E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই

২০২৫ মার্চ ১৬ ১৭:০৯:৩২
কীর্তিমানের মৃত্যু নেই

মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন


কাজই মানুষকে পৃথিবীর বুকে বাঁচিয়ে রাখে, কীর্তিমান এবং চিরস্মরণীয় করে। মহৎ মানুষ পৃথিবী থেকে দৈহিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেও পেছনে থেকে যায় তার মহৎ কর্ম। আর এ মহৎ কর্মই সাক্ষ্য দেয় মানুষের কীর্তি ও গৌরবের। অর্থহীন জীবন নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পর বেশিদিন তাকে মানুষ স্মরণ করে না। এ জীবন নীরবে ঝরে যায়। কিন্তু যে মানুষ তার ছোট্ট জীবনকে দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণে কাজে লাগায় তার জীবন হয় সার্থক। মহৎ কর্মের জন্য  হয় স্মরণীয় ও বরণীয়। তাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয় যুগ যুগ। এমনই একজন কর্মবীর ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আব্দুল কবির। যিনি কষ্টার্জিত সমস্ত সম্পদ ব্যয় করে গেছেন শিক্ষা, সামাজিক, মানবিক ও ধর্মীয় কাজে।

হবিগঞ্জের শিক্ষা বিস্তারে অনবদ্য রেখে গত ৩ মার্চ (২ রমজান) না ফেরার দেশে চলে গেছেন শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সাবাসপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আব্দুল কবির। তিনি হবিগঞ্জের শিক্ষাবিস্তােের ব্যাপক ভূমিকা পালন করে গেছেন। জায়গা ও অর্থ দিয়ে তিনি নিজ গ্রামে মায়ের নামে ‘জহুর চান বিবি মহিলা কলেজ’ এবং হবিগঞ্জের আনন্দপুরে নিজের নামে কবির কলেজিয়েট একাডেমি স্থাপন করেন। সাবাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাবাসপুর জামে মসজিদ, শায়েস্তাগঞ্জ নতুনব্রীজে মসজিদুল আমিন, বাবার নামে বিরামচর গ্রামে আশরাফ উল্লাহ হিফজুল কুরআন মাদ্রাসাসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তিনি নির্মাণ করেছেন নিজ অর্থে। এসব প্রতিষ্ঠানে শত সহশ্র শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে সমাজে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে। মুহাম্মদ আব্দুল কবির শুকতারার মতো উজ্জ্বল হয়ে ইতিহাসের অংশ হয়েছেন তাঁর অসাধারণ কর্মের জন্যে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ আব্দুল কবির ১৯৫৩ সালে ৩১ ডিসেম্বর সাবাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি শায়েস্তাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বৃন্দাবন সরকারি কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭১ সালে তিনি শায়েস্তাগঞ্জ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ক্যাপেটন এজাজ আহমদ চৌধুরীর অধীনে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজরের বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। স্বাধীনাতার পরে তিনি ব্যবসার সাথে জড়িত হন। ১৯৭৬ সালে তিনি আশরাফিয়া লাইব্রেরী ও ১৯৮৪ সালে নিশান ওভারসীজ পরে আইডিয়াল বিজনেস সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি জনশক্তি রপ্তানীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। হবিগঞ্জ সমিতি, জালালাবাদ এসাসিয়েশন ও হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের তিনি আজীবন সদস্য ছিলেন।

আলহাজ মুহাম্মদ আব্দুল কবির জীবদ্দশায় ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মেনে চলার আমৃত্যু চেষ্টা করে গেছেন। সদালাপী, দানশীল, পরোপকারী ও সহজ-সরল প্রকৃতির আব্দুল কবির অসংখ্যবার পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেছেন এবং নিজ টাকায় এলাকার অনেককে হজ্ব করার সুযোগ দিয়েছেন। পবিত্র রমজান মাসে তিনি মক্কা কিংবা মদিনা শরীফে ইতেকাফে কাটিয়েছেন অনেক বছর। জনহিতৈষী মুহাম্মদ আব্দুল কবির হাজী মুহাম্মদ মহসিনের মতো নিজের পৈত্রিক ভিটাও মসজিদে দান করেছেন। যার ভাড়ায় মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিজের সম্মানি দেওয়া হয়।

মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। মানবসেবায় ব্রতী আব্দুল কবির নিজে সংসারী না হলেও রেখে গেছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী, অসংখ্য শিক্ষক, আত্মীয়-স্বজনসহ বহু গুণগ্রাহী। চির কুমার মুক্তিযোদ্ধা কবির অগণিত শিক্ষার্থীকেই মনে করতেন তাঁর সন্তান। মরহুমের বড় ভাই সিরাজ হক ছিলেন সুসাহিত্যিক, জেলা শিক্ষা অফিসার ও বানিয়াচং সুফিয়া মতিন মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। মেঝো ভাই আব্দুস শহীদ একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।

মানব কল্যাণে সুকীর্তির স্বাক্ষর রেখে যাওয়া মুহাম্মদ আব্দুল কবির অমর, অক্ষয় ও শ্রদ্ধাভাজন হয়ে থাকবেন অনন্তকাল। সমস্ত বকুল ফুল যা জন্মেছে জন্ম হতে আজ অবধি, শ্রদ্ধায় ভরিয়ে দিলাম তোমার সমাধি। তুমি রবে নিরবে হৃদয়ে মম।

লেখক : অধ্যক্ষ, জহুর চান বিবি মহিলা কলেজ, শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ।

পাঠকের মতামত:

১৭ মার্চ ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test