জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন দিবস ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি
-1.jpg)
মীর আব্দুল আলীম
প্রাকৃতিক দুর্যোগ পৃথিবীর এক অবশ্যম্ভাবী অংশ, যা মানুষের জীবন, জীবিকা ও সম্পদকে বিপর্যস্ত করে তোলে। দুর্যোগ মানবজাতির এক বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ ভূগোলগতভাবে এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা অনেক বেশি। অতিরিক্ত বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প, নদীভাঙন এবং তীব্র গরম—এই সবই বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় আসা দুর্যোগের অন্তর্ভুক্ত। আর এরকম দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রতিবছর ১০ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত হয়। এই দিনটি মানুষের মধ্যে দুর্যোগের প্রতি সচেতনতা তৈরি করতে এবং দুর্যোগ প্রস্তুতি বিষয়ক কর্মকাণ্ডে অগ্রগতি প্রদর্শন করতে উৎসাহিত করে।
দুর্যোগ প্রশমন ব্যবস্থার সংজ্ঞা ও গুরুত্ব: দুর্যোগ প্রশমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে দুর্যোগের আগমন রোধ বা তার ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে বিভিন্ন স্তরের প্রস্তুতি, দুর্যোগের পূর্বাভাস এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমের উপর। দুর্যোগ প্রশমনের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি, তথ্য এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। এর মাধ্যমে শুধু মানবীয় ক্ষয়ক্ষতি কমানো হয় না, বরং অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত ক্ষতিও প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই ব্যবস্থা দুর্যোগ-পরবর্তী দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস এবং প্রস্তুতি বৃদ্ধি করার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকার একযোগে কাজ করছে। দুর্যোগের পূর্বাভাস এবং প্রশমন নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমও চলছে যাতে দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
দুর্যোগ প্রশমন দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন দিবসের মূল লক্ষ্য হলো জনগণকে দুর্যোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা এবং তাদের মধ্যে পূর্বপ্রস্তুতির মানসিকতা তৈরি করা। এছাড়া, এটি রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দুর্যোগের ক্ষতি কমাতে বিভিন্ন সংগঠন, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলার এক মাধ্যম। দুর্যোগ মোকাবেলায় সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ অপরিহার্য, এবং দিবসটি সেই সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পালন করা হয়। দিবসটির মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয় এবং দুর্যোগ প্রশমন ব্যবস্থার গতি বাড়াতে গঠিত কৌশল এবং পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। মানুষকে বুঝানো হয় যে কিভাবে তারা দুর্যোগের আগে প্রস্তুতি নিতে পারে, সঠিক সময়ে সরে যেতে পারে, এবং পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে।
বাংলাদেশের দুর্যোগ পরিস্থিতি: বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এখানকার ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু এবং নদী প্রবাহের কারণে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে। বাংলাদেশ মূলত নিম্নাঞ্চলীয় দেশ, যা নদীভাঙন, বন্যা, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড় এবং বৃষ্টিপাতের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া, দেশের নদীগুলো অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তাই এটি দুর্যোগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০০৭ সালে ‘সিডর’ নামক ঘূর্ণিঝড়, ২০১০ সালে ‘আইলা’, এবং ২০১৫ সালে ‘রোয়ানু’ নামক ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। অতএব, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও প্রশমন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উদ্যোগ: বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপকভাবে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়, যা ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতে সাহায্য করেছে। এর পাশাপাশি, বন্যা-প্রবণ এলাকার জন্য নদী খনন, বাঁধ নির্মাণ এবং নদী শাসন করা হয়েছে যাতে বন্যার জল দ্রুত প্রবাহিত হতে পারে। বর্তমানে, দুর্যোগ পূর্বাভাসের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে, ‘জিপিএস’, ‘নাসা স্যাটেলাইট’, ও ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ সতর্কীকরণ সিস্টেম’ এর মাধ্যমে দূরবর্তী পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার পূর্বাভাস প্রদান করা হয়। এসব তথ্য জনগণের মধ্যে দ্রুত পৌঁছে যায় এবং তারা পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারে।
উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে গড়ে উঠেছে। সুন্দরবন, যা পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় প্রাকৃতিক বাধা হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অনেকাংশে কমে যায় এবং উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই সীমিত থাকে। এছাড়া, সরকারি উদ্যোগে সুনির্দিষ্ট দুর্যোগ প্রশমন প্রশিক্ষণ প্রদান, ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন দুর্যোগ প্রশমন ফান্ডের মাধ্যমে দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমও আরও কার্যকর করা হয়েছে।
বন্যা ও নদীভাঙন নিয়ন্ত্রণ: বাংলাদেশের নদীভাঙন এবং বন্যা পৃথিবীর অন্যতম বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে পরিচিত এবং এর প্রভাব দেশের অর্থনীতি, জীবনযাত্রা এবং পরিবেশের ওপর ব্যাপক পড়ছে। বিশেষত, দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল বছরের পর বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব অঞ্চলে নদীভাঙন, বন্যা এবং ক্ষয়ক্ষতি জীবিকার জন্য ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে, কারণ সেসব এলাকায় কৃষি উৎপাদন এবং মানুষের জীবনযাত্রা মূলত নদী এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। নদীভাঙন এবং বন্যা মোকাবেলা করতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে নদী শাসন প্রকল্প অন্যতম। নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তন এবং বন্যার কারণে নদীভাঙন রোধে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণ, নদী পুনর্খনন এবং পলি জমা হওয়ারোধে নদী তীরের বৃক্ষরোপণ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদীভাঙন রোধ ও বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি, নদীর তীরে বৃক্ষরোপণ করে পানি প্রবাহের গতিপথকে স্থিতিশীল করা এবং নদীর তীরের ক্ষয় কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে, যাতে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি দ্রুততম সময়ে বাইরে সরে গিয়ে বন্যার ঝুঁকি কমানো যায়। বর্তমানে, বন্যা মোকাবেলার জন্য দেশের জলবায়ু পরিবর্তন সামলানোর লক্ষ্যে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া এবং বৃষ্টিপাতের ধরণে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, যার ফলে বন্যার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এই সমস্যা মোকাবেলায় বন্যা পূর্বাভাস ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিসংখ্যান এবং বিভিন্ন সেন্সর ব্যবহার করে বন্যার পূর্বাভাস এখন অনেক বেশি সঠিকভাবে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে, সময়মতো সতর্কবার্তা প্রাপ্ত হয়ে জনগণ নিরাপদ স্থানেও আশ্রয় নিতে পারে এবং ক্ষতি কমানো সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়া, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন যৌথভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য আধুনিক জলবায়ু পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন করেছে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া, রক্ষক সেনাবাহিনী এবং দমকল বাহিনী দ্রুত সাড়া দিয়ে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। এমনকি, বন্যা পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি উদ্ধারকাজের জন্য হেলিকপ্টার এবং নৌকাও ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে দ্রুততম সময়ে দুর্গত এলাকায় সাহায্য পৌঁছানো যায়। জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য সরকার বিভিন্ন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে, যাতে তারা জানে কিভাবে বন্যার সময় নিরাপদ থাকতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে কীভাবে দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু করা যাবে। এই সমস্ত উদ্যোগের মাধ্যমে, বাংলাদেশ বন্যা এবং নদীভাঙনের ভয়াবহ প্রভাব কমানোর জন্য ব্যাপক চেষ্টা করছে, তবে ভবিষ্যতে প্রকৃতির সাথে আরও সুরক্ষিতভাবে সমন্বয় করতে হবে।
ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সংকটকালীন ব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এবং এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং অন্যান্য বড় শহরগুলোর জন্য ভূমিকম্পের প্রভাব মারাত্মক হতে পারে, কারণ এগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। ভূমিকম্পের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ হিসেবে ভূত্বকীয় গঠন, ত্রুটিপূর্ণ ভবন নির্মাণ এবং অতি জনসংখ্যা বিবেচিত হচ্ছে। এসব শহরে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং অপর্যাপ্ত তড়িৎ প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার কারণে ভূমিকম্পের সময় বিপদ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এই ঝুঁকি মোকাবেলা করতে সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে প্রথমত, ভূমিকম্প সুরক্ষিত ভবন নির্মাণের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় বিল্ডিং কোড ও ভূমিকম্পের ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্মাণ নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, সুনির্দিষ্ট ভূমিকম্প সংকেত ব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে, যা ভূমিকম্পের আগেই জনসাধারণকে সতর্ক করে তুলবে। এর মাধ্যমে ভবন ও সড়কে দ্রুত উদ্ধার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
সরকার আরও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যেমন জনগণের মধ্যে ভূমিকম্প সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভঙ্গুর ভবন চিহ্নিত করে পুনর্র্নিমাণের কাজ শুরু করা। সারা দেশে ভূমিকম্প প্রস্তুতির জন্য স্থানীয় কমিউনিটি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় ত্রাণ ও উদ্ধার কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত মহড়া এবং প্রশিক্ষণ পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা করার জন্য জরুরি উদ্ধার কর্মী দল গঠন করা হয়েছে। এই দলের সদস্যরা ভবন ধ্বংসের পর সবার আগে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করবেন। এছাড়া, স্বাস্থ্য ও খাদ্য সহায়তার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে ভূমিকম্পের পর দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সারা দেশে ভূমিকম্পের জরুরি সহায়তা পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যাতে প্রতিটি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে জরুরি পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা থাকে। এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন এনজিও ও আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার সহযোগিতা গ্রহণ করা হচ্ছে। স্থানীয় জনগণকে ভূমিকম্প পরবর্তী সঠিক আচরণ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ প্রশমন: বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ও প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টি, তুষারপাতের কমে যাওয়া এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সহ নানা কারণে দেশটির দুর্যোগ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন, বন্যা, খরা, জলাবদ্ধতা, নদী ভাঙন এবং বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর সংখ্যা এবং তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ফসলের উৎপাদন কমছে, এবং এতে কৃষকের জীবন জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা বাড়ানোর কারণে মিঠা পানির উৎস সংকুচিত হচ্ছে, যা দেশের পানির সরবরাহ ব্যবস্থায় গুরুতর প্রভাব ফেলছে। এর মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহ জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, পানির সংরক্ষণ এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রীণ ওয়ান্টার ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এডও), জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় উন্নত পানি ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রবর্তন এবং সমুদ্র সৈকতের ক্ষয়রোধে ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরোপণ ও উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, দুর্যোগকালীন জরুরি সহায়তা ব্যবস্থা এবং স্থানীয় জনগণের জন্য অভিযোজন কৌশল তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কৃষিখাতে বিশেষত ধান ও সবজি চাষে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খুবই প্রকট হয়ে উঠেছে। এজন্য আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। টেকসই কৃষির প্রচলন, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং বায়োফসল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে কৃষির উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন প্রকল্প চালু করেছে, যার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পুনর্বাসন ও টেকসই জীবনযাত্রার জন্য স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় পুনর্বাসন কেন্দ্র, নিরাপদ আশ্রয়স্থল নির্মাণ, এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও এবং স্থানীয় সমাজ সেবী সংস্থাগুলি দুর্যোগের প্রভাব কমাতে এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে।
জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন দিবস আমাদের দুর্যোগের প্রতি সচেতনতা তৈরি করতে সাহায্য করে এবং সরকারের উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলা কার্যক্রম আরও শক্তিশালী ও সুষ্ঠু করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অগ্রগতি নিশ্চিতভাবেই প্রশংসনীয় হলেও, এই কাজটি অব্যাহত রাখতে হবে। দুর্যোগের আগে সতর্কতা এবং প্রস্তুতি নিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব-কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।
পাঠকের মতামত:
- ঘরে ঘরে স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়ে
- ‘সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ’
- কিউইদের স্বপ্ন ভেঙে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা ভারতের
- রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা
- ঈশ্বরদীতে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
- সোনারগাঁয়ে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে
- খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় সালথায় ইফতার ও দোয়া মাহফিল
- ‘আমরা ভাষা হারিয়ে ফেলেছি’
- দুই প্রকল্পের কাজ ১০ বছর আটকে থাকায় প্রধান উপদেষ্টার উষ্মা প্রকাশ
- ধর্ষণ-নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে খোলা হচ্ছে ‘হটলাইন’
- ১২ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
- ‘১৫ রমজানের আগে রাস্তা সংস্কার করা হবে’
- ‘ফরিদপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশ সর্বদা সতর্ক রয়েছে’
- আছিয়া ধর্ষণের প্রতিবাদে জামালপুরে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন
- সাতক্ষীরায় স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার
- নড়াইলে বিরোধপূর্ণ চরের জমি দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংর্ষের আশঙ্কা
- ডাকাতদের গ্রেফতার ও সুবিচার প্রাপ্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
- নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠক সহ দুইজন আটক
- ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের র্যালি প্রতিবাদ সমাবেশ
- সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ওকালত আলীর একদিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর
- বিষ খাইয়ে সৎ মেয়েকে হত্যা মামলায় মা গ্রেপ্তার
- গৌরনদীতে ইয়াবাসহ বিক্রেতা গ্রেপ্তার
- ছাত্রদল নেতার হাত ও পায়ের রগ কর্তন করেছে বিএনপি নেতা
- যুবদল নেতা হত্যায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা গ্রেপ্তার
- বিএনপির ব্যানার টাঙিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা
- ড. ইউনূস কি জনগণকে পাশে পাবেন না?
- ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনে রসাটমের নতুন প্রযুক্তি
- বাংলাদেশের সামনে এখন অনেক কাজ
- ‘ছোট ছড়ায় বড় কথা’ শেখ হাসিনার ছড়া
- তুমি যে সেনা কর্মকর্তার ভাঙা ঘর জোড়া লাগিয়েছিলে, সেই তোমাকে সপরিবারে খুনের উস্কানিদাতা! কী কঠিন হৃদয় তার! এই জন্যই বুঝি তিনি সানগ্লাসে চোখ ঢেকে রাখতেন; চোখ দেখলেও নাকি খুনী চেনা যায়!
- নির্ভার, তবুও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ইকবাল হোসেন অপু
- পালং-জাজিরায় দলীয় বিভেদ নিরসন করে চলেছেন অপু
- অপচিকিৎসা রোধে প্রয়োজন সেনা অভিযান
- রাজশাহীতে অটোরিকশায় ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ৫
- বাবাকে আজ বড্ড বেশি মনে পড়ছে
- ঝালকাঠি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে ৬ প্রার্থী নিয়ে ব্যাপক আলোচনা
- যুক্তরাষ্ট্রে নারীর হিজাব খুলে ফেলায় ৪ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
- প্ররক্ষা নির্দেশিকা হাইকোর্টে স্থগিত, স্বরাষ্ট্র সচিবকে তলব
- দুই মাস বন্ধ থাকার পর সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা শুরু
- জামিন চাইলেন সাদপন্থীদের প্রধান মুরব্বিসহ ২৫ জন
- ‘বরেণ্য নারীদের লেখায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ বই প্রকাশ
- বঙ্গবন্ধু
- দুই নারী কসাই, আলোচনা সর্বত্রই!
- লিভার রোগের ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজন সচেতনতা
- ‘লুটপাটের টাকা ফেরত আনতে হবে’