E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভবন আছে ‘চিকিৎসা’ নেই

২০২৫ মার্চ ২৭ ১৯:০৮:১০
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভবন আছে ‘চিকিৎসা’ নেই

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : প্রতিটি তিন তলা বিশিষ্ট ভবনগুলোতে যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত করা হয়েছে। পেতে রাখা হয়েছে শয্যা। চিকিৎসক ও স্টাফদের জন্য রয়েছে ডরমেটরি। এমনকি বিদ্যুৎ চলে গেলেও বিকল্প হিসাবে বসানো হয়েছে জেনারেটর। গর্ভবতি মায়েদের সিজার ও শিশুদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নির্মিত এই হাসপাতালগুলো জনবলের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার হাজার হাজার হতদরিদ্র পরিবার। এমন দশা ঝিনাইদহের ৪ টি ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের। অথচ হাসপাতালগুলো উদ্বোধন করা হয়েছে ৬ বছর আগে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই হাসপাতালগুলো নির্মাণে প্রতিটির ব্যায় হয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যা বাস্তবায়ন করেছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০১৮ সালে হাসপাতালগুলো উদ্বোধন করা হয়। তবে উদ্বোধনের পর থেকেই পরিপূর্ণ চালু হয়নি এই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রগুলো। দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসকসহ পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়ার দাবী স্থানীয়দের। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে বার বার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সহসায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

জেলার শৈলকুপা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম দুধসর। এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কথা চিন্তা করে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নির্মাণ করে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। উদ্বোধন হলেও জনবল নিয়োগ না হওয়ায় আজও চালু হয়নি হাসপাতালটি। একইভাবে সদর উপজেলার দক্ষিণ কাষ্টসাগরা, কালীগঞ্জের পৌরসভা, শৈলকুপার কাচেঁরকোল গ্রামে নির্মিত হাসপাতালগুলো জনবলের অভাবে নষ্ট হতে চলেছে।

স্থানীয়রা প্রথমে হাসপাতাল পেয়ে খুশি হলেও প্রত্যাশিত সেবা না পাওয়ায় এখন তারা হতাশ। ১০ শয্যার হাসপাতাল ভবনটিতে দুটি চিকিৎসকের চেম্বার, দুটি নার্স রুম, ফার্মেসি, ল্যাব, ওয়েটিং রুম, কাউন্সেলিং রুম, স্টোর রুম, খাবার সরবরাহ কক্ষ, অফিস কক্ষ ছাড়াও রোগীদের জন্য সাধারণ ওয়ার্ড, এসি সংবলিত অপারেশন থিয়েটার,পোস্ট অপারেটিভ রুমসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কক্ষ রয়েছে। কিন্তু জনবল নিয়োগ না হওয়ায় হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হয় না।

বর্তমানে ১০ শয্যার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দগুলোতে চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, নৈশ্যপ্রহরী, আয়া সংকট সহ রয়েছে ওষুধ সংকট। শুধুমাত্র জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিভিন্ন উপকরণ প্রদান করা ছাড়া চোখে পড়ার মতো নেই কোনো স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।

হাসপাতালগুলোতে সেবা নিতে আসা রহিমা বেগম, রিনা বেগম, চম্পা ও বেগম জানান, ‘হাসপাতালটি উদ্বোধনের পর তারা কাক্সিক্ষত সেবা পাননি। এখানে কোনো চিকিৎসক, নার্স সংকট সহ প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকে না। রোগী ভর্তি, অপারেশন ও চিকিৎসাসেবা না থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এই এলাকার মানুষদের কোনো কাজেই আসছে না। সেবা কার্যক্রম না থাকায় দূরের জেলা সদর হাসপাতাল বা অন্য বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা পেতে রোগীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেক সময় রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।’

দুধসর গ্রামের হায়দার আলী বলেন, ‘গ্রামটিতে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র করায় অনেক খুশি হয়েছিলাম। ৬ বছরেও এটি পরিপূর্ণভাবে চালু হয়নি। স্বল্প পরিসরে কয়েকজন স্টাফ সীমিত আকারে সেবা দিচ্ছে। কেন্দ্রটি দ্রুত চালু করতে পারলে তৃণমূল থেকেই আমরা কাক্সিক্ষত সেবা নিতে পারব। মা ও শিশু কল্যাণটির চালু না হওয়াতে আমাদের বাড়তি টাকা খরচ করে জেলা শহর বা উপজেলা শহরে যাওয়া লাগছে।’

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র চালুর বিষয়ে ঝিনাইদহ পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহা: মোজাম্মেল করিম বলেন, ২০১৮ সালে হাসপাতালগুলো উদ্বোধন করা হলেও জনবল সংকটের কারণে তা পুরোদমে চালু করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালটি চালু রাখা হয়েছে। সহসায় হাসপাতালটি পুরোদমে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

(এসআই/এসপি/মার্চ ২৭, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

৩১ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test