E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

‘সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ হলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন’

২০২৫ মার্চ ০৬ ১৩:০৩:০১
‘সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ হলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ হলে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন, আর তা না হলে নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যেই- জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি আরো বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত দলটিকেই নিতে হবে। এছাড়া নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করবে তা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় বলেও জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা জানিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত বছর ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর নতুন সরকারের দায়িত্ব নিতে বলা হলে তিনি ‘চমকে’ গিয়েছিলেন বলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা অধ্যাপক ইউনূস জানিয়েছেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, “আমার কোনো ধারণা ছিল না যে- আমি সরকারের নেতৃত্ব দেব। আমি এর আগে কখনো সরকারি কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করিনি এবং আমাকে সবকিছু ঠিকঠাক করতে হয়েছিল।”

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেলে আমরা সবকিছু সংগঠিত করতে শুরু করি। যার মধ্যে- আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা এবং অর্থনীতি ঠিক করা দেশের জন্য অগ্রাধিকার ছিল।”

তিনি বলেন, “শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এবং এরপর অর্থনীতি। (সাবেক সরকারের রেখে যাওয়া) এটি এক ছিন্নভিন্ন অর্থনীতি, বিধ্বস্ত অর্থনীতি। এটা এমন কিছু যেন ১৬ বছর ধরে কিছু ভয়ানক টর্নেডো হয়েছে এবং আমরা এখন টুকরোগুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি।”

বিবিসি বলছে, এই বছরের শেষের দিকে নির্বাচন আয়োজন করার আশা করছেন অধ্যাপক ইউনূস। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সেখানেই নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা এবং তার দল সেই নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের জন্য হাসিনাকে ফেরত চাচ্ছে বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে বিবিসিকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে বলেন, “তাদের (আওয়ামী লীগকে) সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা এটা (নির্বাচন) করতে চায় কিনা, আমি তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। নির্বাচনে কে অংশগ্রহণ করবে তা নির্বাচন কমিশনই নির্ধারণ করে।”

বিবিসিকে অধ্যাপক ইউনূস জানান, তিনি ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবেন। তার সরকার কত দ্রুত সংস্কার করতে পারে তার ওপর নির্বাচনের এই সময়সীমা নির্ভর করছে। কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এসব সংস্কারকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যদি আমাদের ইচ্ছা মতো দ্রুত সংস্কার করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে আমরা নির্বাচন করতে পারবো। আর যদি সংস্কারের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।”

গত গ্রীষ্মে বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা সহিংস বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা থেকে এসেছি। (এমন বিশৃঙ্খলা যেখানে) মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।”

বিবিসি বলছে, কিন্তু প্রায় সাত মাস পেরিয়ে গেলেও ঢাকার মানুষ বলছেন, আইনশৃঙ্খলা এখনও পুনরুদ্ধার হয়নি এবং পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউসূস বলেন, “বেটার (ভালো) একটি আপেক্ষিক শব্দ। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি গত বছরের একই সময়ের সাথে তুলনা করেন তবে এটি (আইনশৃঙ্খলা) ঠিক আছে। এখন যা ঘটছে, তা অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা বা ভিন্ন কিছু নয়।”

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের বর্তমান দুর্দশার জন্য আগের সরকারকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনাগুলো হওয়া উচিত- তা আমি সমর্থন করছি না। আমি বলছি যে, আপনাকে বিবেচনা করতে হবে, আমরা কোনো আদর্শ দেশ বা আদর্শ শহর নই যা আমরা হঠাৎ করে তৈরি করেছি। এই অবস্থা হচ্ছে দেশের ধারাবাহিকতা যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি, এমন একটি দেশ যেখানে এসব বহু, বহু বছর ধরে চলছে।”

বিবিসি বলছে, শেখ হাসিনার নৃশংস শাসনের শিকার ব্যক্তিরা এখনও ক্ষুব্ধ। ছাত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর মারাত্মক দমন-পীড়নের জন্য তার বিচারের দাবিতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে এসেছেন। আদালত তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, কিন্তু ভারত এখনো কোনো সাড়া দেয়নি।

এখন অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের সময়ে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে হাসিনার প্রয়াত পিতা শেখ মুজিবুর রহমানেরসহ আওয়ামী লীগের সদস্যদের বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহিংসতাকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ এনেছিল।

বিবিসি আওয়ামী লাগের সদস্যদের এই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আদালত আছে, আইন আছে, পুলিশ স্টেশন আছে, তারা গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারে, অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারে।”

“আপনারা কেবল বিবিসির সংবাদদাতার কাছে অভিযোগ করার জন্য যাবেন না, আপনি থানায় গিয়ে অভিযোগ করুন এবং দেখুন আইন তার পথে চলছে কিনা।”

বিবিসি বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার এবং মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা দ্বারা অর্থায়িত প্রায় সমস্ত কর্মসূচি কার্যকরভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে প্রভাব ফেলবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এটি তাদের সিদ্ধান্ত।”

তিনি আরো বলেন, “এটি সহায়ক হয়েছে। কারণ তারা এমন কিছু করছে যা আমরা করতে চেয়েছিলাম- যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ইত্যাদি, যা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সরকারি উন্নয়ন সহায়তার তৃতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী। গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৪৫০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

এই ঘাটতি পূরণ করা হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “যখন এটি ঘটবে, আমরা তা সামলে নেব।”

(ওএস/এএস/মার্চ ০৬, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

০৯ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test