E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বিশ্ব আঙুল তুলছে সৌদি সরকারের দিকে, সৌদি দুষছে পুণ্যার্থীদের

২০১৫ সেপ্টেম্বর ২৬ ১৬:১৫:৩৪
বিশ্ব আঙুল তুলছে সৌদি সরকারের দিকে, সৌদি দুষছে পুণ্যার্থীদের

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক :  জুম্মাবারে ফের রাস্তায় পুণ্যার্থীর ঢল। রক্তের দাগ পর্যন্ত নেই মিনায়। জমরাত পরব ঘিরে আবারও মশগুল হজভূমি মক্কা। তবু পিছু ছাড়ছে না গত কালের রেশ।

হজভূমিতে পদপিষ্ট হয়ে ৭১৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তাই ফের কাঠগড়ায় সৌদি প্রশাসন। মক্কার হজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছিল গত কালই। আজ সৌদি প্রশাসনকে নিশানায় রেখে তোপ দাগলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই।

মিনার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৪ জন ভারতী ও ৫ বাংলাদেশীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

কিন্তু সৌদি আরব কী বলছে?

সরকারি ভাবে এখনও হতাহতের তালিকা প্রকাশ করেনি প্রশাসন। সৌদি রাজা সলমন শুধু জানিয়েছেন, দেশের হজ কমিটি ঢেলে সাজার

কাজ শুরু হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে এবং হজ চলাকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে পুরোদমে চলছে তদন্তও। তদন্ত কমিটির মাথায় সৌদি যুবরাজ মহম্মদ নইফ। কিন্তু এর পরেও হতাহতের তালিকা প্রকাশ না করে পদপিষ্টের ঘটনায় প্রশাসন শুধুই কেন হজযাত্রীদের দুষছে, প্রশ্ন উঠছে। এখনও পর্যন্ত তথ্য যা মিলেছে, তার বেশির ভাগটাই দেশ-বিদেশের হজ কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় হাসপাতালের তরফে। জানা গিয়েছে মৃতের সংখ্যা পাকিস্তান, ইরান এবং মরক্কো থেকেই সব চেয়ে বেশি— যথাক্রমে ২৩৬, ১৩১ এবং ৮৭। মিশর, তুরস্ক, আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং নেদারল্যান্ডস থেকে আসা কিছু হজযাত্রীও গত কাল পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে তবু ২৪ ঘণ্টা পরেও ধোঁয়াশা কাটছে না। স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি, গত কাল ৩৫০ জন নিরাপত্তা কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসেন রাজকুমার মহম্মহ বিন সলমন আল-সাউদ। অভিযোগ, তাঁর কনভয়ের জন্যই জমরাত

ব্রিজে ঢোকার মুখে এক দিকের রাস্তা বন্ধ রাখে প্রশাসন। সেই কারণেই হঠাৎ হুড়োহুড়ি পড়ে যায় ২২৩ এবং ২০৪ নম্বর রাস্তার মোড়ে। যার পরিণাম, শয়তানকে পাথর ছুড়তে আসার পথে পদপিষ্ট হয়ে কয়েকশো হজযাত্রীর মৃত্যু।

একই অভিযোগ ব্রিটেনের একটি হজ পর্যটন সংস্থার মালিক মহম্মদ জাফারিরও। তাঁর কথায়, ‘‘যে কোনও দুর্ঘটনাকেই ‘আল্লার ইচ্ছে’ বলে চালানোটা সৌদির চালাকি ছাড়া কিছু নয়। আল্লার ইচ্ছে নয়, মানুষের অকর্মণ্যতা আর উদাসীনতার কারণেই এত বড় বিপর্যয়।’’

সৌদি প্রশাসন অবশ্য আজ দিনের শুরুতেই এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ফের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে হজযাত্রীদেরই। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ আজও বলেন, ‘‘আমরা যে ভাবে নির্দেশ দিয়েছিলাম, পুণ্যার্থীরা তা মেনে চললে এমন ঘটনা কিছুতেই ঘটত না।’’ বস্তুত এই মন্তব্যের রেশ টেনেই রাজা সলমনকে পাল্টা চাপে ফেলতে আজ ময়দানে নেমেছে ইরান ও ইন্দোনেশিয়া। ভয়াবহ এই বিপর্যয়ের দায় সৌদি সরকার কোনও ভাবেই এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন ইরানের ধর্মীয় নেতা খামেনেই।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডোর দাবি— ‘‘হজে প্রত্যেক বারই লাখো লাখো পুণ্যার্থী আসেন। তাই অতিরিক্ত ভিড়ের যুক্তিটা এখানে কোনও ভাবেই খাটে না। বরং ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসনকেই দায় নিতে হবে।’’

হজ কমিটি ঢেলে সাজার কথা আশ্বাস দিয়েছেন রাজা সলমনও। হজ উপলক্ষে প্রশাসনের পুরো ব্যবস্থাপনাই ফের খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন। তবু সৌদির

বিরুদ্ধে ইরান মুখ খোলায় এই দুই দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ঘিরেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কূটনীতিক মহলের একাংশ। ইরানের আক্রমণ প্রভাব ফেলেছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। একাংশ বলছেন, ‘‘এই শুরু হয়ে গেল দু’দেশের পিছন থেকে ছুরি মারার খেলা।’’

পারস্পরিক এই দোষারোপ কিংবা আন্তর্জাতিক কূটনীতি নিয়ে অবশ্য হজযাত্রীরা বিশেষ মাথা ঘামাচ্ছেন না। কালকের স্মৃতি এখনও মন থেকে মুছতে পারেননি বেশির ভাগই। অনেকে হজের মাঝপথেই দেশে ফিরতে চাইছেন। তবু তাঁদেরই একাংশ আজ মুখ খুললেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। অল্প সময়ে প্রথা (শয়তানের উদ্দেশে ঢিল ছোড়া) শেষ করার তাড়া, ক্লান্তিকর গরম এবং উল্টো দিক থেকে হঠাৎ আসা জনস্রোতের কারণেই যে এই বিপত্তি— মানছেন সবাই।

তা হলে, সৌদি প্রশাসন কেন হজযাত্রীদের দুষছে! এর ব্যাখ্যাও মিলল সরকারি তরফেই। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের দাবি, ‘‘প্রত্যেক বারই হজে নতুন নতুন পুণ্যার্থীরা আসেন। তাঁরা অনেক সময়ই কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বুঝতে পারেন না। বরং উল্টোটাই করে বসেন। অযথা আতঙ্ক ছড়ান।’’ এ বারও হয়তো তা-ই ঘটেছিল। কিন্তু এত মানুষের মৃত্যুর পরেও কি হুঁশ ফিরবে না প্রশাসনের। ফের প্রশ্নের মুখে মক্কা।

(ওএস/এসসি/সেপ্টেম্বর২৬,২০১৫)

পাঠকের মতামত:

১১ নভেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test