বোয়ালমারীর বাতাসে কান পাতলে আজও শোনা যায় শহীদদের অতৃপ্ত আত্মার কান্না
কাজী হাসান ফিরোজ : বোয়ালমারীতে যুদ্ধকালীন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই আজও স্বীকৃতি না পেলেও দিনদিন মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। কিন্তু যাদের রক্তের বিনিময়ে এই সুযোগ-সুবিধা, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ তাঁদের আত্মা আজও অতৃপ্ত, তাঁদের পরিবার আজও সুবিধা বঞ্চিত, তাঁদের শেষ শয়ানের স্থান আজও চরম অবহেলিত।
মুক্তিযোদ্ধা কাজী ইমদাদুল হক লুলু (বোয়ালমারী সরকারি কলেজের দুই-দুইবার নির্বাচিত ভিপি) যৌবনের অনেকটা সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্যে ব্যয় করে জীবন সাহাহ্নে উপজেলা আওয়ামীলীগের একজন সদস্য পরিচয়ে মরার ইচ্ছে পোষণ করলেও তাঁর ইচ্ছে পুরন হয়নি। তাঁর আত্মা অতৃপ্তি নিয়েই পৃথিবীর আলো-বাতাসের মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। তাঁর মেধাবী দুই সন্তান মামা এবং টাকার জোর না থাকায় কোথাও থিতু হতে পারেনাই। তাঁর স্ত্রী আজ সুচিকিৎসার অভাবে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁর মুক্তিযুদ্ধের পরিচয় আজও যাচাই-বাছাই এর দুষ্টচক্রে পিষ্ট। মৃত্যুর পরেও তাঁকে নিয়ে টানাহেঁচড়া চলছে। কাজী মুজিবুর রহমান এবং এড. মিঞা সাদেকুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সারির সংগঠক হয়েও পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। তাঁদের পরিবার সম্মানি নয় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসাবে সম্মান চায়।
শহীদ রিজাউল হক, যার কথা উঠলে আজও পরিচিত জনদের চোখে অশ্রু ঝরে। তরতাজা মুক্তিকামী ছাত্রনেতা। তৎকালীন যশোর জেলার ( বর্তমানে নড়াইল) লোহাগড়া থানার শালনগর গ্রামের মানুষ হলেও তিনি ছিলেন বোয়ালমারী সরকারি কলেজের ছাত্র। যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকেই তিনি রাজাকার কর্তৃক ধৃত হয়ে পাকিস্তানি আর্মিদের হাতে ধৃত হওয়ার পর তাঁকে চরম নির্যাতনের হত্যা করা হয়। তাঁর লাশ স্থান পায় বোয়ালমারী সরকারি কলেজ সংলগ্ন গণকবরে। যেখানে তিনি সহ শতাধিক মুক্তিযুদ্ধ কালীন শহীদগণ ঘুমিয়ে আছেন, ঠিক তাঁদের কবরের স্বাধীনতার একান্ন বছর পরে এসেও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতৃত্ব দানকারি দল ক্ষমতায় থাকাকালীন তাঁদের কবরের উপর জামায়াত সমর্থকেরা বাড়ি ও শৌচাগার তৈরি করে বহাল তবিয়তে আছে! এছাড়াও গণকবরের অবশিষ্ট জায়গায় বহুতল ভবনের কাজ নতুন করে শুরু করা হয়েছে। শোনা যায়, এসব বাড়ির মালিকদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন কতিপয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক। তাঁদের যুক্তি সরকার যেহেতু অধিগ্রহণ করেনি, জমির মালিকরাতো সেখানে বাড়িঘর তৈরি করতেই পারে। সরকার যদি কখনো অধিগ্রহণ করে তখোন নাড়িট মালিকরা জমি ছেড়ে দেবে। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী শামসুজ্জামান খোকন বলেন, সরকার জমি অধিগ্রহণ করলে গণকবরের জমি ফিরে আসবে,কিন্তু শহীদদের কবরের উপর শৌচাগার নির্মাণ করে শহীদ আত্মার যে অবমাননা করা হচ্ছে, এর দায় কে নেবে?
মুক্তিযুদ্ধে বোয়ালমারী উপজেলার সর্ব কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা বাইখীর গ্রামের রেজাউল, মুক্তিযুদ্ধকালীন সিনিয়র মুক্তিযোদ্ধাদের আধিপত্যের লড়াইয়ে জীবন উৎসর্গ করেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে, দেশের জন্যে লড়তে গিয়ে আরেকদল মুক্তিযোদ্ধার হাতে জীবন দিয়ে স্বাধিনতার প্রায় তিনযুগ লুণ্ঠনকারী দলের সদস্যের পরিচয় মৃতুর পরও বয়ে বেড়িয়েছেন! জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে যাচাই-বাছাইয়ে তাঁকে লুণ্ঠনকারী দলের সদস্যের গ্লানির দায়মুক্তি দিয়ে তাঁকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দেয়া হয়েছে। তাঁর আত্মা তাতে শান্তি পেয়েছে কিনা জানিনা! তবে তাঁর আত্মীয় স্বজন মানুষের তিরস্কার থেকে মুক্তি পেয়েছে। একই সাথে নারী অপহরণকারী, সম্পদ লুণ্ঠনকারী, দেশদ্রোহীর অপবাদ থেকে দায়মুক্ত হয়েছেন তাঁর দলনেতা কলিমাজি গ্রমের হাবিলদার (মেজর হিসাবে পরিচিত)জলিল বিশ্বাস ও তাঁর ভাই জহুর বিশ্বাস।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে বোয়ালমারী সরকারি কলেজ সংলগ্ন গণকবর সহ গোহাইলবাড়ি এবং হাসামদিয়া গ্রামের গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে আজও নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিসৌধ। চরম অবহেলিত বোয়ালমারী কলেজ সংলগ্ন গণ কবর সহ অন্যান্য শহীদদের কবরগুলি।অপরদিকে কুখ্যাত রাজাকার এম,এ,ওয়াহিদ টিপু মিয়ার নামে গ্রামের নাম করণ করা হয়েছে ওয়াহিদাবাদ।
একাত্তরের মহান শহীদদের নামে কোন স্মৃতিসৌধ কিংবা নামফলক শোভা না পেলেও বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একাংশের নামকরণ করা হয়েছে একজন কুখ্যাত রাজাকারের নামে। যে কুখ্যাত রাজাকার এম,এ,ওয়াহিদ টিপু মিয়া এবং তার পুত্র জাহাঙ্গীর বারী (কোটন) অসংখ্য স্বাধীনতাকামী হিন্দু মুসলিমের হত্যাকারী, সেই এম, এ ওয়াহিদ টিপু মিয়ার নামানুসারে নামাঙ্কিত গ্রামের নামফলক ইসলামি মিশন কার্যালয়ে শহীদদের টিপ্পনী কেটে দাঁত কিলিয়ে হাসছে।
এলাকার প্রবীণ রাজনীতিবিদ, ঘোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলাউদ্দীন মিয়া বলেন টিপু মিয়া, কোটন এবং বোয়ালমারী সদরের দু'য়েকজন কুখ্যাত রাজাকারের সহযোগিতা না থাকলে পাকিস্তানি আর্মি বোয়ালমারীতে ঢুকে গণহত্যা চালানোর সাহসই পেতোনা।
তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানি আর্মিদের চেয়ে টিপু মিয়া, কোটন এবং াবাচ্চু রাজাকার মানুষের উপর বেশি অত্যাচার এবং গণহত্যা চালিয়েছে।
অশীতিপর বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, আমাদের একাত্তরের চেতনার ঘাটতির কারনেই লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মহাদেব সাহার বাড়ি, ফরিদপুর সদরের একটি বিল্ডিং ( দেশ ক্লিনিক) এবং বালিয়াকান্দি পদমদী জমিদার বাড়ি দখল করে নেয়া অত্যাচারী এম,এ, ওয়াহিদ টিপু মিয়ার নামের গ্রামের নামাঙ্কিত (ওয়াহিদাবাদ) সাইনবোর্ড ইসলামিক মিশনের গাত্রে শোভা পাচ্ছে। তিনি অবিলম্বে ওয়াহিদাবাদ গ্রামের নাম বদল করে একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে রাখার দাবি জানান।
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা শাহ জাফরের ভাষ্যমতে একাত্তরের ১৫ মে পাকিস্তানি আর্মিরা তাঁকে হত্যার জন্যে বোয়ালমারী রেলস্টেশনে নেমে তাঁর গ্রামের বাড়ি উপজেলার হাসামদিয়ায় গিয়ে লক্ষিত ব্যক্তিকে না পেয়ে হিন্দু পাড়ার ৩৩ লোককে গুলি করে পাখির মতো হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার বর্ষিয়ান নেতা আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের সেকেন্ড ইন কমান্ড শাহ জাফর ২১ জানুয়ারি ২০১৩ বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির হুকুম হওয়ার পর মানুষের দৃষ্টিকে ঘুরাতেই ২০১৩ সালের মে মাসে হঠাৎ করে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করে হাসামদিয়া গণহত্যা দিবসের। সেখানে তিনি শহীদ পরিবারের সদস্যদের দিয়ে বলান, এ হত্যার সাথে মওলানা আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু জড়িত ছিলেননা। পাকিস্তানি আর্মিরা শাহ জাফরকে মারতে এসে তাঁকে না পেয়ে নিরীহ জনগণকে হত্যা করে।
তিনি বলেন, হাসামদিয়ার যোগেশ্বর, কলারনের সুধাংশু বাবু সহ সালতা ও বোয়ালমারীর শতাধিক মানুষের হত্যাকারি বাচ্চু রাজাকার। শাহ মো. আবু জাফর প্রতি বছরই দিবসটি পালন করেন। ভুলেও সেখানে মওলানা আবুল কালামের নাম উচ্চারিত হয়না। তিনি তাঁর অনুষ্ঠানে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে এনেছিলেন। একই মঞ্চে জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত একটা এনজিও-র নির্বাহী পরিচালকও উপস্থিত ছিলেন। শোনা গিয়েছিলো ওই অনুষ্ঠানের অর্থের যোগান দাতা ছিলো ওই এনজিওটি। বোয়ালমারীর বাতাসে যেমন শহীদদের কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়, তেমনটি আজও দেখা যায় স্বাধীনতা বিরোধীদের উল্লাস!
(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ২৪, ২০২২)
পাঠকের মতামত:
- নেত্রকাণায় ভাগ্নের প্রহারে মামা খুন
- নড়াইলে জোরপূর্বক জমি দখল করে ফসল কেটে নিল দুর্বৃত্তরা
- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
- সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ১৮ বিঘা কৃষি জমি দরপত্র ছাড়াই ইজারা
- কোন মামলায় আসামি না হয়েও গ্রেফতার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা
- বিআরটিএ সাতক্ষীরা সার্কেলের উপর গণশুণানী অনুষ্ঠিত
- ওয়ালটন ইনভার্টার এসির পিসিবিতে ৫ বছরের ওয়ারেন্টি সুবিধা
- নোয়াখালীতে থানার গোলঘরে মারামারি, ৬ আসামির জামিন
- ‘কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চক্রান্ত করলে তাকে আমরা প্রতিহত করবো’
- মোংলায় আ.লীগের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে নেমেছে বিএনপি
- নলুয়া ভূঁইয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া ও পুরুষ্কার বিতরণ
- মোংলায় মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ফাদার রিগনের জন্মশতবার্ষিকী পালিত
- হত্যা করতে এনে জনতার হাতে ধরা খেল ৪ যুবক
- নোয়াখালী শিবপুর দরবার শরীফে চলছে বাৎসরিক ওরস মাহফিল
- লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে বিএনপি নেতাদের ধাওয়ায় পালালো আ.লীগ নেতা
- মায়ের বাধায় আটকে গেলো শহীদ আরাফাতের মরদেহ উত্তোলন
- র্যাব ও নৌ পুলিশের পৃথক অভিযানে ডাকাত সর্দারসহ ৩ জন গ্রেপ্তার
- টাঙ্গাইলে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপিত
- ফরিদপুর ওয়ালটন প্লাজার ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
- টাঙ্গাইলে তিন দিনব্যাপী কৃষি মেলার উদ্বোধন
- ফরিদপুরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখীর হাসি
- সালথায় শীতকালীন স্কুল, মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ
- বিএনপির ৪৭ নেতা খালাস, ঈশ্বরদীতে আনন্দ মিছিল
- নাটোরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচী
- ‘ফ্যাসিস্টরা ইতিহাস পড়ে কিন্তু শিক্ষা নেয় না’
- দেলদুয়ার-নাগরপুরের উন্নয়নে কর্মবীর এমপি টিটু
- প্রজন্মের কাছে এক মুক্তিযোদ্ধার খোলা চিঠি
- মঙ্গলবার থেকে ফের শুরু হচ্ছে বৃষ্টি, থাকতে পারে ৪ দিন
- তিস্তার পানিতে উৎপাদন হবে ২২ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৫ টন চাল
- ময়মনসিংহে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন তিন যৌনকর্মী
- ঈদগাঁওতে দিনব্যাপী শেখ রাসেল শিশু-কিশোর উৎসব
- কাঁপা
- শরীয়তপুরে বজ্রপাতে নিহত ৩
- বাসের ধাক্কায় খাদে লেগুনা, প্রাণ গেলো ৪ জনের
- অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বীর মুক্তিযোদ্ধা কলিমুল্লাহ চৌধুরী
- ‘ছাত্ররা নিজেরাই দল গঠন করবে’
- সাতক্ষীরায় ইজিবাইকের চাকায় ওড়না জড়িয়ে কিশোরীর মৃত্যু
- ভোলার তজুমদ্দিনে আত্নরক্ষায় কারাতে প্রশিক্ষণ
- শিক্ষায় সংস্কার আনলেই টেকসই হবে অন্য সংস্কার
- ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে’
- জামালপুরে মামলার বাদীকে হুমকি, আসামি গ্রেপ্তারের দাবি
- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলা শাখার কমিটি গঠন
- ওসি পরিচয়ে অপহরণ-চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রদল নেতা গ্রেফতার
- হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে পালিত হলো সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস
- সিটি ব্যাংকের ডিএমডি হলেন মেসবাউল আসীফ সিদ্দিকী