যৌন নিপীড়ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশু-বৃদ্ধা, প্রয়োজন জনসচেতনতা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
আজ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বিশ্ব যৌন নিপীড়ন বিরোধী দিবস ২০২৫। যদিও দিবসটি ঘিরে সরকারি–বেসরকারি ভাবে দেশের কোথাও কোনো উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় না। বিশ্ব যৌন নিপীড়ন বিরোধী দিবসটিকে গুরুত্ব দিয়ে নানা ধরণের সচেতনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করলে এ ধরণের অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব হতো। যৌন হয়রানি নারীর ক্ষমতায়নে অন্যতম অন্তরায়। ঘরে–বাইরে সর্বত্র নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়। এটি একটি সামাজিক ব্যাধি।
শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউই রেহাই পাচ্ছে না এ ব্যাধির হাত থেকে। নারীদের অবাধ বিচরণ হলেও তারা বিভিন্ন স্থানে যেমন:– বাড়ি, রাস্তাঘাট, যানবাহন, ফুটপাত কিংবা জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোতে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা। যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নারীই উল্টো সামাজিকতার ভয়ে গুটিয়ে নেয় নিজেকে। এ ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদ্যসের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়, তাদের জীবনে নেমে আসে দুবির্ষহ পরিস্থিতি। প্রতিবাদ করলে উল্টো হামলার শিকার হতে হয়, তাই অনেক নিরুপায় অভিভাবক বখাটেদের ভয়ে সন্তানের স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে গৃহবন্ধী করে রাখে। বখাটেদের উৎপাতে শৈশব- কৈশোর গৃহবন্ধী অবস্থায় কাটায় অনেক মেয়ে। একইভাবে কর্মস্থলে যৌন হয়রানির কারণে অনেক নারী চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয় এবং অনেক অভিভাবক মেয়েদের চাকরি করাতে চায় না। সামাজিক ও পারিবারিকসহ নানান ভয়ে এ ধরণের হয়রানির বিষয়টি গোপন রাখে নারী।
বিচারহীনতার প্রবণতায় যৌন হয়রানির মতো মারাত্নক অপরাধ বেড়েই চলেছে দিন দিন। বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে অহরহ। তথ্যানুসারে, তথ্য অনুযায়ী শুধু ২০২৫ সালে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ২৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা গত মাসের তুলনায় ২৪টি বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ৫৭টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৭টি, ধর্ষণ ও হত্যার ২টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী। ধর্ষণের শিকার ৫৭ জনের মধ্যে ১৬ জন শিশু, ১৭ জন কিশোরী, অপরদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩ জন কিশোরী ও ১৪ জন নারী এবং ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন ২ জন নারী। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা ১৯টি, যৌন হয়রানি ২৬টি, শারীরিক নির্যাতনের ৩৬টি ঘটনা ঘটেছে। আর ফেব্রুয়ারি মাসে ২ জন শিশু, ১২ জন কিশোরী ও ৩৪ জন নারীসহ মোট ৪৮ জন আত্মহত্যা করেছেন। গতমাসে অপহরণের শিকার হয়েছেন ৩ জন শিশু, ২ জন কিশোরী ও ৫ জন নারী, অপরদিকে ২ জন শিশু, ৩ জন কিশোরী ও ৩ জন নারী নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়া গতমাসে ১ জন শিশু, ২ জন কিশোরী ও ৬ জন নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৬৫ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে ২৬ জন শিশু ও কিশোরী রয়েছেন।
সদ্য বিদায়ী ২০২৪ বছরে নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার ২ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৬৭ জন শিশুসহ ৫১৬ জন। তার মধ্যে ৮৬ জন কন্যাসহ ১৪২ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ১৮ কন্যাসহ ২৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ৬ জন ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়াও ৫৮ জন কন্যাসহ ৯৪ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
যৌন নিপীড়নের শিকার ১৮১ জনের মধ্যে ১৩৫ জনই কন্যা শিশু। উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছেন ৪৫ জন এর মধ্যে ৩৭ জন শিশু, তার মধ্যে উত্ত্যক্তকরণের কারণে আত্মহত্যা করেছে ২ জন। বিভিন্ন কারণে ৭৭ জন কন্যাসহ ৫২৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ২৫ জনকে।
৫৭ জন কন্যাসহ ২৩৬ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ৭৬ জন কন্যাসহ ২১৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৬ জন কন্যাসহ ২৩ জন আত্মহত্যার প্ররোচনার শিকার হয়েছে। এছাড়াও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন ৭ জন কন্যাসহ ৮ জন নারী।
নারী ও কন্যা শিশু পাচারের শিকার হয়েছেন ২০ জন, এর মধ্যে ১৩ জন শিশু। এসিড দগ্ধ হয়েছে ১৭ জন, এর মধ্যে ১ জন কন্যা শিশু। তার মধ্যে এসিড দগ্ধের কারণে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। ২৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন, এরমধ্যে ২ জন কন্যা শিশু। তার মধ্যে ১ জন কন্যাসহ ১০ জনের অগ্নিদগ্ধের কারণে মৃত্যু হয়েছে।
যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬৮ জন। এর মধ্যে ৩৩ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে মোট ১৪৫ জন, এর মধ্যে ২৫ জন কন্যা শিশু।
পারিবারিক সহিংসতায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৫ জন কন্যা শিশু। ২৪ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ৯ জন কন্যাসহ ১৪ জন গৃহকর্মীর হত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং ১ জন গৃহকর্মীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
৫৭ জন কন্যাসহ ৬৮ জন অপহরণের ঘটনার শিকার হয়েছেন। এছাড়াও ৩৭ জন কন্যাসহ ৩৯ জন অপহরণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন। পুলিশি নির্যাতনের হয়েছেন ১ জন কন্যাসহ ২ জন। ১৯ জন কন্যাসহ ২৯ জন সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন।
বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে ২০টি। বাল্যবিবাহের চেষ্টা করা হয়েছে ৪৮টি। এছাড়া ৪৬ জন কন্যাসহ ১৪৫ জন বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এইটা হচ্ছে সেইসব খবর থেকে নেওয়া তথ্য, যেগুলো দেশের বড় চার পাঁচটা কাগজে ছাপা হয়েছে।
যৌন নিপীড়ন কী?
যৌন হয়রানি এবং শরীরের অবাঞ্ছিত স্থানে অনধিকার চর্চা, সেইসঙ্গে অননুমোদিত যৌন কর্মকাণ্ডের চেষ্টা করাকেই বলা হয় যৌন নিপীড়ন। সহজ কথায় কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন কার্যকলাপ বা যৌন জিঘাংসা বাস্তবায়নের অভিপ্রায়কেই বলা হয় যৌন নিপীড়ন।
আক্রান্ত হয় কারা?
নারী বা পুরুষ যেকেউ যৌন নিপীড়নের শিকার হতে পারেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারী, কন্যা শিশু এবং ছেলে শিশুরাই অধিকমাত্রায় আক্রান্ত হয়। আবার অনেক সময় বৃদ্ধরাও শিকার হতে পারেন।
কীভাবে আক্রান্ত হয়?
কন্যা এবং ছেলে শিশুরা খুব সহজেই যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। ছোট হওয়ার কারণে তারা সহজে যৌন উৎপীড়ককে বাঁধা দিতে পারে না। তাই ছোট ছোট শিশুরা তাদের আশেপাশের আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিতজনদের দ্বারা ব্যাপকভাবে নিগৃহীত হয়। আমাদের পরিবারে এমন কিছু সদস্য থাকে, যাদের কখনোই আমাদের সন্তানদের জন্য ক্ষতিকর মনে করি না। কিন্তু এইসব আত্মীয়স্বজন দ্বারা শিশুরা বেশি নির্যাতিত হয়। অনেক সময় শিশুরা এদের বিরুদ্ধে কিছু বললেও অনভিজ্ঞতার কারণে আমরা তাদের কথা এড়িয়ে যাই।
আর ছেলে শিশুরা এভাবে আক্রান্ত হলেও আমাদের সমাজে ছেলে শিশুরা বেশিরভাগ আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিশুদের সঙ্গে নারীদেরও একটি বৃহৎ অংশ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। বিশেষ করে যেসব নারীর নিজস্ব প্রকৃত স্বাধীনতা নেই, যারা কোনো না কোনোভাবে অন্যের ইচ্ছার অধীনস্থ তারাই বেশি আক্রান্ত হয়। সেইসঙ্গে নারীদের কর্মস্থলেও দুর্বলতার সুযোগে একটি অংশ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।
শুধু তাই নয়, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায়ও উচ্চ শ্রেণীর নারীরাও যৌন হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কারণেও কিশোরী, নারী ও শিশুরাও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে যেকোনো দুর্বলতা নিয়ে নারীদের ব্ল্যাকমেইলের কারণেও যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফাঁদে ফেলে যৌন নিপীড়ন করা হয় নারীদের।
কাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়?
আমাদের পরিবারকে ঘিরে কিছু সদস্য থাকে, যারা বিকৃত চরিত্রের অধিকারী। তারা সুযোগের অপেক্ষায় থেকে ছোট ছোট শিশুদের টার্গেট করেন। তাদের বিকৃত রুচির অভিলাষ পূরণ করেন। এইসব আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিতজন শিশুদের প্রলোভন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক যৌন নিপীড়ন করেন। পরিবারে কিছু সদস্য থাকেন, যাদের সঙ্গেহাসি ঠাট্টার সম্পর্ক। এইসব ভগ্নিপতি (দুলাভাই) বা দাদা সম্পর্কীয় সদস্যরাও অনেকক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন করার সুযোগ নেন। যা আমরা হাসি-তামাশার ছলে এড়িয়ে যাই। সেইসঙ্গে আদর-স্নেহ দেবার ছলেও অনেক চাচা, জ্যাঠা, মামা, খালু, ফুফা ইত্যাদি থাকে। যারা আদর করার নামে কৌশলে শিশুদের নিজের যৌন লিপ্সা পূরণে ব্যবহার করেন।
ছেলে শিশুরা বেশিরভাগ শিক্ষক দ্বারা এবং আশেপাশের মধ্যবয়স্কদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। ছেলেরাও যে যৌন হয়রানির শিকার হয়, তা আমরা অনেকেই জানি না। দুর্বল নারীরা ঘরে এবং কর্মক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের দ্বারা আক্রান্ত হন। প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাটে চলাচলের সময় গণপরিবহনেও নারী ও শিশুরা যৌন নিপীড়নের শিকার হন। মেয়েরা স্কুল কলেজে আশেপাশের বখাটের দ্বারা নিগৃহীত হয়। সামাজিক মাধ্যমে কিছু কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তি দ্বারাও নারী ও শিশুরা ভার্চুয়াল যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। সেইসঙ্গে মিডিয়াতে কাজ করতে আসা উঠতি মডেল বা তারকারাও তাদেরই পেশাজীবীদের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।
নিপীড়ন থেকে বাঁচার উপায়: যৌন নিপীড়ন থেকে শিশু ও নারীদের বাঁচাতে হলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
সচেতনতা:শিশুদের যৌন নিপীড়ন থেকে বাঁচাতে হলে প্রথমেই যেটা জরুরি, সেটা হচ্ছে সচেতনতা। প্রতিটি পরিবারকে শিশুদের যৌন বিষয়ক নিরাপত্তার শিক্ষা দিতে হবে। যাতে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায় হলে তা পরিবারকে জানাতে পারে। এই বিষয়ে জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকেই বুঝতেই পারে না তাদের যৌন নিপীড়ন করা হচ্ছে। সুতরাং পরিবারের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে শিশুদের যৌন বিষয়ে সচেতন করা।
শিশুর আচরণ লক্ষ করা: আমাদের অভিভাবকদের যৌন বিষয়ক বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে শিশু এবং নারীরা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। তাই অভিভাবকদের উচিত এই বিষয়ে ব্যাপকভাবে চিন্তা করা। পরিবারের শিশুদের আচার আচরণের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা লক্ষ রাখা। পরিবারের আশেপাশের সদস্যরা কে-কেমন রুচির অধিকারী তা জানার চেষ্টা করা। শিশুদের কারো প্রতি কোনো অভিযোগ থাকলে তা আগ্রহ নিয়ে শোনা এবং পদক্ষেপ নেওয়া।
শিশুদের একা ছেড়ে না দেওয়া: কোনো শিশুকেই কারো সঙ্গে একাকি যেতে না দেওয়া বা ঘরে কখনোই শিশুদের একা না রাখা। শিশুরা কারো সঙ্গে একাকি সময় দিচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখা। স্কুল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার প্রতি শিশুদের অনীহা সৃষ্টি হলে তার কারণ অনুসন্ধান করা। সেইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুরা কোনো প্রকার নির্যাতনের শিকার বা তাদের কোনো প্রকার বুলিং করা হচ্ছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা।
স্বাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসী হওয়া: নারীদের স্বাবলম্বী এবং আত্মবিশ্বাসী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সহায়সম্বলহীন নারীদেরই বেশিরভাগ সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। বিশেষ করে দুর্বল নারীদের আশেপাশের যৌন পিপাসু মানুষেরা অতিমাত্রায় নির্যাতন করার সুযোগ নেয়। সেইসঙ্গে সংসারে দুর্বল হওয়ার কারণে অনেক স্ত্রীকেও নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
নারীরা যদি আত্মবিশ্বাসী হয়, তাহলে তারা যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারবে। যারা যৌন নির্যাতন করে, তাদের চোখে চোখ রেখে এর প্রতিবাদ করতে জানতে হবে। এই আত্মবিশ্বাসটা শিশুরা পরিবার থেকেই অর্জন করে। তাই পরিবারের উচিত শিশুদের আত্মবিশ্বাসী এবং সাহসী হতে সাহায্য করা। যাতে তাদের সঙ্গে কেউ অন্যায় কিছু করতে চাইলে তারা যেন এর প্রতিবাদ করতে এবং সবাইকে জানাতে পারে।
বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের সঙ্গে অভিভাবকদের সুন্দর, সাবলীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করা উচিত। যাতে তারা স্কুল কলেজে তার সঙ্গে কে কী করছে তা সহজে জানা যায়। পারিবারিক সম্পর্কগুলো স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে অসংখ্য কিশোর, কিশোরী এবং মেয়েরা তাদের সঙ্গে হওয়া নিপীড়নের কথা পরিবারকে জানাতে পারে না। ফলে এইসব কোমলমতি শিশু, কিশোর, কিশোরীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে এক ধরনের মানসিক অবসাদগ্রস্ততে ভোগে। যা পরবর্তী সময়ে মানসিক রোগে এবং আত্মহত্যায় পরিণত
হয়।
ভার্চুয়াল জগৎ থেকে দূরে রাখা: কিশোর-কিশোরীদের কখনোই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়। কমপক্ষে ১৮ বছর বয়স না হওয়ার আগ পর্যন্ত ভার্চুয়াল জগৎ থেকে কিশোর কিশোরীদের দূরে রাখতে পারলে যৌন নিপীড়ন থেকে অনেকাংশে দূরে রাখা যাবে। যেসব ছেলেরা যৌন নিপীড়ন করে, তারা অবাধ ইন্টারনেট থেকে যৌন আসক্তি অর্জন করে। পরবর্তী সময়ে তারাই যৌন নিপীড়ন শুরু করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মেয়েদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই ভার্চুয়াল জগতে ব্ল্যাকমেইল করেও যৌন নিপীড়ন করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতা সৃষ্টি করা: যৌন নিপীড়ন থেকে শিশুদের বাঁচাতে হলে স্কুল কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সেইসঙ্গে সামাজিক বেড়াজাল ছিন্ন করে সবাইকে খোলামেলাভাবে এইসব নিয়ে জানাতে হবে। যাতে শিশুরা নিজেদের সমস্যার কথা নিজেরাই বলতে পারে এবং কখনো নিপীড়িত হলে তার প্রতিবাদ
করতে পারে।
হেয় প্রতিপন্ন না করা: অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, যারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, তাদের পরবর্তী সময়ে সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। যা কখনোই উচিত নয়। যৌন নিপীড়নের শিকার কিছু কিছু সাহসী ছেলেমেয়ের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের পরিবার থেকে থামিয়ে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে তাদের সামাজিকভাবে কটুদৃষ্টিতে দেখা হয়। যা অন্যজনকে সাহসী হতে বাঁধা দেয়। তাই কারো সঙ্গে কোনো প্রকার যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে তা যেন আমরা নেতিবাচকভাবে না নেই। আমরা যেন যৌন নিপীড়িত ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি সহমর্মীতার হাত বাড়িয়ে দেই। যাতে সমাজে আর কেউ এইজাতীয় কুকর্ম করার সাহস না করে।
যৌন হয়রানি রোধে করণীয়
* রাস্তাঘাটে বা যানবাহনে হেনস্থা বা যৌন হয়রানির শিকার হলে তাৎক্ষণিক সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে যাতে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়।
* যদি কোন নির্জন স্থানে ঘটে তাহলে নারীকে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং কৌশলে নিজের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করতে হবে।
* যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে কন্যা সন্তানকে শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্ত করে গড়ে তোলার বিষয়ে পরিবারকে সচেতন হতে হবে।
পরিশেষে বলতে চাই , বিশ্ব যৌন নিপীড়নবিরোধী দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান যৌন নিপীড়ন সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। বস্তুত সচেতনতা বাড়াতেই প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয়। যৌন নিপীড়ন একটি গুরুতর বিষয়, যা অবশ্যই প্রকাশ্যে আনতে হবে। এ সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলতে হবে। কারণ, এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রায়ই কথা বলা হয় না এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এ দিবসটি উদ্যাপন নিশ্চিত করে যে বিষয়টিকে সামনে আনতে হবে তা হলো এর বিরুদ্ধে কথা বলা এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারকে উৎসাহিত করা। আর যৌন নিপীড়ন বলতে কি বোঝায় তা স্পষ্ট নয়, সবার ধারণা শুধু ধর্ষণকে যৌন নিপীড়ন বলে। ২০০৩ সালের আইনে অসৎ উদ্দেশ্যে নারীর যেকোনো অঙ্গ স্পর্শ করাই যৌন নিপীড়ন। এমনকি অশালীন মন্তব্য, নারীর পোশাক ধরে ঢান দেওয়া, ধাক্কা দেয়াও যৌন নিপীড়ন এর মধ্যে পড়ে। এই অপরাধে নিপীড়ককে চিহ্নিত করে পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বয়কট এবং আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হব।
ধর্ষণের শিকার নারীকে দায়ী না করে তার প্রতি সংবেদনশীল হয়ে তার পাশে দাঁড়াতে হবে।ভুক্তভোগীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সরকারি এবং ব্যক্তিগত ভাবে যৌন হয়রানি বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা ও সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। যৌন হয়রানি নির্মূলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তাই সমাজ থেকে যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা নির্মূল করতে হলে অবশ্যই সবচেয়ে বেশি জরুরি সচেতনতা। আমরা পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যত বেশি সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারবো, তত বেশি যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা থেকে মুক্তি পাবো। সঠিক ধর্মীয় অনুশাসনও যৌন নিপীড়ন থেকে সমাজকে পবিত্র রাখে। আসুন প্রত্যেকে নিজ নিজ অঙ্গন থেকে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।
লেখক: সংগঠক, কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
পাঠকের মতামত:
- ভেড়ামারায় পাঁচটি ইটভাটা বন্ধ করলো উপজেলা প্রশাসন
- কুষ্টিয়ায় ট্রেন থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকার এলএসডি ও জুয়েলারি উদ্ধার
- বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সকল বেতার কেন্দ্র থেকে রিলে করার দাবি
- দিনাজপুরে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
- ‘সরকারি গাড়ি উল্টোপথে গেলেই মামলা’
- ধামরাইয়ে শতাধিক ইটভাটা মালিক-শ্রমিকদের মানববন্ধন
- মাদারীপুরে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
- কুষ্টিয়া সীমান্তে আটক ২ ভারতীয় নাগরিককে ফেরত দিল বিজিবি
- পিঠ বাঁচাতে মানববন্ধন করেছে হত্যা, অস্ত্র ও ডাকাতি মামলার পলাতক আসামিরা
- বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণ না করেই ফিরে গেলেন এসিল্যান্ড
- যুুবদল নেতার বিরুদ্ধে টিসিবি পণ্য ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
- বাজার মনিটরিং ও ফুটপাত নিয়ন্ত্রণে ডিএমপির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযান
- নগরকান্দায় প্রতি ডজন ডিমের দাম ১১৫ টাকা
- মিয়ানমারে ক্ষুদ্র মডিউলার রিয়্যাক্টর স্থাপনে রসাটমের সঙ্গে চুক্তি
- ঈশ্বরদীতে বসতবাড়িতে অগ্নিকাণ্ড, আগুনে পুড়ে গৃহবধূর মৃত্যু
- স্ত্রীকে আনতে গিয়ে পিটুনির শিকার স্বামী, খেলনা পিস্তলসহ উদ্ধার করলো পুলিশ
- মানিক লাল ঘোষ’র কবিতা
- দেশে কন্ট্যাক্টলেস পেমেন্ট বেড়েছে দ্বিগুণ
- বাগেরহাটে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি গ্রেফতার
- ‘শেখ হাসিনার বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক নেই’
- ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে মিলিয়নিয়ার হলেন ফরিদপুরের কলেজ শিক্ষার্থী রাসেল ফকির
- নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আনিসুল-শাজাহানসহ ১৬ জন
- রমজানে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখার নতুন নির্দেশনা
- সালথায় আলু চাষ করে লাভবান কলেজ শিক্ষার্থী
- ফল চুরির অপবাদে মাদরাসা ছাত্রকে নির্যাতন
- ‘এত বড় দায়িত্বের আমানতকে যেন খেয়ানত না করি’
- জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা
- মহা শিবরাত্রির ইতিহাস ও জগতের মঙ্গল কামনা
- ‘ছ্যাঁকা কেবল তো শুরু, সারাজীবনই দেব’
- ভারতের ৪০ বছরের রেকর্ড ভাঙলো যুক্তরাষ্ট্র
- ঝালকাঠিতে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালিত
- ‘কমিউনিস্ট পার্টিকে বেআইনী রাখা চলবে না’
- ড. ইউনূস কি জনগণকে পাশে পাবেন না?
- বাংলাদেশের সামনে এখন অনেক কাজ
- খালের টেকসই উন্নয়নে সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক
- নির্ভার, তবুও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ইকবাল হোসেন অপু
- তুমি যে সেনা কর্মকর্তার ভাঙা ঘর জোড়া লাগিয়েছিলে, সেই তোমাকে সপরিবারে খুনের উস্কানিদাতা! কী কঠিন হৃদয় তার! এই জন্যই বুঝি তিনি সানগ্লাসে চোখ ঢেকে রাখতেন; চোখ দেখলেও নাকি খুনী চেনা যায়!
- ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনে রসাটমের নতুন প্রযুক্তি
- পর্দা নামলো বইমেলার
- রমজানে অফিসের নতুন সময়সূচি
- আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের মঞ্চে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা
- স্যামসাং নিয়ে এলো দেশের প্রথম ওএলইডি টিভি এস৯৫ডি
- গুণে ভরা ডাল, কমাবে ওজনও
- নিরাপত্তার স্বার্থে সচিবালয়ের সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ
- ভক্ত সমাগমে আনন্দ মুখর মজলিশপুর সেবাশ্রম