E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

নিরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপকে না বলুন

২০১৪ মে ১৭ ২২:১১:৩০
নিরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপকে না বলুন

দেশে দিন দিন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতি চারজনে একজন প্রাপ্তবয়স্কের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন লোক উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত!

এটি হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) ও কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ৫০ শতাংশ হৃদরোগের কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ। সারা বিশ্বে ৭১ লাখ মানুষ মারা যায় উচ্চ রক্তচাপের জন্য।

উচ্চ রক্তচাপ একটি লক্ষণহীন রোগ। সব সময়ের সচেতনতা এই নীরব ঘাতক থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। কীভাবে এরচিকিৎসা, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা যায়-সে বিষয়ে জানাটা জরুরি। বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবসে পাঠকদের জন্য অর্থসূচকের আয়োজন।

উচ্চ রক্তচাপ কী
একজন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১২০-এর নিচে সংকোচন চাপ ও ৮০-এর নিচে প্রসারণ চাপ স্বাভাবিক মাত্রা নির্দেশ করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের রক্তচাপ যদি সার্বক্ষণিক ১৪০/৯০-এর বেশি থাকে, তাহলে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে বলে ধরে নিতে হবে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ কিছুটা বাড়তে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
দেখা গেছে অধিকাংশ লোকই তাঁদের যে উচ্চ রক্তচাপ আছে তা জানেন না। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রোগীর ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। যাঁদের উপসর্গ থাকে, তাঁদের সাধারণত মাথাঘোরা,মাথাব্যথা,মাথা ঝিমঝিম করা,চোখে ঝাপসা দেখা, বুক ধড়ফড় করা, ঘুম না হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হয়ে থাকে। কখনো কখনো শ্বাসকষ্ট,নাক দিয়ে রক্ত পড়া,ধরনের উপসর্গও হতে পারে।

যারা আছেন ঝুঁকিতে

স্থূলকায় ব্যক্তি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি, ধূমপায়ী এবং যাঁরা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন,অতিরিক্ত উৎকণ্ঠায় ভোগেন যারা তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি।

রক্তচাপ মাপার আগে
রক্তচাপ মাপার আগে পাঁচ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে।রক্তচাপ মাপার ৩০ মিনিট আগে থেকে ধূমপান, চা ও কফি পান করা যাবে না। মাটিতে পা সমতলে রেখে, মেরুদণ্ড সোজা করে হাত হৃৎপিণ্ডের লেবেলে রেখে বসতে হবে। সঠিক মাপের বাহুবন্ধনী ব্যবহার করতে হবে। রক্তচাপ মাপার যন্ত্রটি সঠিক হতে হবে। অন্তত দুই মিনিট ব্যবধানে একাধিকবার রিডিং নিতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণে অন্যান্য জটিলতা

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গে(হৃৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ) মারাত্মক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

১.শতকরা ৪৯ ভাগের করনারি হৃদরোগ এবং ৬৪ ভাগের স্ট্রোক হয়ে থাকে উচ্চ রক্তচাপের কারণে। এটি হলে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি পুরু হয়ে যায়। হৃৎপিণ্ডের আকার বড় হয়ে যায়। হার্ট ফেইলিউর হতে পারে। ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

২.উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি ফেইলিউর হতে পারে অথবা কিডনি কার্যকরভাবে শরীরের বর্জ্য অপসারণের ক্ষমতা হারাতে পারে।

৩.মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে শরীরের অংশবিশেষ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।

৪.উচ্চ রক্তচাপের কারণে চোখের রক্তনালির ওপর ক্রমাগত চাপ পড়ায় জটিলতা দেখা দিয়ে অন্ধত্বের সৃষ্টি হতে পারে।

৫. এর কারণে রক্তনালির বাইরে দেয়ালে ক্ষত সৃষ্টি ও শক্ত হতে পারে।

৬. উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালির ভেতরের দেয়ালে চর্বি ও অন্যান্য পদার্থ জমে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।

৭. যৌন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যা করবেন

১.লবণ পরিহার করুন। বিশেষ করে কাঁচা লবণ খাবেনই না। লবণের প্রধান উপাদান সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ বাড়ায়। যা হৃদযন্ত্রের জন্য অতিরিক্ত বোঝা বাড়িয়ে তোলে। খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করা জরুরী। ক্যানজাত স্যুপ বা অন্যান্য খাবারেও প্রচুর সোডিয়াম থাকে। এই ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে।
সিগারেট

উচ্চ রক্তচাপ এড়াতে সিগারেট ও লাল মাংস পরিহার করা ভালো

২. যে কোনো নেশাকে না বলুন। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিন।

৩.অতিরিক্ত মানসিক চাপ পরিহার করুন। দু:শ্চিন্তা করবেন না। সারা দিন হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন।

৪.অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খাবেন না। লাল মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। গরু বা খাসির মাংস, স্যাচুরেটেড ফ্যাট,ফাস্টফুড,মিষ্টি এসব কম খাবেন।

৫.দৈনন্দিন কাজকর্মের তালিকায় কায়িক পরিশ্রম রাখুন। নিয়মিত হাঁটুন, প্রয়োজনে লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন বা ১ থেকে ২ কিলোমিটার হেঁটে অফিসে যান।

৬.ফলমূল, সবজি, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, পোল্ট্রিজাত খাবার, বাদাম ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন। বেশি করে আলু খেলে ভালো ফল পাওয়া যাতে পারে। সপ্তাহে অন্তত একদিনের জন্য নিরামিষভোজী হোন।

৭.হালকা ব্যায়াম করুন। একজন পূর্ণ বয়ষ্ক লোকের প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের মতো মাঝারি মাপের ব্যয়াম করা জরুরি। প্রতিদিন আধা ঘন্টার ব্যায়াম রক্ত চাপ ৫ থেকে ৮ ইউনিট পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।Salt

৮.খাবার খান পরিমিত। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এমনকি ১০ পাউন্ড ওজন কমালেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

৯. নিয়মিত পরিমিত চা পান করতে পারেন। দৈনিক ৩/৪ কাপ চা রক্তচাপকে বেশ নামিয়ে আনতে পারে। তবে কোনোভাবেই কফি পান করবেন না। কারণ কফিতে থাকা ক্যাফেইন রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

১০.পরিমিত বিশ্রাম নিন,খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম, রাত জাগা ইত্যাদি ত্যাগ করুন। সপ্তাহে ৪২ ঘন্টার বেশি কাজ না করাই ভালো। পর্যাপ্ত ঘুমের বিষয়ে গুরুত্ব দিন।

১১.কিছু কিছু কফ সিরাপ, ব্যথানাশক, স্টেরয়েড, ডায়েট পিল, জন্মনিরোধক বড়ি ও বিষন্নতার ওষুধ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ সেবন করবেন না।

১২.সপ্তাহে কমপক্ষে দু’বার রক্তচাপ মাপুন।

১৩. ক্ল্যাসিকেল বা ধীর লয়ের গন শুনুন। গান শোনার সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়ে। এটি রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।

প্রতিরোধের পাশাপাশি চিকিৎসাও জরুরী:
উচ্চ রক্তচাপ রোগীর চিকিৎসা আজীবনই চালিয়ে যেতে হবে। সুস্থ বোধ করলেই চিকিৎসা বাদ দেবেন না। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন। প্রতিদিন সময়মতো ওষুধ খাবেন। কোনো লক্ষণ নেই ভেবে ওষুধ খাওয়া বন্ধ রাখবেন না। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করাবেন। কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পরিবারের কোনো সদস্য উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হলে তাকে অভয় দিন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করুন।

কি করবেন হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে

সুস্থ ব্যক্তির হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে তাঁকে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কেউ কেউ মাথায় পানি দিয়ে বা বরফ দিয়ে আরাম পেতে পারেন। অনেকে তেঁতুলের শরবত খেয়ে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর মাধ্যমে রক্তচাপ কমে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অবশ্যই। প্রয়োজনে তিনিই দেবেন ওষুধ। আর যাঁদের আগে থেকেই রক্তচাপ বেশি, তাঁদের হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলেও অস্থির না হয়ে বিশ্রাম নেওয়া উচিত। মাথায় পানি বা বরফ দিয়ে সাময়িক উপশম হলেও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তবে নিজে থেকে রক্তচাপ কমানোর জন্য কোনো ওষুধ গ্রহণ করবেন না।

(ওএস/এস/মে ১৭, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৩ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test