E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল লংগদুর সুজন মার্ক  

২০২৪ অক্টোবর ১০ ১৮:৪৬:৩০
ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল লংগদুর সুজন মার্ক  

রিপন মারমা, রাঙ্গামাটি : পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে স্বাভাবিক ভাবে পড়াশোনা করে বেড়ে উঠাই কষ্টসাধ্য সেখানে পরিবারের দায়িত্ব আর পড়াশোনার পাশাপাশি সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে ইন্টারনেট জগতের জ্ঞান অর্জন করে ফ্রিল্যান্সিং এ সফলতা পাওয়া সোনার হরিণের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়! এমনই এক সফলতার গল্প জানাবো আজ- ফ্রিল্যান্সার ও ইউটিউবার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে বড়ই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলার সুজন মার্ক। তিনি এখন ফ্রিল্যান্সিং উদ্যোক্তা হিসেবে বর্তমান সময়ে বিভিন্ন রোস্টিং কন্টেন্ট প্রসঙ্গে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

যেখানে অন্য আট দশজন ছেলের মতো নিয়ম মাফিক ১০টা-৫টা পর্যন্ত বেঁধে দেয়া চাকরীর জীবন কখনোই পছন্দ ছিলো না তার। ফলে কর্মময় একটি স্বাধীন জীবনের সূচনা করতে নিজের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তেই ফ্রিল্যান্সিং এবং কনটেন্ট ভিডিও করার অভিপ্রায় প্রকাশ করেন।

মার্কের শুরুর দিকের গল্পটা তার জন্য এতো সহজ সাবলীল ছিলো না। অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং এবং কন্টেন্ট ভিডিও বানানো তার জন্য অনেক কষ্টদায়ক ছিলো। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের সাথে পড়ালেখার পাশাপাশি অল্প টাকার স্মার্ট ফোন দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং ও ফানি কনটেন্ট বানানো শুরু করে। পর্যায়ক্রমে একের পর এক কন্টেন্ট ভিডিও বানায় সুজন মার্ক কিন্তু সফলতা নাগালের বাইরে! পরে সুজন মার্ক এর পরিবার যথেষ্ট মনোবল এবং সাহস দেয়। তবে এলাকার কিছু মানুষ এসব কন্টেন্ট ভিডিও দেখে অনেক তিরস্কার, হাস্যরস ও নিন্দনীয় কথাও বলে। এতোকিছুর পরেও থেমে যায়নি, হাল ছাড়ে নি সুজন মার্ক। এভাবে কয়েক বছর কেটে যায় আবারো মনে শক্তি সঞ্চার করেন মার্ক, নিজের সঙ্গে নিজেই প্রশ্ন করে নতুন উদ্দ্যোমে শুরু করে ফ্রিল্যান্সিং এ পথচলা।

ফ্রিল্যান্সিং জগতের হাতেখড়িতে প্রথম অবদান তার বড় ভাই। যিনি প্রথম থেকেই সবকিছুতে সমর্থন ও সহযোগিতা করে আসছেন। কাজের সুবিধার্থে সর্বপ্রথম একটি ল্যাপটপ কিনে দিয়েছেন। যার অনুপ্রেরণায় এ অনিশ্চিত পথ অতিক্রম করে শুরুতে দক্ষ কারিগরী জ্ঞান লাভ করা, পরে কাজ এবং দক্ষতা অনুযায়ী ধীরে ধীরে ফ্রিল্যান্সিং জগতের মার্কেট প্লেসে প্রবেশ করা।

এখানেও প্রথম প্রতিবন্ধকতা ছিলো কাজ না পাওয়ার হতাশা। প্রতিনিয়ত যোগাযোগ তৈরীর পাশাপাশি শ্রম এবং অধ্যবসায়ের বদৌলতে কাজ আসতে শুরু করে সুজন মার্কের কাছে। পরে তা ধীরে ধীরে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভেঞ্চারে রূপ নেয়। সুজনের এ সাফল্যের কারণে তার পরিবার সহ অন্য পাঁচ জন সদস্যও এতে মনোনিবেশিত হোন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মার্কেট প্লেসে। যেখান থেকে গড়ে প্রায় প্রত্যেকে ৭শত থেকে হাজার ডলার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়মিত কুড়াচ্ছেন নিজেদের উপার্জনের ঝুলিতে।

সুজন মার্ক উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ড গাউসপুর এলাকার ছাদেক মিয়া ও ছফুরা বেগম দম্পতির ছেলে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুজন দ্বিতীয়। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে এখন উচ্চতর শিক্ষায় ভর্তি হবেন।

সফলতার ব্যাপারে মার্কের বাবা ছাদেক মিয়া জানান, এতো এতো সন্তানের মধ্যে সুজন কেন আজকের আলোচনায় তার প্রসঙ্গ যদি বলা হয়, তবে জনহীতকর এই প্রকল্পটি কেবল নিজের মধ্যে লুকিয়ে না রেখে তার পরিচিত বন্ধুবান্ধব ও অন্যান্য সমবয়সীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত অংশ রাখছে প্রযুক্তিগত সহায়তায়। তথ্য ও প্রযুক্তির এই যুগে যেখানে সবাই বিভিন্ন কায়দায় মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছে, সেখানে সুজনের উদ্দ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার। তার হাত ধরে এ যাবতকাল প্রায় শতাধিক ফ্রিল্যান্সিং এক্সপার্ট বর্তমানে আন্তর্জাতিক মার্কেট প্লেসে কাজ করছে। কাজের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখছে সুজন।

সোশ্যাল মিডিয়ার বরাতে জানা যায়, বর্তমানে সুজন মার্কের ভেরিফাই ফেসবুক পেইজে অনুসরণকারীর সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৬০ হাজার পেরিয়েছে এবং ইউটিউব চ্যানেলে ১ লাখের অধিক। মার্ক তার ইউটিউব চ্যানেল থেকে উপহার স্বরূপ ১ এর অধিক সিলভার প্লে বাটন পেয়েছেন। এখন গোল্ডেন বাটনের অপেক্ষায়।

(আরএম/এসপি/অক্টোবর ১০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test