E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

মানবিকতা ও পাশবিকতা

২০১৪ মে ২৩ ১২:৩৮:৪৫

বিপ্লব শাহনেওয়াজ : অস্ট্রেলিয়া মহাদেশটি একটি বিশাল দেশ নিয়েই তৈরী। সাথে আছে নিউজিল্যান্ড,ফিজি সহ অসংখ্য দ্বীপদেশ।অস্ট্রেলিয়াতে ইংরেজরা ১৭৭০ সালে বসতি স্থাপন করে - প্রধানত দাগী, ভয়ঙ্কর অপরাধীদের অস্ট্রেলিয়াতে নির্বাসন দিয়ে ব্রিটিশরা একটি পেনাল কলোনি তৈরী করে। মাত্র দুই শতকে সেই দাগী অপরাধীরা এবং তাদের বংশধরেরা দেশটিকে পৃথিবীর অন্যতম সভ্য, আধুনিক, মানবিক, সম অধিকারের দেশে পরিনত করে।

যে জাপান দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এবং তার পূর্ববর্তী সময়ে নাজিদের দলে থেকে পূর্ব রনাঙ্গনে আগ্রাসী ভূমিকায় যুদ্ধ করেছে। বারে বারে প্রতিবেশী চীন সহ অনান্য দেশের সাথে লিপ্ত হয়েছিল সংঘাতে। পার্ল -হারবারে আক্রমনের মধ্য দিয়ে প্রমান করেছে সামুরাইয়ের জাতিরা কত নৃশংস ছিল। ৯ অগাস্ট ১৯৪৫ এর সকালে পারমানবিক বোমা 'ফ্যাট ম্যান' - আঘাত করে নাগাসাকিতে,তার আগে ৬ অগাস্ট অনুরূপ একটি পারমানবিক বোমা আঘাত হানে হিরসিমাতে। মানবতার বিরুদ্ধে পারমানবিক আগ্রাসন সেই প্রথম এবং দ্বিতীয়। সেই আঘাত পাল্টে দিয়েছে জাপানকে,পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলির মধ্যে জাপান একটি, যেই দেশে মানুষ বাঁচে সবচেয়ে বেশি। জাপানিরা নম্র,ভদ্র এবং অমায়িক।

কি এমন জাদুর পরশ এই দেশ দুটিকে এমন আধুনিক করলো-যেখানে শীতলক্ষা র স্রোতে মানুষের লাশ ভাসে না। ফুল গাজিতে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করে, পুড়ে মরতে হয় না। আমরা প্রায়স্যই 'পাশবিক' কথা টা ব্যবহার করি। পশু থেকে পাশবিক। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-দেশ-লিঙ্গ নির্বিশেষে মানুষের পরিচয় সে একজন মানুষ। জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মানুষের জৈবিক প্রক্রিয়া এবং বংশ বৃদ্ধির জন্য প্রজনন প্রক্রিয়া অনন্য জীবের মতই। আমরা আহার করি শক্তি পাবার জন্য, আমরা প্রজনন করি বংশ বিস্তার করার জন্য। জৈবিক গঠনে মানুষের অঙ্গ- প্রতঙ্গ এবং মস্তিস্কের কাঠামো এবং কর্মক্ষমতা অন্য যে কোনো প্রাণীর চেয়ে বেশি সুগঠিত। আর তাই মানুষ চিন্তা করতে পারে। আমাদের মস্তিস্ক আমাদের চারপাশ থেকে জন্মাবধি বিভিন্ন তথ্য,তত্ত প্রভৃতি সংগ্রহ করে - স্মৃতি হিসাবে মস্তিস্কে জমা করে রাখে।আমরা আমাদের মস্তিস্কে সঞ্চিত তথ্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকি- আমাদের বিচার, বিচক্ষণতা সব কিছুই ওই সব তথ্যের উপর ভিত্তি করে। আর এই কাজটি পৃথিবীর আর কোনো প্রাণী এত ভালো ভাবে,নিখুত ভাবে করতে সক্ষম নয়। এখানেই মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর মাঝে তফাত তৈরী হয়।

প্রতিটি প্রাণী প্রাকৃতিক নিয়মে প্রকৃতি থেকে ই তার খাদ্য যোগার করে। প্রাণীটি যখন ক্ষুধার্থ ঠিক তখন ই সে খাবার শিকার করে, হয় তো অন্য প্রানীকে হত্যা করে। প্রতিটি জীবের বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ঠ আছে , এই সব প্রাণীরা যখন ভরা পেটে থাকে তখন কিন্তু শিকার ধরা থেকে বিরত থাকে। তাই ক্ষুধার প্রয়োজন ছাড়া এবং খাদ্য ছাড়া এরা অন্য জীব হত্যা করে না। প্রজনন সক্ষম প্রাণীরা সঙ্গম করে, শুধুমাত্র তার সঙ্গীর সাথেই- বংশ বৃদ্ধির জন্য। এদের হাতে একটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক পশু কখনই নির্যাতিত হয় না - ধর্ষণের শিকার ও হতে হয় না শিশু পশুদের। দুর্নীতি,ঘুষ,ধর্ষণ,যৌন নির্যাতন, খুন, পারভার্টসন, হিংসা, মাদক - এই সব আদিম এবং আধুনিক অপরাধ গুলির কোনটি আছে পশুদের মাঝে ? কিন্তু আমরা যারা আশরাফুল মাখলুকাত মনে করি নিজেকে তাদের মধ্যে ই অপরাধ গুলি আছে - এখন ও কি আমরা বলব পাশবিক হত্যা কান্ড ? মানুষ আহারের প্রয়োজনে অন্যকে হত্যা করে না, যেইটা পশুরা করে - মানুষ মানুষকে হত্যা করে লোভ, হিংসা আর ক্রোধের গোলক ধারায় - যখন নিজের সর্বোচ্চ মানবিক শক্তি বিচক্ষণতা , বুদ্ধিদীপ্ততা নিস্প্রভো হয়ে যায়।

সুইডেন এ ফ্যামিলি মেডিসিন ( প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র) এবং হাসপাতাল গুলির মাঝে সমন্নয় এমন ভাবে করা যে, একমাত্র জরুরী চিকিত্সা ছাড়া, অন্যক্ষেত্রে রোগীরা তাদের স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেকোনো রোগের জন্য যোগাযোগ করবে। ফ্যামিলি চিকিত্সক যদি মনে করে এই রোগীকে রেফার্ড করতে হবে- তবেই রোগী হসপিটালের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের সরনাপন্ন হতে পারবে। কোনো রোগী যদি তার নিজ শহর বাদে অন্য শহরে গিয়ে অসুস্থ হয়,তবে তাকে সেই মুহুর্তে প্রয়োজনীয় জরুরী চিকিত্সা দেয়া হবে,এবং এর পরে রোগীকে হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করবে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।

এই আইন সর্ব সাধারণের জন্য প্রযোজ্য। কোনো অবস্থাতেও এর ব্যতয় ঘটে না- সে যেই হোক না কেন। আমার একজন রোগী সুইডিশ জাতীয় সংসদের সরকারী দলীয় সদস্য। সংসদ চলাকালীন সময়ে রাজধানী স্টক হলম এ আছে। আমি একটা এম.আর.ই. করার জন্য রোগীকে পাঠালাম স্টক হলম এর একটি জায়গায় - বলা বাহুল্য এম. আর. ই. অর্ডার টা স্টক হলম এ করা যাবে না এই মর্মে আমার কাছে চিঠি আসে,কারণ রোগী অন্য শহরে বাস করে এবং এই পরীক্ষাটি জরুরি ভিত্তিতে করার কোনো প্রয়োজন ও নেই, তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে।

আমি আমার রোগীকে জানালাম।রোগী মেনে নিল এবং আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলল যে সে তার ফ্যামিলি চিকিত্সকের কাছে যাবে।জনগনের ট্যাক্স এর টাকা সবার আমানত। আমাকে মার খেতেও হলো না- দেশের বন্ধুদের মত। আইন এখানে সবার জন্য সমান। গণতন্ত্র কোন অবস্থায় গেলে মানুষ এই সুফল পেতে পারে - সেইটাই আমাদের বুঝতে হবে। গণতন্ত্র রাষ্ট্র যন্ত্র থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানে বিরাজমান , গণতন্ত্র রয়েছে পারিবারিক পরিমন্ডলে - নিজের ছেলেই বলে আমার ইচ্চার বিরুদ্ধে তুমি জোর করে কিছু করাতে পারবে না। গণতন্ত্র, সমাজমুখী রাষ্ট্র সেবা , সচ্ছতা যে একটি জাতিকে অপরাধবিমুখী করে তার প্রমান উত্তর মেরুর এই দেশ গুলি। না কোনো শরিয়া আইন দিয়ে হাত কাটার কথা এরা বলে না চুরির অপরাধে - বরং চোরকে পিটালে তারই শাস্তি হবে। চুরি যদি হয়েই থাকে তবে ও তুমি বিমা করে রেখেছ- চোরকে পিটাও কোন অধিকারে ! না নরেন্দ্র মদীয় উন্মদ্দনা ও নাই এখানে।এরা গির্জা কে বিদায় দিয়েছে আজ থেকে ৫০ বছর আগে - গির্জা শুধুই পাথর ছাড়া কিছু নয়। অপরাধীর অভাবে এদের জেলখানা গুলি একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একটা কথা প্রমান করা যায় অপরাধ প্রবণতা, অবিচার,অসমতা প্রভৃতি সামাজিক ত্রুটি গুলি সামাজিক ভাবেই দূর করতে হবে - ধর্মের এখানে কোনো ভুমিকা ই নাই।

(মে ২৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২১ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test