর্য উঠার সাথে সাথে তারা পানিশ্বরের মধ্য দিয়ে দুর্গাপুরের দিকে এগুতে থাকে। মিত্রবাহিনীর ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশন, ১৮ রাজপুত ডিভিশন, ১০ বিহার ডিভিশন ও ১১ ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে মুক্তিযোদ্ধারা দুর্গাপুর গ্রামের কাছে পাকহানাদার বাহিনীর ২৭ পদাতিক বিগ্রেডের সৈন্যদের কর্তৃক অতর্কিত হামলার শিকার হয়। উক্ত হামলায় ১৮ রাজপুত ডিভিশন ও ১০ বিহার ডিভিশনের বেশ কিছু সংখ্যক সৈন্য ও অফিসার শাহাদাত বরণ করে। তারা অসীম সাহসিকতার সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় পাল্টা হামলা চালিয়ে হানাদারদের পিছু হটাতে বাধ্য করেন। এরই মধ্যে মিত্রবাহিনীর বিমান বহরে আবির্ভাব ঘটে।
মিত্রবাহিনী বিমান থেকে অনবরত পাকহানাদারদের অবস্থান লক্ষ্য করে বোমা বৃষ্টি বর্ষণ করতে থাকে এবং মিত্রবাহিনীর ভারী কামানগুলো অবিরাম গোলা উদগীরণ করতে থাকায় পাকবাহিনীর রণভঙ্গ দিয়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলসেতুটির পূর্ব পার্শে একটি স্পেন ও পশ্চিম পাশের দুটি স্পেন ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে মিত্রবাহিনীর অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার নিস্ফল প্রয়াস চালায়। প্রায় ১০ হাজার বাহিনীর সমস্ত ভৈরবে তাদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে আশুগঞ্জে অবস্থানরত মিত্রবাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে ভারী কামানের গোলা বর্ষণ করতে থাকে এবং মিত্রবাহিনীর কমান্ডগুলো হানাদারদের অবস্থান লক্ষ্য করে অবিরাম গোলাবর্ষন করে তাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির শিকারের মাধ্যমে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলে এবং ভৈরবের মুক্তিযোদ্ধারা চতুর্দিক দিয়ে তাদেরকে ঘিরে ফেলে। তাদের পলায়নের পথ এবং রসদ সরবরাহসহ অন্যান্য ব্যবস্থা পঙ্গু করে দেয়ার ফলে হানাদাররা অসহায়ভাবে ভৈরবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
ফলে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকহানাদারদের প্রধান জেনারেল নিয়াজী তার দলবলসহ আত্মসমর্পণ করলেও ভৈরবের পাকবাহিনী সে খবর পায়নি। যার ফলে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকহানাদারদের সাথে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট-খাট সংঘর্ষ চলতে থাকে। ১৯ ডিসেম্বর পাকহানাদারদের হাই কমান্ডের নির্দেশ পাওয়ার পর আত্মসমর্পনের পূর্ব মুহুর্তে তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংক বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারিটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে তার সমস্ত নোট আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় এবং ব্যাংকে রক্ষিত সমস্ত কয়েন মাল গুদাম খাড়ি পানিতে ফেলে দেয় এবং ব্যাংকের লকারগুলো ভেঙ্গে স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। প্রথম অবস্থায় যে সমস্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান তাদের ধ্বংস প্রাপ্তের হাত রক্ষা পেয়েছিল সেগুলোর মালামাল লুট ও জ্বালিয়ে দিয়ে এবং আবাসিক এলাকার ঘর বাড়ি থেকে মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে ১৯ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করে। আর এভাবেই একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি এবং ভৈরবের মানুষ পাকিস্তানী পতাকাকে পদদলিত করে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত করে স্বাধীনতার মুক্তির স্বাদ লাভ করে। ভৈরবের মানুষ প্রতি বছরের শ্রদ্ধা করে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে দিনটিকে স্মরণ করে থাকে।
(এসএস/এএস/ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩)
পাঠকের মতামত:
- ভারত-পাকিস্তান ইস্যু না, দেশ হিসেবে সিন্ডিকেট হলে সমস্যা
- বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ভুটানের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
- ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মানহানি-শ্রম আইনের ৬ মামলা বাতিল
- এতিম ৩ সন্তানকে নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেন বিধবা নাসিমা
- ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ভালোভাবে চলে না’
- আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস
- জামালপুরে জ্বালানি অপরাধীদের বিচারে ২১ দফা গণদাবি
- ব্যারিস্টার সুমনকে হবিগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর
- এবার যুক্তরাজ্যের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় ইউক্রেনের হামলা
- গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ফের ভেটো দিলো যুক্তরাষ্ট্র
- অটোরিকশাচালকদের অবরোধে ট্রেন চলাচল বন্ধ
- আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন বাহারুল আলম
- শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা
- ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে’
- মুক্তিবাহিনী কুমিল্লায় রাজাকারের ঘাঁটিতে আক্রমণ করে
- ‘মৎস্যপণ্য উৎপাদন ও গবেষণা বাড়াতে হবে’
- ছাত্ররা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন, আশা মাহফুজ আলমের
- সুবর্ণচরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সচেতনতামূলক গণসংযোগ
- এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নতুন ডিজি আব্দুর রউফ
- ফরিদপুরে দুইদিন ব্যাপী তথ্য মেলা শুরু
- টাঙ্গাইলে জনবহুল সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
- পঞ্চগড়ে মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল ইসলাম স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত
- কাপ্তাইয়ে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে ৩ দোকানিকে জরিমানা
- সাতক্ষীরায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যুবকের মৃত্যু
- কাপ্তাইয়ে গাঁজাসহ গ্রেফতার ১
- মোবাইলের বিজ্ঞাপনে জুয়েল আইচ
- ফরিদপুরে ৫টি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা!
- লাভা মোবাইল ইন্টারন্যাশনালের রিটেইলার মিট অনুষ্ঠিত
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : ১৪
- পিরোজপুরে নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ যুবলীগ নেতার মৃত্যু
- রাজশাহীতে বিএনপির প্রচারণায় ককটেল বিস্ফোরণ
- মূর্তি বিসর্জনের পুকুর দখল, এবার দূর্গা পূজা হচ্ছে না
- ফখরুলের সঙ্গে অস্ট্রিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
- ‘টুঙ্গিপাড়ায় প্রতিটি পূজামণ্ডপে কঠোর নিরাপত্তা দেওয়া হবে’
- ঈশ্বরদীতে কলেজ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে হাতুড়ি পেটা
- শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে গোপালগঞ্জে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচী
- বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই তিস্তার পানি, বন্যার আশঙ্কা
- ‘দেশে সবচেয়ে সস্তা এখন মানুষের জীবন’
- রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ'র ছড়া
- মাদারীপুরে গ্রাম পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা
- ইসকন জঙ্গী সংগঠন নয়
- ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে’
- নড়াইলের পানিপাড়া এখন পরিযায়ী পাখির অভয়ারণ্য
- ডিজিএফআই’র মহাপরিচালক হলেন ফয়জুর রহমান
- আড়াই কিলোমিটার ছাড়াল পদ্মা সেতু