E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

যেভাবে নেপালের পাহাড় থেকে জাপানের নতুন ইয়েন নোট এল

২০২৪ জুলাই ০৬ ১৬:২২:৫২
যেভাবে নেপালের পাহাড় থেকে জাপানের নতুন ইয়েন নোট এল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাপানের নতুন ইয়েন নোটগুলো তৈরির প্রধান কাঁচামাল ছিল হলুদ ফুলের পেপারবুশ গুল্ম যা হিমালয় পর্বতঘেরা নেপালের বিভিন্ন গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা হয়। নেপালের হিমালয় পর্বতের অজানা এক স্থান থেকে পাওয়া হলুদ ফুলের পেপারবুশ গুল্ম থেকে তৈরি নতুন ইয়েনের নোট দিয়ে আজ থেকে জাপানের ব্যাঙ্কগুলো তাদের এটিএম ভর্তি করা শুরু করেছে৷

জাপানিদের মানিব্যাগে স্থান করে নেওয়ার আগে ইয়েন নোটগুলো কয়েক মাসের শ্রম এবং স্থল ও আকাশপথে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জাপানে পৌঁছেছে।

এর মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ নেপালের একটি সম্প্রদায় নতুন আয়ের উৎস পেয়েছে, যা তাদের বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ জাপান থেকে নগদ অর্থ আয় করার মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।

সাম্প্রতিক সময়ে জাপান ডিজিটাল লেনদেনের বিষয়টি আরো অনুপ্রাণিত করলেও দেশটিতে নগদ অর্থের এখনো ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ চিন যেখানে প্রায় ক্যাশলেস একটি ব্যবস্থা চালু করেছে, তা অর্জনে জাপান এখনো অনেকটা পিছিয়ে আছে।

জাপান সরকারের কাগজ সরবরাহকারী কোম্পানি কানপোর প্রেসিডেন্ট তাদাশি মাতসুবারা বলেছেন, "আমি বিশ্বাস করি, নেপাল জাপানের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে কারণ জাপানের অর্থনীতিতে নগদ অর্থ অপরিহার্য। জাপান এর জন্য নেপালের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল এবং নেপাল ছাড়া জাপানের অর্থনীতি সুন্দরভাবে চলবে না।"

গুল্ম থেকে নোটে রূপান্তরিত হওয়ার যে যাত্রা তা শুরু হয়েছিল হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নেপালের কিছু গ্রাম থেকে।

প্রতি বসন্তে এসব গ্রামের পাহাড়গুলো মিতসুমাতা গাছের ফুলের জন্য হলুদ রঙে ছেয়ে যায়, যা নেপালের স্থানীয়দের কাছে আর্জেলি বা পেপারবুশ নামেও পরিচিত। কান্টো ওয়েবসাইট অনুসারে, এই গাছগুলির দীর্ঘ ফাইবারযুক্ত শক্ত ছাল রয়েছে যা পাতলা অথচ টেকসই কাগজ তৈরির জন্য আদর্শ।

১৯৯০-এর দশকে কৃষকদের কূপ খননে সহায়তা করার লক্ষ্যে একটি দাতব্য উদ্যোগের মাধ্যমে কাগজ সরবরাহকারী কোম্পানি কানপো প্রাথমিকভাবে নেপালে প্রবেশ করে। এ সময় কোম্পানিটি পাহাড়ে বেড়ে ওঠা পেপারবুশের বিস্তীর্ণ ভূমি আবিষ্কার করে। কোম্পানিটি স্থানীয় কৃষকদের শেখানো শুরু করে, কীভাবে এই ফসল চাষ করতে হয়। প্রাথমিকভাবে এটি অল্প পরিমাণে উৎপাদন ও রপ্তানি করা হয়েছিল।

পরবর্তী বছরগুলোতে জাপানের নিজস্ব পেপারবুশের সংকট দেখা দেয়ায় কানপো এবং নেপালি কৃষকরা উল্লেখযোগ্যভাবে উৎপাদন বাড়িয়েছে। অবশেষে নেপাল জাপানের ইয়েন নোটের জন্য ব্যবহৃত কাগজের প্রাথমিক উৎস হয়ে ওঠে।

প্রক্রিয়াটি অনেক বড় বলে ব্যাখ্যা করেছেন মাতসুবারা। তিনি বলেন, কৃষকরা গ্রীষ্মের শুরুতে চারা রোপণ করেন, শরত্কালে শাখা সংগ্রহ করেন এবং তারপর বাষ্প দিয়ে, খোসা ছাড়িয়ে, ধোয়া এবং শুকানোর মাধ্যমে ছাল প্রক্রিয়াকরণের জন্য কয়েক মাস ব্যয় করেন।

শীতের মধ্যে কাঁচা কাগজ তৈরি হয় এবং কাঠমান্ডুতে পাঠানো হয়। তারপর ভারতের কলকাতা হয়ে জাপানের ইয়োকোহামায় পাঠানো হয়।

জাপানে আগমনের পর কাগজগুলো পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে যায় এবং নিকটবর্তী ওদাওয়ারা শহরে জাতীয় মুদ্রণ ব্যুরো সেগুলো প্রক্রিয়াকরণ, মুদ্রণ এবং নোটে রূপান্তরের কাজ করে।

নতুন ইয়েন নোট প্রবর্তনের সাথে সাথে পেপারবুশের চাহিদা বাড়ছে। কারণ হিসেবে মাতসুবারা উল্লেখ করেছেন, এই নোটগুলো তৈরি করতে আগে ব্যবহৃত নোটের তুলনায় বেশি কাঁচামাল লাগে।

২০২২ সালে পেপার আর্টিকেল এবং কাগজের স্ক্র্যাপসহ নোট ছাপানোর জন্য ব্যবহৃত পেপারবুশ ছাড়াও বিভিন্ন পণ্য নেপাল থেকে জাপানে রপ্তানি করা হয়েছে, যা জাপানে নেপালের মোট রপ্তানির ৯ শতাংশের বেশি। অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেসিটি (ওইসি) এর তথ্য অনুসারে, এর বাজার মূল্য ছিল ১.২ মিলিয়ন ডলার।

জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রনালয়ের হিসাবে, গত বছর দেশটিতে ৬০ শতাংশের বেশি লেনদেন নগদ অর্থ দিয়ে পরিচালিত হয়েছে যা ডিজিটাল লেনদেনের পাশাপাশি নগদ অর্থের অব্যাহত গুরুত্বের ওপর জোর দেয়।

মাতসুবারা বলেন, পেপারবুশ বিক্রয় থেকে লাভ নেপালি সম্প্রদায়ের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা নিয়ে এসেছে। এই ক্রমবর্ধমান শিল্পটি নেপালের যেসব গ্রাম কানপোর অংশীদার সেগুলোতে নতুন সুবিধা এবং অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করেছে, যা দুর্বল পরিবারগুলোকে নতুন আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রদান করে।

২০১৬ সাল থেকে কানপো জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা থেকে সাহায্য তহবিল পেয়েছে, যা তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে সাহায্য করেছে।

মাতসুবারা নেপালি অংশীদার গ্রামগুলোর প্রতিকুল অর্থনৈতিক অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেছেন, পাহাড়ের উচ্চতায় সীমিত কৃষি বিকল্পের কারণে এখানকার একটি পরিবারের আয় প্রায় ৬২ ডলার বা তার কম হতে পারে। বিপরীতে, নেপালের ইলাম জেলায় সাম্প্রতিক পেপারবুশ বিক্রি থেকে প্রায় ১ হাজার ১১৪ ডলার পেয়েছে এক একটি কৃষক পরিবার। তবে সিএনএন মাতসুবারার বক্তব্য যাচাই করতে পারেনি।

মাতসুবারা বলেন, "নেপালের মিতসুমাতা না থাকলে আমরা নতুন নোট তৈরি করতে সক্ষম হতাম না।"

(ওএস/এসপি/জুলাই ০৬, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৫ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test