E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

১৩ ডিসেম্বর ধামরাই মুক্ত দিবস

২০২২ ডিসেম্বর ১২ ১৫:৫৪:১৫
১৩ ডিসেম্বর ধামরাই মুক্ত দিবস

দীপক চন্দ্র পাল, ধামরাই : ১৩ ডিসেম্বর ধামরাই মুক্ত দিবস। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধার ঝাপিয়ে পড়ে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তুলে। ১৯৭১ এর এই দিনে পাকহানাদার বর্বর বাহিনীর উপর ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক ঝাক বোমারু বিমান ঢাকা আরিচা মহাসড়কের ধামরাই-সাভারের মধ্যবর্তী বংশী নদীর ইসলামপুর এলাকায় সে সময় ফেরী ঘাটে উপযুপরি বোম ফেলে ও পাশাপাশি মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার বেনজীর আহমদের নের্তৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা স্থল পথে ব্যাপক আক্রমনের মুখে নিঃসংশ হত্যাকারী পাক বর্বর বাহিনীর সদস্যরা নিহত হয়। আহত হয় বহু। আহত দের নিয়ে হানাদার পাক বাহিনীরা ঢাকা আরিচা মহা সড়ক হয়ে বিভিন্ন পথে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

৭১ এর যুদ্ধকালীন মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার ও স্বাধীন বাংলার ধামরাইয়ের একাধিকবার নির্বাচিত সাংসদ আলহাজ্ব বেনজীর আহমদ বলেন ১৩ ডিসেম্বর ধামরাই কুশরা ও আমছিমুর এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে শত্রু পক্ষ পাক বাহিনীর সেনা নিহত হয়। এসময় ধামরাইয়ের তিন জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শহীদ হন শহীদ আবুল হোসেন, শহীদ মেছের আলী,শহীদ ওয়াহেদ শহীদ হন।

শেষ যুদ্ধে বাংলার অকেতুভয় মুক্তিযোদ্ধারা বর্বর পাকিস্থানীদের হাত থেকে ধামরাইকে শত্রু মুক্ত ঘোষনা করে ১৯৭১এর ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ এর মুক্তিযদ্ধের সময় রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে ধামরাই থানা ও বর্তমান ধামরাই উপজেলায় প্রথম হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় ৯ এপ্রিল থেকে।

এরপর থেকে ধামরাইয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে সক্রিয় হয়ে উঠে স্থানীয় অকেতুভয় দলে দলে যুবক। পাশপাশি পাক বাহিনীরা এক শ্রেনীর কিছু বাঙালীদের রাজাকার আলবদর, আলশামস্ গ্রুপ করে বাংলার সাধরন মানুষদের উপর যৌথভাবে নিঃসংশ হত্যা যঞ্জ, ধর্ষণ, অীগ্নসংযোগ, লুটপাট চালিয়ে বিতাড়িত করে এলাকা ও দেশ ছাড়া করে দেয়। নিঃশ হয়ে পড়ে এদেশে সব শ্রেনী পেশার মানুষ।

স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল পাক হানাদাররা ধামরাই সদর বর্তমান পৌর এলাকা থেকে ২৩ জন গ্রামবাসীকে আটক করে গরুর রশি দিয়ে, পিঠ মুড়া করে বেধে নিয়ে ধামরাই থানায় বিকেল পর্যন্ত বসিয়ে রাখে। এর পর ২৩ জনের মধ্যে ৪ জনকে বৃদ্ধ ভেবে ছেড়ে দেয়। এদের সাথে আরো ৪ জনকে ধরে নিয়ে ২৩ জনকে ঢাকা আরিচা মহা সড়ক দিয়ে ধামরাইয়ের কালামপুর বাজার নিয়ে যায়।

এরপর বাজারের পাশে বংশী নদী এলাকায় কালামপুর বাজার খাল পাড়ে নিয়ে লাইনে দাড় করানো হয়। এসময় পাকসেনারা সেখানে তাদের লাইনে দাড় করিয়ে “রাম নাম বলে গা” বলেই উপযুপরি গুলি ও ব্রাশ ফায়ার করে গণ হত্যা চালিয়েছিল। এখানে হত্যা করা হয়১৮ জনকে। আর আহত ও অক্ষত অবস্থায় বেচে যান ৫ জন।

এতে ঘটনাস্থলে ১৮ জনের মধ্যে ধামরাই হার্ডিঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজীর শিক্ষক এ্যাডভোকেট দীনেশ রায় মৌলিক ও তার ছেলে অরুন রায় মৌলিক (হাবুল রায় মৌলিক-বিএ), কলা ব্যবসায়ী গান্ধী পাল তার ভাই মাধব পাল, পাগল সূত্র ধর, গয়ানাথ রাজবংশী, বিশ্বনাথ পাল, চীনা বণিক, রাধা নাথ বণিক, মদন পাল, গণেষ পাল, লাল মোহন কর্মকার, দেবেন্দ্র সাহা, সদর বাজারের কামার শিল্পী বুদ্ধু সূত্র ধরসহ ১৮ জনের মৃত্যু হয়।

আর ওই সময় পাকানাদারদের গুলিতে গুরুতর আহত হলেও মৃত্যু হয়নি ভম্বল রাজবংশী, নেপাল পাল ও জগদ্বীশ পাল নামের তিন জনের। গুলি বিদ্ধদের মধ্যে বর্তমানে বেচে আছেন নেপাল পাল। ভম্বল রাজবংশী ১০ বছর ও জগদ্বীশ পাল ২২ বছর পূর্বেই মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়াও লাইনে দাড় করানো মুত্যুর হাত থেকে জুড়ান রায় মৌলিক ও বাবু লাল পাল ব্রাশ ফায়ারের সময় অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ায় তারা দুজন পুরোপুরি সুস্থ অবস্থায় বেচে যান।

এই দুজনের এক জন জোড়ান রায় মৌলিক বিগত ৩০ বছর আগেই এপৃথিবী থেকে বিদায় নেন। বাবুলাল পাল আজো সেই ভয়াল স্মৃতি নিয়ে বেচে আছেন।স্ত্রী ও ২ ছেলে সন্তান নিয়ে চলছে তার সংসার। তবে বাবু লাল পালের একটি সামনের দাত বর্বর পাক বাহিনীর বোটের লাথিতে পড়ে যায়। আজো সেই অবস্থায়ই আছে।

পাশাপাশি নেপাল পাল আকালী পালের ছেলে সহ ৫ জন গুলি বিদ্ধ হয়ে গুরুতর ভাবে আহত হন। স্থানীয় লোক জন সুস্থ্য ও আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে নিরাপদ দুরত্বে পাঠিয়ে দেয়। সন্ধ্যায় নিহত দের স্থানীয়রা এসে উদ্ধার করে কালামপুর বংশী নদীর পারে গণ কবর দিয়ে রাখে। এরা সকলেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক ছিল।

দেশ, স্বাধীন হবার ৪৭ বছর পরে দেশের ভোরের কাগজ পরে বিভিন্ন পত্রিকায় ও দেশ টিভি চ্যানেলে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে উপজেলা প্রশাসন আইন শৃংখলা মিটিংয়ে এবিষয়ে আলোচনা শেষে তদন্ত শুরু করে সঠিক তথ্য খুজে পায়। তৎকালীণ ধামরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (বর্তমানে তিনি সচিব) রেহানা কলি সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে বিগত সময়ে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে কালাম পুর বাজারের উত্তর পূর্ব কোনে একটি স্মৃতি তম্ভ নির্মাান করা হয়।

তবে নির্মিত স্থানটি সঠিক স্থানে হয়নি বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে ।এখনও সেখানে রাইস মিলের চাতাল। আজো পদদলিত হচ্ছে এই শহীদ বীরেরা। বর্তমানে স্মৃতি তম্ভের আশপাশে নোংরা আর্বজনাময় পরিবেশ বিরাজ করছে।

(ডিসিপি/এসপি/ডিসেম্বর ১২, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২১ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test