E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

বাগেরহাটে নামেই ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল 

২১ চিকিৎসক দিয়ে খুড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা

২০২৫ মার্চ ১৪ ১৯:০৮:১৫
২১ চিকিৎসক দিয়ে খুড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা

সরদার শুকুর আহমেদ,  বাগেরহাট : বাগেরহাট জেলার ১৮ লাখ মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র জেলা ২৫০ শয্যার হাসপাতালটির টিকিট কাউন্টার, জরুরী বিভাগ, চিকিৎসকের কক্ষ, প্যাথলজি, ফার্মেসি, ওয়ার্ড, ফ্লোর সর্বোত্রই রোগীর উপচে পড়া ভীড়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কেটেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না চিকিৎসা নিতে আনা রোগীরা। জেলা ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকৎসকের ২২০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এখন আছে মাত্র ২১জন। জনবল সংকটের কারনে পহেলা জানুয়ারি খেকে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকটের কারনে এখন বাধ্য হয়ে উন্নত চিকিৎসার আশায় রোগীদের যেতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকা বা খুলনায়। 

হাসপাতাল সূত্রে জানায়, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে চলছে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালটি। জেলার প্রধান এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। ২৫০ শয্যার বিপরীতে ৩৫০ থেকে ৫০০ জন পর্যন্ত রোগী ভর্তি থাকেন নিয়মিত। নামে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল হলেও নেই প্রয়োজনিয় চিকিৎসক। চিকৎসকের ২২০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এখন আছে মাত্র ২১ জন। ৫০ জন সেবিকা থাকলেও প্রয়োজন আরো ২০০ জন সেবিকার। এই হাসপাতালটিকে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনির ৩৭টি পদ এখন শূন্য রয়েছে। এখন এই হাসপাতালটি ১০০ ময্যার জনবল দিয়ে চললেও চিকিৎসকদের মধ্যে চক্ষু এ্যানেসথেশিয়া, সার্জারী, নাক-কান-গলা, কার্ডিওলজিরসহ ৮ জন সিনিয়র কনসালটেন্ট মত গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাকা রয়েছে।

জুনিয়র কনসালটেন্টের ৭টি পদ খালি রয়েছে। নেই সিটি এসকান, এমআইআর, আকো, ইটিটি, ইউরোলজি, সিরাম ইলেক্ট্রোলাইট, থাইরয়ডের পরীক্ষ, লেবরোজকপি মেশিন। মেশিন না থাকায় নেই ১০ বেডের ডায়লাইসিস ইউনিট। চিকিৎসক, সেবিকাই নয়, তীব্র জনবল সংকট নয়, প্রয়োজনীয় ঔষধ সংকটও রয়েছে এই হাসপাতালে। ঔষধসহ অন্যান্য খাতে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালটির জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে মাক্র ৬ কোটি টাকা। ঔষধ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগ নির্নয়ের ব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রোগীরা যাচ্ছেন খুলনা-ঢাকার বিভিন্ন বড় হাসপাতালে। যার ফলে রোগীরা অর্থনৈতিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, তেমনি পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। অনেককেই আবার অর্থ সংকটে বাধ্য হয়ে এখানেই পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন শিক্ষক মাসুদা করিম জানান, হাসাপাতালের টয়েলেটগুলো এত নোংরা যে ব্যবহার করা খুবই কষ্ট কর। টয়েলেট ব্যবহারে রোগী আরও অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছে।, শিশু বিভাগে ৪০টি শয্যার বিপরীতে শতাধিক রোগী ভর্তি থাকায় কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যায়না।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা কারুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহ আগে বাবাকে নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। এখনও সুস্থ্য হয়নি, চিকিৎসক বলছেন সব পরীক্ষা নেই, খুলনায় নিয়ে যান। তাই বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি, টাকার ব্যবস্থা করতে পারলে খুলনা নিয়ে যাব।

টিকিট কাউন্টারে অপেক্ষারত সেকেন্দার গাজী জানান, অনেকগুলো কাউন্টার রয়েছে। কিন্তু মাত্র দুটি কাউন্টারে টিকিট কাটছে। গর্ভবতি মায়েদের কাউন্টারটিও খালি রয়েছে। যদি লোকই না থাকে তবে, কাউন্টার রেখে লাভ কি।

বুকে ব্যাথাসহ নানা অসুবিধা নিয়ে গেল বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শরণখোলা উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্রামের বিধবা শাহনুর বেগম। বেড না পেয়ে মেঝেতেই চলছে তার চিকিৎসা। সরকারি হাসপাতালে থেকেও, বাইরে থেকে ঔষধ কিনতে হচ্ছে আমার মতো হতদরিদ্র রোগীর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের দায়িত্বরত একধিক চিকিৎসক ও সেবিকারা জানান, জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে আমাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় রোগীরাও রাগ করে থাকেন। আমাদের কিছুই করার থাকেনা।

বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার জানান, হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও সেই জনবল এখনো পাইনি। এখনো ১০০ শয্যার জনবলে চলছে। এরমধ্যে হাসপাতালটিতে ৫৮টি প্রথম শ্রেনির পদের মধ্যে ৩৭টি পদই শুন্য রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পদেও চরম জনবল সংকট রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার অনেক যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে। রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পরেও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। জনবলসহ অন্যান্য সংকটের বিষয়টি উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

(এস/এসপি/মার্চ ১৪, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৪ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test